Type Here to Get Search Results !

বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঃ দীপক সাহা, কলকাতা

'বিদ্যাসাগর'-বলতে যেমন বাঙালি একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে বোঝেন,'বিশ্বকবি'-বলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে; তেমনই 'বাংলার বাঘ'-বলতে একমাত্র স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কেই বোঝেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি এই 'বাংলার বাঘ'-উপাধিটি পেলেন কোথায়...

আশুতোষ মানুষ হিসেবে যেমন ছিলেন সহৃদয়, স্নেহপ্রবণ, রসিক, ভোজনপ্রিয়, মিষ্টান্নবিলাসী; তেমনই ছিলেন গম্ভীর, কর্তব্যে কঠোর এবং কর্মে আপোষহীন। মানুষটার অহং আহত হয়েছিল বলে জমে ওঠা ওকালতি নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিয়েছিলেন, কাজের স্বাধীনতা অপহৃত হচ্ছে মনে হয়েছিল বলে জজিয়তী ছেড়ে দিয়েছিলেন, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি অনুদান ন'লাখ পেল এবং তাঁর প্রাণের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পেল মাত্র এক লাখ টাকা–তখন প্রবঞ্চনার প্রতিবাদে ভাইস চান্সেলারের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন, ট্রেনের কামরায় বেয়াদব ইংরেজ তাঁর কোট ফেলে দিলে তাকে হাতেনাতে শিক্ষা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালির মেরুদণ্ড কতখানি শক্ত! প্রবল ব্যক্তিত্ব নিয়ে তিনি অন্যায় দেখলে রাজাগজা কাউকেই রেয়াত করতেন না। তাই ইংরেজরাও তাঁকে বেশ সমঝে চলত। এই ব্যতিক্রমী তেজস্বী স্বভাবের জন্যই আশুতোষের ডাক নাম হয়ে গেল, 'টাইগার'। সেও এক মজার গল্প।  

আশুতোষের দুই সুহৃদ অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সেন এবং অধ্যাপক রাজেন্দ্র বিদ্যাভূষণ–তাঁদের সঙ্গে আশুতোষের সম্পর্কটা ছিল অনেকটা শ্রদ্ধামেশানো বন্ধুত্বের। তখন আশুতোষ থাকেন ভবানীপুরে। দু'জনেই বেশ সকাল সকাল ট্রামে চড়ে একটা কাজে দেখা করতে আসছেন আশুতোষের সঙ্গে, তাঁর বাড়িতে। রাজেন্দ্র রসিক মানুষ। ময়দানের কাছে এসে হঠাৎ তাঁর রসিকতা চাগাড় দিয়ে উঠল। দুম করে জানলার বাইরে আঙুল উঁচিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন–'টাইগার! টাইগার!!' ওমা বাঘ নাকি!–দীনেশচন্দ্র চমকে তাকালেন রাজেন্দ্রর আঙুল বেয়ে ময়দানের দিকে–কোথায় বাঘ, কোথায় কী! দেখেন, স্বয়ং আশুতোষ , ময়দানে মর্নিংওয়াক করছেন! রাজেন্দ্রর রসিকতা  বুঝে এবার দীনেশচন্দ্র হেসে ফেললেন–টাইগারই বটে! পরে আশুতোষ যখন এই মজার ঘটনাটি তাঁর দুই বন্ধুর কাছে শুনলেন তিনি বেশ উপভোগই করলেন। ব্যস, রাজেন্দ্রকে আর পায় কে! প্রশ্রয় পেয়ে এরপর থেকে যেখানে-সেখানে আশুতোষকে তিনি 'টাইগার'-বলে ডাকা শুরু করলেন। আর সে-ডাকে আশুতোষ সাড়াও দিতে লাগলেন।

