জীবন যেন একটা কুসুমিত ফুল,
কুঁড়ি থেকে পূর্ণাঙ্গ রূপের দলিল।
সতেজ পাপড়ির সুবাসে লহড়িত জীবন --- সুখের ইতিউতি দরজায় নিয়ম করে ভালোলাগার তকমার প্রহর । তেমনি অস্ফুট আধপচা পাপড়ির মতো জীবনে না থাকে সুবাস, না থাকে সৌন্দর্যের তকমা। জীবনে নেমে আসে হতাশা, আর হতাশা থেকে খসে পড়া পাপড়ির মতোই জীবন হয়ে উঠে বিষাদময়। বিষাদময়তা থেকে জীবন হয়ে উঠে ছন্নছাড়া, পরিণতিতে জীবন অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে -- এইটাই যেন বাস্তব চিত্র।
বর্তমান সময়ে মানবজাতি মাত্রেই পেণ্ডামিক রোগের শিকার। যদিও প্রতিটি দেশ সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তোরণের। নিদারুণ এই অবস্থার মোকাবেলায় প্রতিটি দেশ যারপরনাই উদ্যোগে তাজা প্রাণ রক্ষার কাজে ব্রতী।
এই অবস্থার সাথে সাথে অর্থনৈতিক অবনতি ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলেছে। পর্যটক নেই মানেই হোটেল, রেস্তোরাঁ, লজ বন্ধ। কলকারখানাগুলো উৎপাদন বিমুখ, তাই বন্ধ। ফলে ভাড়াটিয়াও নেই। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন পাঠন বন্ধ। আর সব বন্ধের মানেই হলো কর্মী ছাঁটাই। স্থানীয়দের পেশাদারী রোজগার বন্ধ। চারিদিকে শুধু নেই নেই আর নেইয়ের পালা।
এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষানবিশ -- বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনের পঠন পাঠনের উপর নির্ভরশীল ছাত্র-ছাত্রীরা। যদিও বেশিরভাগই অনলাইন পড়াশোনার দৌলতে নেট দুনিয়ায় অন্তর্ভুক্ত। এমনকি গৃহবন্দি প্রতিটি মানবকুল এই নেট দুনিয়ায় আবদ্ধ। এই নেট দুনিয়ার মাধ্যমে আমরা সকলেই বিস্তীর্ণ জগতের সঙ্গে যুক্ত এবং এই প্রযুক্তিতে অনেকেই সুফলকামী।
ছাত্র-ছাত্রীদের তাই ভাবতে হবে কি করে এর সুফল ওরা ওদের জীবনের ক্যারিয়ার টিপস করবে। ক্যারিয়ার চয়েস একটা মূল্যবান বিষয়। ক্যারিয়ার চয়েস করতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আবেগপ্রবণ না হয়ে বরং সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে। পরীক্ষায় কৃতকার্য, ভালো নম্বর নিয়ে পাশ-- এগুলো হলো একজন ছাত্র বা ছাত্রীর মেধার পরিচায়ক। প্রতিভা হলো মেধার নিরিখে সৃজনশীল নিষ্ঠা ও সাফল্য। তাই মেধার পাশাপাশি প্রতিভা বিকাশের দিকেও মনোনিবেশ করা একান্ত প্রয়োজন। তাই ক্যারিয়ারের নেপথ্যে যে পড়াশোনা জড়িত-- তার বিষয়বস্তু একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রীকেই করতে হবে। তাই ক্যারিয়ারের প্রাসঙ্গিক হিসেবে পড়াশোনার বিষয় নির্বাচনও অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমান এই কোভিড অব্দে ক্যারিয়ার হতে হবে এমন, যাতে করে এর সুফল দীর্ঘমেয়াদি হয়। তাই প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে ভাবতে হবে "আমি কি কি করতে পারি, আর কোনটার সুফল আমি কতোকাল ভোগ করতে পারবো, কোনটায় আমি সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারবো"। দ্বিতীয়ত বিশ্বনীতি, অর্থনীতি বিভিন্ন বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রেখেই সঠিক বিষয়, সঠিক কর্মপদ্ধতি বেছে নিতে হবে। হয়তো দেখা যাবে বিগত দিনে যে সব বিষয়ের চাহিদা বাজারে রমরমা ছিল, কালের নিয়মে সেগুলোর চাহিদা ক্রমে ক্রমে হ্রাস পেতে চলেছে।