'উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদ' আগরতলা রাজবাড়ি ত্রিপুরার রাজাদের আধুনিক চিন্তাধারার এক অপরূপ কৃতিত্ব। আগরতলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে 'উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদের' অবস্থান। মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য বাহাদুর ১৯০১সালে 'উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদ' নির্মাণ করেন। মহারাজা ১৮৯৯ সালে 'উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদের' নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন এবং তিন বছর সময় লেগেছিল এই প্রাসাদ নির্মাণ করতে। তখনকার সময়ে ১০লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল এই প্রাসাদ নির্মাণ করতে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর রাজপ্রাসাদ 'উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদ' ২০একর জমির উপর তৈরি দ্বিতল ভবন। আগরতলা রাজবাড়ির নাম 'উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদ' রেখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।প্রাসাদে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। মুঘল আমলের নকশায় তৈরি এই প্রাসাদের মাঝের গম্বুজটি ৮৬ ফুট উঁচু। উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদের দু'পাশে দুটি বড় দীঘি। দীঘির দু'পাশে বিভিন্ন সারি সারি গাছগাছালি প্রাসাদের সৌন্দর্য আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। প্রাসাদের প্রবেশ পথের মাঝখানে ফোয়ারা এবং ফুলের বাগান, পাতাবাহার গাছের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য মনমুগ্ধকর।
উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ জাদুঘর গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন স্থানে পাওয়া অনেক প্রস্তর মূর্তি, গাছের জীবাশ্ম, ত্রিপুরার প্রাকৃতিক গ্যাসের মানচিত্র, প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে পাওয়া সোনা, রূপা, তামার মুদ্রা, মৃৎশিল্পের পাশাপাশি পোড়ামাটির ও ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি। আদিম যুগের বেশ কিছু শিলালিপিও সাজানো রয়েছে জাদুঘরে। তৈলচিত্র, বস্ত্র আর অলঙ্কার ও রয়েছে। সংস্কৃত মহাকাব্য, ত্রিপুরার রাজবংশের রাজাদের চিত্র ও রাজাদের ইতিহাস। উপজাতি সংস্কৃতি, পেইন্টিং, মহেঞ্জোদারো হরপ্পা সভ্যতার প্রস্তর মুদ্রা। রয়েছে ঊনকোটি, ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির, ভুবনেশ্বরী মন্দির, ছবিমুড়াসহ ত্রিপুরার ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থানের প্রতিচ্ছবি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাজানো 'রবীন্দ্র গ্যালারি'। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারি, একাত্তরের শরণার্থীদের বিভিন্ন ছবি। এছাড়া ১৯৭১সালে বাংলাদেশ থেকে আসা তরুণ মুক্তিযুদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন অপারেশনের ছবি, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা দলিলপত্র।
এককথায় "উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ" ত্রিপুরার জাতি উপজাতির ঐতিহ্য ও সংহতির মেলবন্ধন বহন করে চলেছে এবং চলবে আরও সুদীর্ঘ কাল ধরে।
দীপেন নাথশর্ম্মা
খোয়াই, ত্রিপুরা
আরশিকথা হাইলাইটস
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২১