কিছুকাল পরে কলকাতায় এলেন তৎকালীন ফ্রেঞ্চ-প্রিমিয়ার ক্লামা সোঁর। দুর্জয় ব্যক্তিত্বের মানুষ তিনি। যেমন উদ্যম, তেমনি বাঘের মতো তেজ। তার ওপর আপোষহীন, স্পষ্টবক্তা ও দেশহিতৈষী। সেজন্য তাঁকে 'ফ্রেঞ্চ টাইগার' বলা হত। 'অমৃত বাজার পত্রিকা' তাঁকে নিয়ে মস্ত এক ফিচার লিখে ফেলল  এবং, লিখতে গিয়ে দেখল, তাঁর গুণাবলীর সঙ্গে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের গুণাবলী একেবারে হুবহু মিলে যাচ্ছে। ফলে, তাঁরা স্পষ্টই লিখলেন, ক্লামা সোঁর যদি ফরাসি দেশের টাইগার হন, তাহলে আমাদের আশুতোষ স্বাভাবিকভাবেই 'বেঙ্গল টাইগার' বা 'বাঙ্গালার ব্যাঘ্র'। সুতরাং, 'বাঙ্গালার ব্যাঘ্র'-এই অভিধা বলতে গেলে আশুতোষকে এইভাবে প্রথম তাঁরাই দিলেন। এ-সময় আর একটা ঘটনা ঘটল। ক্লামা সোঁরের সঙ্গে তুলনামূলক এই আলোচনার রেশ যখন কলিকাতার বিদ্বৎমহলে চলছে, তখন এক শিল্পী হঠাৎ আশুতোষের একখানা বাঘমার্কা ছবি এঁকে ফেললেন–যেখানে দেখা গেল তাঁর চওড়া খোঁচা গোঁফ, ফোলা নাক, জ্বলন্ত চোখ এবং বিস্তৃত বুক। ছবিটা যেন 'বাঙ্গালার ব্যাঘ্র' অভিধার সঙ্গে একেবারে মানানসই হয়ে গেল। প্রচারমাধ্যম ও কর্মযোগের মিলনে 'বাঙ্গালার ব্যাঘ্র' ধীরে ধীরে লোকমুখে 'বাংলার বাঘ' হয়ে দেশব্যাপী প্রচারিত হল, হয়ে উঠল স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পরিবর্ত-নাম।

বাংলার নবজাগরণের একজন সৎ, সাহসী, নির্ভীক শিক্ষবিদ ও পথপ্রদর্শক  বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁরই কথা।

আদ্যোপান্ত বাঙালি স্যার আশুতােষ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম হয় কলকাতার বউবাজার পল্লীতে ২৯ শে জুন ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে। আশুতােষের বাবা গঙ্গাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায় একজন বিখ্যাত ডাক্তার ছিলেন। আশুতােষের মা জগত্তারিণী দেবী ছিলেন একজন আদর্শ ভারতীয় মহিলা। কলকাতার ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়ার পাঠশালায় আশুতােষের বাল্যশিক্ষা শুরু হয়। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ও শ্রুতিধর ছাত্র। ছােটবেলা থেকেই তিনি গণিতের কঠিন কঠিন সমস্যা সহজে সমাধান করে দিতে পারতেন। তিনি দিনরাত অঙ্ক কষতে ভালােবাসতেন। একবার কিশোর আশুতোষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর বিশ্রামের প্রয়ােজন ছিল। এজন্য তাঁর বাবা তাঁর ঘর থেকেই খাতা কলম পেনসিল সরিয়ে রেখেছিলেন। আশুতােষ তখন একটুকরাে কাঠকয়লা পেয়ে তাই দিয়ে ঘরের চার দেওয়াল জুড়ে গণিতের অনেক প্রশ্ন সমাধান করে রেখেছিলেন। 

আশুতোষ ছিলেন প্রথম ছাত্র যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি আইনের পরীক্ষা পাশ করেন। ইংরেজ সরকার তাঁকে শিক্ষা বিভাগে উচ্চপদে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। এই চাকরিতে ভারতীয়দের ইংরেজদের সমান মর্যাদা ও সুযােগ দেওয়া হত না। এজন্য আত্মমর্যাদাসম্পন্ন তেজস্বী আশুতােষ এই চাকরি গ্রহণ করেননি। একবার বড়লাট সাহেব আশুতােষকে বিলেত যাবার সুযােগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মা রাজি ছিলেন না বলে মাতৃভক্ত আশুতােষ বিলেত যাননি। স্বাধীনচেতা আশুতোষের জীবনের প্রধান লক্ষ্যই ছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারক হওয়া। ১৮৮৮ সালে  বি.এল. ডিগ্রী লাভ করে আইন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হন। তবে এর পাশাপাশি তিনি তাঁর একাডেমিক পড়াশুনাও চালিয়ে যান। ১৯০৪ সালে তিনি তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে বিচারকাজ পরিচালনা শুরু করেন।১৯০৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থাকাকালীন তিনি বিখ্যাত এবং একই সঙ্গে বিতর্কিত হয়ে উঠেছিলেন। 


