Type Here to Get Search Results !

মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে ত্রিপুরা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিনিধি,আগরতলা,আরশিকথাঃ


রাজ্যের জাতি জনজাতি অংশের যুবক যুবতীদের অনেকের মধ্যেই সাংস্কৃতিক প্রতিভা রয়েছে। প্রতিভা বিকশিত করার জন্য উপযুক্ত মঞ্চ প্রয়োজন। ত্রিপুরা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট তাদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকশিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে।

সোমবার সন্ধ্যায় নজরুল কলাক্ষেত্রে ত্রিপুরা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। কলকাতার সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় এই প্রথম রাজ্যে ফিল্ম ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করলো।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, আগরতলার মেয়র দীপক মজুমদার, বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা ফিরদৌস আহমেদ ও এসআরএফটিআই, কলকাতার অধিকর্তা হিমাংশু শেখর কাথুয়া। এই ইনস্টিটিউটে স্ক্রিন অ্যাকটিং, ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট এবং নিউজ রিপোর্টিং, অ্যানকরিং, নিউজ রুম অটোমেশন এই ৪টি কোর্স রয়েছে। এই ইনস্টিটিউটে এবছর ৪৭ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে।

ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, আমরা কোনোদিন ভাবিনি আমাদের রাজ্যে ফিল্ম ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে। রাজ্য সরকারের চেষ্টায় তা বাস্তব রূপ পেয়েছে। প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী, সুরকার শচীন দেববর্মণ এবং রাহুল দেববর্মণের কথাও আলোচনায় তুলে ধরেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই গান, বাজনা, সাংস্কৃতিক চিন্তা ভাবনা লুকিয়ে আছে। তাকে বিকশিত করতে হয়। উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকলে প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, এই ইনস্টিটিউটের জয়যাত্রা ছাত্রছাত্রীদের উপর যেমন নির্ভর করবে, তেমনি শিক্ষক শিক্ষিকারাও তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন এই ইনস্টিটিউট ভবিষ্যতে সুনাম অর্জন করবে।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধার ঘাটতি নেই। কিন্তু হীরার মূল্য যেমন অধিক রূপ দিলেই বোঝা যায় তেমনি মেধার জন্যও চাই প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন। তবেই তার মূল্য বাড়ে। আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ফিল্ম জগৎ তথা বলিউডের সঙ্গে ত্রিপুরার বহু আগে থেকেই সম্পর্ক রয়েছে এস ডি বর্মণদের কারণে। এখন ত্রিপুরা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট স্থাপনের ফলে এতোদিন যে ঘাটতি ছিল ফিল্ম সংক্রান্ত মেধাকে কাজে লাগানোর তাও পূরণ হবে।

তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংস্কৃতিমনস্ক চিন্তাধারার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, আর চলচ্চিত্র হচ্ছে এক শক্তিশালী মাধ্যম এই সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য। তিনি এই নতুন প্রতিষ্ঠান একদিন ত্রিপুরায় এক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান রূপে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। কেননা ত্রিপুরাতে সাংস্কৃতিক বিকাশের মূল ভিত রয়েছে, এখানকার জনজাতি ও মিশ্র সংস্কৃতির উজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে। এখন টিএফটিআই স্থাপিত হওয়ার কারণে একদিন ত্রিপুরা ও ফিল্ম জগতে বড় নাম করবে। তিনি টিএফটিআই-এ ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য কামনা করেন এই উদ্যোগের সাথে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিধি তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। এই রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়।

এই ফিল্ম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে আরও বেশি করে তুলে ধরা সম্ভব হবে। রাজ্যের যুবক-যুবতীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতিতেও এই ফিল্ম ইনস্টিটিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। রাজ্যের যুবক-যুবতীদের মধ্যে যে মেধা রয়েছে এই ফিল্ম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে তারা দেশবাসীর কাছে তা তুলে ধরতে সক্ষম হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন সুন্দর সাবলীলভাবে এই ইনস্টিটিউটটি এগিয়ে যাবে।

আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, আজকের দিনটি রাজ্যবাসীর কাছে ঐতিহাসিক দিন। শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বহুদিনের প্রত্যাশা আজ পূরণ হলো। তিনি আশা প্রকাশ করেন রাজ্যের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তাদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে ক্রবর্তী। কলকাতার এসআরএফটিআই এর অধিকর্তা হিমাংশু শেখর কাথুয়া বলেন, ত্রিপুরা সরকারের চলচ্চিত্র সংক্রান্ত এক সুদূরপ্রসারী ভিশন রয়েছে।

টিএফটিআই হচ্ছে সেই লক্ষ্যে এক সূচনা মাত্র। কলকাতাস্থিত এসআরএফটিআই চলচ্চিত্র জগতে ইতিমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে এবং বিভিন্ন কোর্স সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছে। ত্রিপুরাতেও এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের দরকার ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক মেধায় ভরপুর এই রাজ্যের মেধাবী ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণের জন্য। তিনি জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এখানে ক্লাস শুরু হবে। এসআরএফটি সেজন্য শর্ট কোর্সের ডিজাইন করেছে। ভবিষ্যতে ডিপ্লোমা এমনকি স্নাতকোত্তরের মতো দীর্ঘ মেয়াদি কোর্স চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা ফিরদৌস আহমেদ বলেন, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। সেকথা উল্লেখ করে ত্রিপুরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, আজকের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারার জন্য। শীঘ্রই ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করার কথাও বলেন তিনি। তাছাড়া ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েররাও এখানে এসে ফিল্ম বিষয়ক পড়াশুনার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। সর্বশেষে তিনি বলেন, আগামীদিনে টিএফটিআই-এর বিকাশে যখনই দরকার পড়বে তিনি তার সাধ্যমত সহযোগিতা করবেন।


অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্রিপুরা ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউট গঠনের বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এবং সচিব পি কে চক্রবর্তী অতিথিদের স্মারক উপহার প্রদান করেন। এই ইনস্টিটিউটে ৪টি স্বল্পমেয়াদি কোর্স এখন পড়ানো শুরু করা হবে। পড়ার ৯০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার বহন করবে। দশ শতাংশ অর্থ ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।


আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ


ছবিঃ সুমিত কুমার সিংহ

২৮শে নভেম্বর ২০২২
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.