বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারী, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও স্বেচ্ছাসেবক এবং আপামর জনসাধারণসহ প্রায় ৬ হাজার মানুষের সমাগম হয়। শোভাযাত্রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী শ্রী রতন লাল নাথ এবং বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের পক্ষে সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ নেতৃত্ব দেন।
শোভাযাত্রা শেষে ভাষাশহীদদের স্মরণে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে যৌথভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের পক্ষে সহকারী হাইকমিশনার এবং রাজ্য সরকারের পক্ষে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এবং তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উক্ত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দ্বিতীয় পর্ব সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন ও রাজ্য সরকারের যৌথ আয়োজনে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে (হল নং-০১) দিবসের তাৎপর্য নিয়ে এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রী শ্রী রতন লাল নাথ, বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী সুশান্ত চৌধুরী, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র শ্রী দীপক মজুমদার, বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ ও ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন উপাচার্য ড. অরুনোদয় সাহা। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে আসা প্রায় ১৩০০ ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা ভাষাশহীদদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ তার বক্তব্যে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউলসহ ভাষাশহীদদের স্মরণের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্কুল, কলেজ বন্ধ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এছাড়া ত্রিপুরা সরকারকে যৌথভাবে এই আয়োজনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার। অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের তথ্যমন্ত্রী শ্রী সুশান্ত চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে বাংলাভাষি মানুষের জন্য একটি গৌরবময় দিন। এ দিনে কোনো ভাষা যেন পৃথিবী থেকে হারিয়ে না যায়, সেজন্য শপথ নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও রাজ্য সরকারের যৌথ আয়োজনের সফলতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী শ্রী রতন লাল নাথ বলেন, রাজ্য ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন, পৃথিবীতে একটি অনন্য উদাহরণ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত মর্মে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি। এরপর রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রী এবং রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাভাষি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীসহ অন্য শিল্পীদের পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থিত দর্শকদের নজর কাড়ে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের আয়োজনে দূতালয় প্রাঙ্গণে বেলা সাড়ে ১২টায় ভাষাশহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও বাংলাদেশের উত্তরোত্তর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বাণী পাঠ করেন অত্র মিশনের সহকারী হাইকমিশনার এবং প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান এস. এম. আসাদুজ্জামান। সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ দিনটির গুরুত্ব তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন এবং সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজকের অনুষ্ঠানটি পালন করা হয় বলে জানিয়েছেন সহকারী হাইকমিশনার।
আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ
২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২