১৯০৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ জাতীয়তাবাদী চেতনাকে দারুণভানে উজ্জীবিত করে তোলে। ১৯০৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জাতীয় শিক্ষার পরিধি সীমিত হয়ে যায়। তাঁর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থাকাকালীন সময়টি বাংলায় স্বদেশীদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপ্রচেষ্টাকে আশুতোষ সমর্থন করেননি। তাঁর মতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি একাডেমিক ঐতিহ্য স্থাপন করেছে যা আমাদের রক্ষা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত পাশ্চাত্য শিক্ষাকেও জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর মধ্যে থেকেই প্রায় সব জাতীয়তাবাদমূলক বিষয়কে কার্যকর করেছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার চেয়েছিলেন, বিপ্লব চাননি। বিশ্ববিদ্যালয়  রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হোক তা তিনি চাননি। 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পড়াবার ব্যবস্থা ছাড়াও অনেক নতুন বিষয় পড়াবার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি কলেজ স্ট্রীট ও রাজাবাজার ক্যাম্পাসে কলা ও বিজ্ঞান শাখার জন্য নতুন বিভাগসমূহ স্থাপন করেন এবং 'দেশী ভাষা' ও 'প্রাচীন ভারতের ইতিহাস' বিভাগ দুটি চালু করেন।বিদেশী ও ভারতীয় বহু খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ প্রফেসর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে নিযুক্ত হন। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সমস্ত বিভাগের সিলেবাস প্রণয়নে উদ্যোগী হন। তিনি ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো উপাচার্য পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অণুপ্রেরণা। রাজনীতির সাথে জড়িত না হয়েই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশ্চাত্য ও জাতীয় শিক্ষার সুফলগুলি অত্যন্ত সফলতার সাথে সংযু্‌ক্ত করেন। এভাবে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক রেনেসাঁস ঘটিয়ে ফেলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ব্যবস্থায় আনলেন আমূল পরিবর্তন। ছাত্রছাত্রীরা আজও ঋণী হয়ে আছে তাঁর কাছে।পরীক্ষার প্রশ্নে তিনিই প্রথমবার ‘অথবা’ এনেছিলেন। তার আগে যা প্রশ্ন আসত সবই লিখতে হত পরীক্ষার্থীকে। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সেই প্রথম দীর্ঘদিনের নিয়মকে ভেঙে ফেলেছিলেন। আর নিয়ম করে দিলেন, পড়ু্য়াদের জন্য করা প্রশ্ন, প্রশ্নকর্তার পাণ্ডিত্য পরিমাপের জায়গা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ফেল করানোর কারখানাও নয়। পাশের হার বাড়তে লাগল হু-হু করে। ছাত্রছাত্রীদের মুখে হাসি ফুটল। সেদিন পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মানচিত্রে গর্বের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি ছিলেন খুবই ছাত্রদরদী। তিনি চাইতেন, প্রশ্নপত্র এমন ভাবে তৈরী হোক তাতে যেনো মাঝারি মেধার ছাত্ররাও ভালো করতে পারে। অধ্যাপকদের তিনি বলে দিলেন যে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অধ্যাপকদের বিদ্যে জাহির করার জায়গা নয়, প্রশ্নপত্র যেন সমস্ত মানের ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে করা হয়। আর সমস্ত প্রশ্নপত্রই আগে স্ক্রুটিনি করবেন তিনি, তারপর তা ছাপা হবে। সেসময়, একদিন গণিতের পণ্ডিত অধ্যাপক গৌরীশঙ্কর দে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করে নিয়ে গেলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। গৌরীশঙ্কর দে তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, 'স্যার, অঙ্ক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, যদি একটু দেখে দেন।' আশুতোষ তাঁর  হাত থেকে কাগজটা নিয়ে চোখ বুলিয়ে একটু গম্ভীর হলেন। তারপর মুখে 'হুম' শব্দ করে বললেন, গৌরীবাবু আপনার হাতে ঘন্টা আড়াই সময় আছে? গৌরীশঙ্কর দে কিছু না বুঝেই বললেন, 'আজ্ঞে তা আছে, কেন স্যার?' আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তখন গৌরীশঙ্কর দে'র জন্য কাগজ-কলমের ব্যবস্থা করে দেন। তখন আশুতোষ মুখোপাধ্যায় গৌরীশঙ্কর দে'কে বললেন, 'আমি স্নানটা সেরে আসি বুঝলেন, আপনি ততক্ষণে যে প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেছেন তার অঙ্কগুলো বরং কষে ফেলুন। তারপরই আশুতোষ কাঁধে গামছা ফেলে চলে গেলেন স্নানে। কথা শুনে গৌরীশঙ্কর দে-ও অঙ্ক কষতে বসে গেলেন। টানা আড়াই ঘন্টা বাদে তাঁর সামনে এলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তখন পরীক্ষা হত আড়াই ঘন্টার। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে বললেন, আড়াই ঘন্টা কিন্তু ওভার গৌরীবাবু। আপনার প্রশ্নপত্রের সব অঙ্ক কষে ফেলেছেন তো? গৌরীশঙ্কর দে বললেন, 'না স্যার, দু'তিনটে এখনও বাকি আছে।' এবার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় হেসে বললেন, 'তাহলেই বুঝুন, নিজের তৈরি প্রশ্নপত্র আপনার মতো পণ্ডিত মানুষের যদি আড়াই ঘন্টা উপার হয়ে যায়, অল্পমেধার ছাত্রছাত্রীরা পারবে কেমন করে? যান, বাড়ি গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় তাদের কথা মাথায় রেখে নতুন করে একখানা প্রশ্নপত্র তৈরি করুন।'

আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মানেই গণিতশাস্ত্র। সেখানে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। স্কুল জীবনেই ‘কেমব্রিজ মেসেঞ্জার অফ ম্যাথামেটিক্স’-এ তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। স্যার আশুতােষ মুখােপাধ্যায় পরবর্তীতে ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চা সমিতির সভাপতি নিযুক্ত হন। তিনি কয়েকটি বিদেশী ভাষা, যেমন পালী, ফরাসী এবং রুশ ভাষায়ও অভিজ্ঞ ছিলেন। তবে যেদিকটি সবচেয়ে অনালোচিত, তা হচ্ছে বাংলা ভাষা এবং তার ব্যবহারে আশুতোষের ভূমিকা। বাংলা ভাষাকে মর্যাদার সঙ্গে দেখা এবং বুক ঠুকে শিরদাঁড়া টানটান রেখে যেন সব্বাই বলতে পারেন, তিনি বাঙালি। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর এক স্মরণসভায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, “আজ যে বাংলা ভাষায় কথা বলছি সে জন্য আমরা স্যার আশুতোষের নিকট কৃতজ্ঞ... তিনি বাংলা ভাষাকে সে যুগে ইংরেজির সমান মর্যাদা দেন।”

নিশ্চিতভাবে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়  সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একজন মানুষ। বিধবা বিবাহের একজন জোরালাে সমর্থক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২৫ শে মে ১৯২৪ সালে ৬০ বছর বয়সে পাটনায় বাংলা মায়ের কৃতী সন্তান, উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই শিক্ষাবিদের জীবনদীপ নিভে যায়। বাংলা যতদিন তার গর্ব নিয়ে বেঁচে থাকবে, ততদিন প্রত্যেক বাঙালির হৃদয়ে গাঁথা থাকবে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নাম।

তথ্যসূত্রঃ ১।আশুতোষ-স্মৃতিকথা- দীনেশচন্দ্র সেন 

২।অন্যান্য পত্রপত্রিকা 



লেখকঃ দীপক সাহা, কলকাতা

আরশিকথা হাইলাইটস

২৯শে জুন ২০২২




































 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.