বাংলাদেশে কি আসলেই ৮০ শতাংশ ভারতীয় বা ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে?
আরশি কথাজুন ০৫, ২০২১
0
প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর, আরশিকথাঃ
বাংলাদেশের এক গবেষণায় জানা গেছে, দেশের ৮০ শতাংশ করোনা আক্রান্তের শরীরেই ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের গবেষা সংস্থা আইইডিসিআর এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইদেশি এই সমীক্ষা করেছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ‘ডেল্টা’ ধরনটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটেছে।
ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির শরীরে করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা গেছে বলে গত ৮ মে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়। এরপর গত ১৬ মে থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৫০টি নমুনার জেনোম সিকোয়েন্স করেছে আইইডিসিআর এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইদেশি।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব নমুনার মধ্যে ৪০টি ছিল ভারতে পাওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, যা মোট নমুনার ৮০ শতাংশ।
এসব নমুনার মধ্যে চারটি সংগ্রহ করা হয়েছিল ঢাকায়। জেনোম সিকোয়েন্সে তার মধ্যে দুটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় আসা ৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ওই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে। এখনও পর্যন্ত যাদের মধ্যে শরীরে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে, তাদের ৩৫ শতাংশেরই বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণের ইতিহাস নেই।
তাই বলা যায়, বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে। আইইডিসিআর এমনটাই মনে করছে।
রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত কিছুদিন ধরেই উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবাইকে অনুরোধ করেছে আইইডিসিআর।
কিন্তু এই গবেষনা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত বা নির্ভরযোগ্য। আসলেই কি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে? এ প্রশ্ন রয়েই গেছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) চিকিৎসক তাসনিম জারা একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। সেটা তিনি বলেছেন, অনেকগুলো সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অর্থাৎ যে ভ্যারিয়েন্টটা প্রথমে ভারতে শনাক্ত হয়েছে। এই খবরের অর্থটা কী? আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কি এটার কোনো প্রভাব ফেলবে? নতুন কোনো শঙ্কার কারণ? কোনো করণীয় আছে কি? এসব বিষয়ে আজ পরিষ্কার করে বলবো।
প্রথমে আসি, রিপোর্টে যে এসেছে করোনা সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, এর অর্থ কি বাংলাদেশের সর্বত্র এই ভ্যারিন্টটি ছড়িয়ে পড়েছে? যে গবেষণা থেকে এই রিপোর্টগুলো করা হয়েছে, সেই গবেষণা থেকে নির্ভরযোগ্যভাবে বলা যাবে না যে এই ভ্যারিয়েন্ট সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
কারণ গবেষণাটি ছিল মাত্র ৫০টি করোনা শ্যাম্পল নিয়ে। এবং ৫০টি করোনা শ্যাম্পল বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সমান সংখ্যক শ্যাম্পল নিয়ে করা হয়নি। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১৬টা শ্যাম্পল নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৫টি ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ঢাকা নেওয়া হয়েছে ৪টি শ্যাম্পল, যার মধ্যে দুইটা ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
অর্থাৎ এই অল্প সংখ্যক শ্যাম্পল নিয়ে নির্ভরযোগ্যভাবে বলা যাবে না যে চাপাইনবাবগঞ্জ ও ঢাকার সর্বত্র এই ভ্যারিয়েন্টটাই ছড়িয়ে পড়েছে। সেটা হয়ে থাকতে পারে, তবে এই গবেষণা থেকে নির্ভরযোগ্যভাবে বলা যাবে না। এই গবেষণা থেকে একটা জিনিস যদি আমরা নিশ্চিত করে জানতে পারি, সেটা হলো-ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শুধুমাত্র একটা অঞ্চলে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উপস্থিত রয়েছে। বুঝলাম, বিভিন্ন অঞ্চলে এটার উপস্থিতি রয়েছে। তাহলে এটা কি আমাদের জন্য শঙ্কার কারণ?
আমরা সাধারণত একটা ভ্যারেয়েন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ি তিনটা কারণে:
প্রথমটা হলো-ভ্যারিয়েন্টা খুব দ্রুত ছড়ায় কিনা, অল্প সময়ের মধ্যে অনেক মানুষকে সংক্রমিত করে কিনা।
দ্বিতীয়ত, এই ভ্যারিয়েন্ট মানুষকে বেশি গুরুতর অসুস্থ করে তোলে কিনা। যারা আক্রান্ত হন, তাদের মধ্যে বেশি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে কিনা। তাদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি থাকে কিনা।
তৃতীয়ত, এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে চিকিৎসা বা টিকা অকার্যকর হয়ে পড়ে কিনা।
এখন আসি এই ভ্যারিয়েন্টের বিষয়গুলো কেমন:
দ্রুত ছড়ায় কিনা:
আমরা জানি এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ায়। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন রকম এস্টিমেট আসে। কোথাও আছে ৫০ শতাংশ, কোথাও ৬০ শতাংশ। এটা আরও যত সময় যাবে, তত নিশ্চিত করে জানতে পারবো। তবে, নিশ্চিত করে এখন বলা যাবে না, যে কত বেশি ছড়ায়। তবে আমরা জানি এটা অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি ছড়ায়।
গুরুতরভাবে অসুস্থ করে কিনা:
আমাদের এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে যে বেশি গুরুতরভাবে অসুস্থ করে কিনা, তবে কিছু আলামত আছে, যেটায় এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে মানুষ একটু বেশি অসুস্থ হয়।
টিকা কার্যকর কিনা:
এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা কার্যকর। তবে, সেটা দুই ডোজ টিকা গ্রহণের পর।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখন পর্যন্ত যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট আমরা দেখেছি। সবগুলোর জন্য স্বাস্থ্যবিধি একই। সেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।