সময় বিশেষে পছন্দ-অপছন্দ পরিবর্তিত। তাই বিষয় নির্বাচন করতে গিয়ে ভবিষ্যৎ সময়ে নির্বাচিত বিষয়ের চাহিদা কতটুকু থাকবে -- সেদিকে অবশ্যই নজর রাখতেই হবে। আর তাহলেই জীবন হয়ে উঠবে বাস্তবমুখী। আজ যা উৎপাদনমুখী আগামীকাল তা নাও থাকতে পারে। তাই আগামী বিশ্বের চাহিদার নিরিখেই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা নির্ভর করছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে, তেমনটি নয়-- আগামী দিনগুলোতে শিক্ষাগত যোগ্যতার চাহিদাই বড় কথা। সরকারি চাকরি দিন দিন সীমিত হয়ে আসছে, তাই আগামী প্রজন্মকে স্বরোজগার কর্ম নিয়েই ভাবতে হবে। হয়তো সেই কারণেই এ বৎসর বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়ার পাশাপাশি বাণিজ্য বিভাগের চাহিদা লক্ষ্যনীয়।
বাণিজ্য করতে গিয়ে প্রতিদিনের বাজারে নিজের ব্যবসার চাহিদা কতোটা বেশি, কতোটা কম-- তার দিকেও নজর রাখতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ একসময় কাঠের চেয়ার, টেবিল, বিভিন্ন ফার্ণিচার - এর রমরমা চাহিদা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে প্লাস্টিক, রাবারজাত পণ্যাদি সেই বাজারে দখল নিয়েছে। যেসব ব্যবসায়ী বাজারের চাহিদা খেয়াল না রেখে কাঠের কাঁচামাল স্টোর করেছিল-- তারা সেই কাঁচামাল দ্রুতহারে আগের মতো বিক্রি করতে পারেনি বলে-- সেসব ব্যবসায়ীদের অনেকেরই মাথায় বজ্রাঘাতের মতো মনে হয়েছিল এবং অচিরেই তাদের ব্যবসার পাটতারি গুটিয়ে নিতে হলো। তাই ব্যবসা মানেই প্রতিনিয়ত বিশ্ব বাজারে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা।
বর্তমান যুগে মেধা ও প্রতিভা - র পাশাপাশি কৌশল বিদ্যাও সাফল্যের এক অপরিহার্য অঙ্গ। কিছুদিন আগে একটা ছবি দেখে ছিলাম, যা আমাকে প্রভাবিত করে। বিষয়বস্তু ছিল যোগ্যতার পরীক্ষা -- একটি বড় গাছের নিচে বনের পশুদের যোগ্যতার নির্ণায়ক পরীক্ষা। বিচারক সকল পশুদের উদ্দেশ্য করে বললেন "এই গাছের সর্বোচ্চ শীর্ষে দ্রুততার সাথে যে উঠতে পারবে-- তার ভরণ-পোষণ, নিত্য আহার সামগ্রী তার চাহিদা মতো জোগান দেওয়া হবে"। বিষয়বস্তু অবগত হওয়া মাত্রই হাতি, ঘোড়া, বাঘ, সিংহ, প্রজাপতি, ফড়িং, কাকাতোয়া, শকুন, বানর এবং উপস্থিত অন্যান্যরা সকলেই যার যার মতো করে ভাবতে লাগলো। ইত্যপরিসরে বানর এক লাফে হাতির পিঠে চড়ে পরপর লাফ দিয়ে সবার আগে গাছের আগায় পৌঁছে গেল। ফলে বিজয়ীর তকমা বানর পেল -- এইটাই হচ্ছে কৌশল। তাই ছাত্র- ছাত্রী বন্ধুরা সঠিক ভাবনায় এবার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এগিয়ে যাও -- যাতে নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই উজ্জ্বল করে গড়তে পারো। প্রত্যাশিত সাফল্য কামনায় সকলের প্রতি রইলো আমার শুভেচ্ছা।
মৃণাল কান্তি পন্ডিত, ত্রিপুরা
বিভাগীয় সম্পাদক
ক্যারিয়ার-মোটিভেশন
আরশিকথা গ্লোবাল ফোরাম
১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২১