আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    ডক্টর সেলিম জাহান, মানবোন্নয়নের হৃদয় এবং হৃদয়ের মানবিকতাঃসাইফুর রহমান কায়েস

    আরশি কথা

    ডক্টর সেলিম জাহান এক জীবনে দেশের জন্য যা করেছেন তা কজনেরই বা করার ভাগ্যে জুটে । মানবোন্নয়নের হৃদয় হতে পারা কম নয় বরং অনেক বড় অর্জন । অবসর জীবনে গদ্য রচনা করে তো হৈচৈ ফেলে দিলেন । কি করছেন না বলে বরং আমরা বলতে পারি কি করেন নি । এক পরিপূর্ণ জীবন তার। গদ্যসাহিত্য নিয়ে তার নানান বীক্ষণ ও দৃক্ষণ আমাদের চোখের ফাক গলে যেতে পারে নি । আমাদের দৃক আটকে আছে তার সৃষ্টিকুশলী ও সৃজনপ্রকৌশলের মধ্যে । যেখানে শুধু ত নয় , আমাদেরও মুগ্ধতা কাজ এবং বিরাজ করে । লেখার শক্তি আপনাকে সংযুক্ত করতে পেরেছে প্রজন্মান্তর । আমরা ধরে নিয়েছি তিনি এতোদিন যা কিছু করেছেন সেটি আজকের দিনের জন্য প্রস্তুতিপর্ব ছিলো । আর এখন যেটি করছেন সেটিই প্রকৃত কাজ । তার লেখার ভেতরে, বলার ভেতরে এক ,অনন্য জীবনবোধ নিহিত আছে । বাকশৈলী ,বাকশক্তির অভিনবত্ব আছে । নিজেকে খুজে পাবার আনন্দ আছে । দেকার্তের মতো অণ্বেষার তাড়না আছে । আত্মপীড়ন আছেন তবে উৎপীড়ন নেই । প্রচলিত অর্থে যে সুখ আমরা যাপন করি আপনি সে পথে নেই । তার সুখ যে যাপন নয় , উদযাপনেরও বিষয়আশয় সেটি তার চিন্তার বৈচিত্র্যের মধ্যেই আমরা দেখতে পাই । সৃষ্টিসুখ তাকে তন্ময়াচ্ছন্ন করে রাখে । যেখানে যুক্তিবাদ ও যুক্তিবাদীতার অবাধলভ্য বিচরণ রয়েছে । ভাবালুতা থাকলেও তাতে পরিমিতিবোধ রয়েছে এবং শৃঙ্খলিত । তবে নিয়মের ফেরে তা বন্দি নয় । খোলা আকাশ দেখার হাতছানি আছে । কাজের আখ্যায়ক একজন পরিপূর্ণ মানুষকে দেখি । একজন মানবিক মানুষকে দেখি । একজন বিশ্বচারণকে দেখি যিনি তার অর্জিত অভিজ্ঞতাবাদ নানান মানুষের , নানান মেজাজ ,রুচি ও রুচিবৈপরীত্বকে তুলে আনেন তার গদ্যে । তার গদ্যের বুনন কৌশলের ভেতরে থাকে কথার স্রোতস্বিনী । যুক্তি ,পাল্টাযুক্তিতে পাঠককে আরো অনুসন্ধিৎসু হতে উদ্দীপিত করেন । ফলে পাঠককে ডুবে যেতেই হয় । পাঠতৃষ্ণায় তাড়িত হতেই হয় । তার জীবনাভিজ্ঞানে আমরা বৈকুণ্ঠধাম পরিভ্রমণ করতে থাকি । সিদ্ধার্থ কিংবা ইব্রাহিম বিন আদহাম হবার বাসনা লালন করতে উদ্বুদ্ধ হই আমরা তার সাদামাটা জীবনযাপনকে দেখে । চিন্তার দিক থেকে তিনি আসমুদ্রহিমাচল হয়ে ধরা দেন । অযাচিতভাবে কোনো জাহিরি বাতিকগ্রস্ততা তাকে তাড়িত করে না । বরঞ্চ অনেকটাই শমিত , নমিত । সুযোগকে সম্ভাবনায় রূপান্তরযোগ্য করতে প্রণোদিত হই তাকে দেখে । বিনমিত স্যার আরেকবার এবং পুনর্বার । একজন সেলিম জাহানের যথার্থ মূল্যায়ন এদেশে হয় নি । আমরা জানি না আর কতোটুকু উচ্চতাভেদ করলে পরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বোধোদয় হবে । স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কি সে আশার উদ্রেক করতে পেরেছে , জানি না ? তবে এই জাতি পেয়েছে বিশটি লাশ । আর বঞ্চনা । কতোজনকে এই রাষ্ট্র নানান পদের পুরষ্কার দিয়ে ভূষিত করলো । কিন্তু বিরলপ্রজ এই মানুষটিকে কি রাষ্ট্র উপযুক্ত সম্মান দিতে পেরেছে ? এই ব্যর্থতা আমরা কি দিয়ে ঢাকবো , বলুন ? তাই তো রাষ্ট্রযন্ত্রের আশেপাশে চাটুকার , অর্থগৃধ্নু , বিশ্বাসঘাতক , ঋণ খাতক ও খেলাপী , স্বার্থান্ধ মানুষের অবাধ বিচরণ এবং তারাই সম্মানিত । দুর্ভাগ্য আসলে আমাদেরই । হুমায়ুন আজাদের কথায় ফিরে যাচ্ছি , আমাদেরকে পঞ্চম মানের মানুষেরা শাসন করছে । অবশ্য আমরা আনন্দিত যে , তিনি একটা পদকের গণ্ডিতে আটকে রাখেন নি নিজেকে । তার বিচিত্র কর্মভার ও সম্ভার তাকে কর্মবীরের মর্যাদা দিয়েছে । ফলে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন একটি প্রতিষ্ঠান । প্রথাগত চিন্তা ও চেতনার বাইরে গিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব জগৎ । যে জগতের অধীশ্বর তিনি নিজেই । একটা রেজিমের সাথে সংশ্লিষ্টতা ছিলো দেশের উন্নয়ন চিন্তক হিসাবে । বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশক অধ্যাপনার মাধ্যমে নিজেকে পুড়িয়েছেন , জ্ঞানালঙ্কার ও আলোর মশাল উচিয়ে ধরেছেন । সাহিত্যের সাথে অর্থনীতির , অর্থনীতির সাথে সাহিত্যের , শিল্পের সমণ্বয় ঘটিয়েছেন । মানবোন্নয়ন নিয়ে তার দীর্ঘ পরিক্রমণকে বিশ্বায়নের দিকে নিয়ে গেছেন । ফলে নিজেকে শুধু ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলব্যাপী সীমিত না রেখে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বময় । দেশের পতাকাকে নিয়ে গেছেন বিশ্বের দরবারে । একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রতিস্থাপনের জন্য , দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বলিত করতে তিনি আরেক চে গুয়েভারার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন । স্বাধীনতা পরবর্তী একটি দেশে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ তার হাতেই বিশ্বমাত্রিকতা পেয়েছে ও বহুমাত্রায়িত হয়েছে । তার অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি ।


    সাইফুর রহমান কায়েস

    বাংলাদেশ


    ৭ই এপ্রিল ২০২১
     

    3/related/default