আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন সাড়ম্বরে বাংলাদেশের মহান বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে। বিজয়ের এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন দুই পর্বে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
১ম পর্বে সকাল ০৮:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরকে স্মরনীয় করার লক্ষ্যে আগরতলা সাইক্লোহলিক্স এবং সহকারী হাইকমিশনের যৌথ আয়োজনে ত্রিপুরার ৫০জন সাইক্লিস্টদের অংশগ্রহনে ৫০ কি.মি. দীর্ঘ সাইকেল র্যালির আয়োজন করা হয়।
এ দিন সকাল ০৯:০০ ঘটিকায় দূতালয় প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ০৯:১০ ঘটিকায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এরপর ঢাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পরিচালিত শপথ অনুষ্ঠানের আদলে শপথ বাক্য পাঠ করান অত্র মিশনের সহকারী হাইকমিশনার জনাব মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন।আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অত্র মিশনের প্রথম সচিব (স্থানীয়) ও দূতালয় প্রধান জনাব এস.এম.আসাদুজ্জামান। এছাড়া অত্র মিশনের প্রথম সচিব মোঃ রেজাউল হক চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় ভারত তথা ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেন। আলোচনায় প্রধান অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা বিধানসভার মাননীয় স্পীকার শ্রী রতন চক্রবর্তী, মুক্তিযুদ্ধের সন্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব শ্রী স্বপন ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষানুরাগী ও মুক্তিযুদ্ধের সন্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মিহির দেব এবং মুক্তিযুদ্ধের সন্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব শ্রী শ্যামল চৌধুরী।
সন্মানিত বক্তাগণ উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের তীর্থভূমি ছিল ত্রিপুরা। ১৯৭১ সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের যাত্রা থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, বিশাল শরনার্থীদের ব্যবস্থাপনা, যুদ্ধবিধস্ত দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানোসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন ত্রিপুরাবাসীর অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তাঁরা আরো উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘঠনা। বক্তাগণ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ও প্রশংসা করেন।সহকারী হাইকমিশনার জনাব মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন তাঁর সমাপনী বক্তব্যে মহান বিজয় দিবসে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক , বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বতভাবে সহযোগিতার জন্য ভারতের জনগণ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারত সরকার, মিত্র বাহিনী, সংস্কৃতি কর্মী, সংবাদকর্মী, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভারতের অংশীদারিত্বের উপর আলোকপাত করেন। ত্রিপুরাকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার হিসেবে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরাবাসী বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের জন্য যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিল তাও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ত্রিরিশ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এক অনন্য ঘটনা যা বিশ্বের প্রতিটি বাঙালীর গর্বের বিষয়।
সকাল ১১:১৫ ঘটিকায়, ত্রিপুরার স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিপুরার স্থানীয় শিল্পী এবং নৃত্যদল তাদের পেশাদারি পরিবেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে, যা অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক – শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
সহকারী হাইকমিশনার জনাব মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন আগত সকল অথিতিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন। মহান বিজয় দিবস পালন অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সিভিল সোসাইটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আগরতলা মিশনের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৃন্দসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ মাস্ক পরিধান করে যথাযথ সামাজিক দুরত্ব ব্জায় রেখে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অথিতিবৃন্দকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করা হয়।
আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সুমিত কুমার সিংহ
১৬ই ডিসেম্বর ২০২১