Type Here to Get Search Results !

৩১ অক্টোবর লৌহমানব সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্ম জয়ন্তীঃরাষ্ট্রীয় একতা দিবস

সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সত্যপথে অবিচল, আপোষহীন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী, সুদক্ষ প্রশাসক, নির্ভীক চিত্ত, লৌহ কঠিন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য, আপন সিদ্ধান্তে অনড়, স্বদেশ প্রেমে সমুজ্জ্বল এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। কৃষক আন্দোলনে তিনি ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে কৃষকদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া জমি ফিরিয়ে দিতে ইংরেজ শক্তিকে বাধ্য করেছিলেন বলে কৃষক সমাজ তাঁকে  'সর্দার' উপাধিতে ভূষিত করে।

সত্যাশ্রয়ী এই জাতীয় নেতা দেশের স্বার্থে লৌহসদৃশ দৃঢ়তার জন্য 'লৌহমানব' আখ্যায় ভূষিত হন।১৯৪৭ সনে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে হিন্দু ও মুসলমানের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হলো ভারতবর্ষ। গান্ধীজী, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির ঘোর বিরোধী ছিলেন। তবুও দেশভাগ আটকানো গেল না। দাঙ্গা-হাঙ্গামা দেশভাগের সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করলো। এক্ষেত্রে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একরোখা মনোভাব পরিস্থিতিকে বিষিয়ে তুলেছিল। দেশভাগ হল। দেশভাগের আগে ভারতের ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন বললেন, -দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য ছাড়াও যারা পাকিস্তানে যোগ দিতে চায়, যোগ দিতে পারে। যেসব রাজ্য ভারত ইউনিয়নে থাকতে চায়, থাকতে পারে। যেসব রাজ্য স্বাধীনভাবে থাকার পক্ষপাতী, থাকতে পারে। সেইভাবে দেশীয় রাজ্যগুলি সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের যোগ দেয়। কিছু রাজ্য স্বাধীন থেকে যায়।
বল্লভ ভাই প্যাটেল এর কৃতিত্ব এই যে তিনি কূটনৈতিক প্রজ্ঞা, মানসিক দৃঢ়তা, দূরদর্শীতার দ্বারা প্রায় ৫২২টি দেশীয় রাজ্য কে ভারত ইউনিয়নে যোগ দেওয়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। এতে গড়ে উঠেছিল একটি সংহত ভারত। আঁকা হয়েছিল বিশাল দেশের বর্তমান মানচিত্রটি। প্যাটেল না থাকলে আজ আমরা ভারতের যে মানচিত্রটি দেখতে পাই সেটি হয়তো আকারে আরো ছোট দেখাতো। সমস্যা দেখা দিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর, জুনাগর, হায়দ্রাবাদ ও গোয়া নিয়ে। প্যাটেল রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও দৃঢ় পদক্ষেপের দ্বারা এইসব দেশীয় রাজ্যকেও ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। নির্ভীকচিত্তে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেন। তাই তাঁকে ভারতের সংহতি চেতনার প্রতিমূর্তিরূপে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাঁর জন্ম দিবসটি তাই 'জাতীয় ঐক্য দিবস' বা 'রাষ্ট্রীয় একতা দিবস' হিসেবে পালিত হয়। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। গুজরাট প্রদেশের নয়ডায় তাঁর জন্ম। পিতার নাম জাভের ভাই প্যাটেল। মায়ের নাম লাডভাই প্যাটেল। বল্লভ ভাই প্যাটেল এর পিতা ছিলেন ঝাঁসির সেনাবাহিনীর একজন লড়াকু সৈনিক। মা লাডভাই ছিলেন ধর্মপরায়ণা ও গৃহকর্মে নিপুনা।

সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল নিজের জন্মস্থানে একটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন গুজরাটি ভাষায়। পরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৯৭ সনে তিনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯১০ সনে আইন বিষয়ক ডিগ্রী অর্জনার্থে ইংল্যান্ডে গেলেন। আইন পাস করে ভারতে ফিরে আসেন এবং গোধরায় আইনবিদ হিসেবে কাজ শুরু করেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে উচ্চ পদে নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকুরী নিতে অস্বীকার করেন। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল ১৯১৭ সনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের গুজরাট প্রদেশ সচিব হয়ে রাজনীতির পাদপ্রদীপে আসেন। ১৯৩০ সালে গান্ধীজীর লবন আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৩১ সালে গান্ধী-আরউইন (তদনীন্তন ভাইসরয়) চুক্তি সূত্রে প্যাটেল মুক্তি পান। সে বছরই জাতীয় কংগ্রেসের করাচি অধিবেশনে তিনি সভাপতি পদে বৃত হন। ১৯৩৪ সনে আইনসভা নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও নির্বাচনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪২ সনে গান্ধীজী 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন' এর ডাক দেন। ব্রিটিশ শক্তিকে ভারত ছেড়ে যাওয়ার চরমপত্র দেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। প্যাটেল সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৪৫ সন পর্যন্ত তাঁকে আহমেদনগর দুর্গে বন্দী রাখা হয়। পরের বছর কারা মুক্তি ঘটে।

১৯৪৭ সনে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। তাঁকে ভারতের উপ প্রধানমন্ত্রী করা হয়। সেই সঙ্গে তিনি স্বরাষ্ট্র দপ্তরেরও দায়িত্ব পান। প্রায় ৫২২ টি দেশীয় রাজ্যের ভারতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। গান্ধীবাদী এই নেতা পুলিশ ও সামরিক বিভাগ পুনর্গঠনে লৌহ দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় দেন।

স্বাধীন ভারতে ঐক্য সংহতি রক্ষায় তিনি কৃত সংকল্প ছিলেন। অসুস্থ হয়ে ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাঁর জীবনাবসান ঘটে। ১৯৯১সনে ভারত সরকার তাঁকে 'ভারতরত্ন' উপাধিতে ভূষিত করে।২০১৮ সনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারত সরকার গুজরাটে তার জন্মস্থান নয়ডায় তার যে মুর্তি স্থাপন করেছে, সেটি বিশ্বের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য (মূর্তি)। ২০১৪ সন থেকেই তাঁর জন্মদিন ৩১ অক্টোবর 'রাষ্ট্রীয় একতা দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বলা বাহুল্য, তার স্মৃতিতে নিবেদিত মূর্তিটির নাম রাখা হয়েছে 'ঐক্যের মূর্তি'। দেশ জাতি এ বছরও ৩১ অক্টোবর গভীর শ্রদ্ধায়, কৃতজ্ঞতায় তার জন্মদিনটি রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসেবে পালন করবে। এই স্বদেশপ্রেমী জাতীয় নেতার অবদান দেশবাসী কখনোই ভুলবে না।


ড. আশিস কুমার বৈদ্য

উপদেষ্টা

আরশিকথা গ্লোবাল ফোরাম



আরশিকথা হাইলাইটস

৩১শে অক্টোবর ২০২১

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. প্রতিটি লেখাই অসাধারণ।
    প্রতিটি জীবনের আদর্শ ----
    আমদের প্রেরণা। মূল্যবোধের
    এক জ্বলন্ত উদাহরণ। সকলের
    প্রতি রইলো আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।

    উত্তরমুছুন