Type Here to Get Search Results !

ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রীর বন্ধনকে সুদৃঢ করার কাজে আন্তরিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ থেকে নয় মাস পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি দশায় থেকে বিশ্ব জনতার চাপে মুক্তি পান। তাঁকে মুক্তি না দিয়ে স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের সামনে আর কোন উপায়ও ছিল না, কারণ ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনী তথা যৌথ বাহিনীর কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। ৯৩ হাজার সৈন্যসহ সেনাধ্যক্ষ নিয়াজী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করেন। দেশদ্রোহীতার অভিযোগ তুলে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলাতে চেয়েছিল।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সেই দুঃসময়ে তাঁর মুক্তির দাবি নিয়ে বিশ্বের নানা দেশে ছুটে গিয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাঁকে সরাসরি স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেয়নি। তাঁকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। লন্ডনের রয়েল এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে বঙ্গবন্ধু নয়া দিল্লিতে আসেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ করে সৌভ্রাতৃত্বের পরিচয় দিয়েছিল, যদিও তখন ভারতের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য দিয়েছিল প্রতিবেশী মিত্র দেশ ভারত। ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের এই অবদানের কথা স্মরণ করেই বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে ভারতের মাটির স্পর্শ করলেন। শ্রীমতি গান্ধী সপার্ষদ তাঁকে পালাম বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। ১৯৭২ সনের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশের বুকে ফিরে এলেন বিজয়ীর বেশে। লাখো জনতা তাঁকে আবেগ-উচ্ছ্বাস-শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল। এবার তাঁকে নতুন করে সরকার গঠন করে সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের সামনে অনেক সমস্যা থাকে। শরনার্থী পুনর্বাসন, বিধ্বস্ত সড়ক, সেতু নির্মাণ, রাস্তাঘাটকে শত্রুপক্ষের পাতানো ডিনামাইট, মোটরশেল মুক্ত করা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা, একটা সংবিধান রচনা, উপযুক্ত পরিকল্পনার রূপরেখা প্রণয়নাদি নানা কাজে তাঁকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল। অসাম্প্রদায়িক চেতনা দীপ্ত একটি উন্নয়নশীল দেশের পরিকাঠামো তৈরি, সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ আশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা, সময় উপযোগী ধারায় পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ সহ নানা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তখনই তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত মেরুতে অবস্থানরত অশুভ শক্তির হাতে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে নিহত হতে হলো। তিনি বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজে অগ্রসর হয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ৪৪ মাসের বেশি সময় পাননি। সামরিক বাহিনীর পাকিস্তানপন্থী একটি ষড়যন্ত্রকারী দল তাঁর জীবনদীপ নিভিয়ে দিল। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যাতে তাঁর কোন অনুগামী নেতা হাল ধরার সুযোগ না পান সেইটি নিশ্চিত করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী দল কারাবন্দী চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ.এইচ. এম কামারুজ্জামানকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি দশায় থাকাকালে এরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং অস্থায়ীভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করেছিলেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর অনুগামী মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ, কর্নেল নাজমুল হুদা, কর্নেল হায়দরকেও ঘাতকাহিনী হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রীয় ভাবনাকে মুছে দেওয়াই ছিল ঘাতকবাহিনী ও তাদের সমর্থকদের মূল উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধুর কন্যাসহ তাঁদের কোন সুহৃদ যাতে বাংলার মাটিতে পা রাখতে সাহস না পায় সেই বিষয়টিও দুর্বৃত্ত বাহিনীর মাথায় ছিল।

১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পুত্র, পুত্রবধু, ভাই, বন্ধুসহ হত্যাকাণ্ডকালে শেখ হাসিনা, তাঁর স্বামী ড. ওয়াজেদ মিঞা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন বিদেশে। তাঁরা ছিলেন বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে। সেখানেও নিরাপত্তার অভাব অনুভূত হওয়ায় তাঁরা পশ্চিম জার্মানির রাজধানী 'বন'এ চলে যান। সেখানেও মনে হল কারা যেন তাঁদের অনুসরণ করছে। হত্যাকারী দল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, এবার তাদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও বাকি সদস্যরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ভ্রাতৃপ্রতিম বঙ্গবন্ধুর কন্যার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পশ্চিম জার্মানির দূতাবাসের কাছে তাঁদের সুরক্ষার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ পাঠান। বললেন অনতিবিলম্বেই যেন শেখ হাসিনার সম্মতি নিয়ে তাঁদের নয়া দিল্লিতে পাঠানো হয়। তাঁর নির্দেশ মতো শেখ হাসিনাকে সপরিবারে ১৯৭৫ সনের ২৫ আগস্ট নয়াদিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এম. আতাউর রহমান। শ্রীমতি গান্ধী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করেন।

৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ১৯৮১ সালের ১৬ই মে পর্যন্ত শেখ হাসিনা নয়া দিল্লিতে প্রবাসী জীবন অতিবাহিত করেন নানা দুর্ভাবনার মধ্য দিয়ে। নিজের কথার চাইতেও বেশি ভাবেন প্রিয় স্বদেশভূমির ভবিষ্যতের কথা। ১৯৮১ সনের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই দিনটা খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। তবু ১০ লক্ষ মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সাদরে বরণ করতে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিপরীতপন্থী সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই জনতার ঢল নেমেছিল ঢাকার রাজপথে। জন অরণ্য থেকে এবার তাঁকে কোথাও গিয়ে উঠতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি তখন পরিত্যক্ত, মৃত্যপুরী! এখানে সেখানে লেগে আছে রক্তের দাগ। বাড়িটি তখনও সেনাবাহিনীর দখলে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে শেখ হাসিনা বাড়িতে ঢুকতে পারলেন। বিভীষিকাময় অভিশপ্ত বাড়ির কয়েকটি ঘর পরিষ্কার করে থাকার ব্যবস্থা হল। উদ্গত কান্নার মধ্যেও কর্তব্য নিষ্ঠা তাঁকে তাড়িত করে। বাংলাদেশের মানচিত্রটি তিনি সামনে রাখলেন। প্রতিটি জেলার ছবি দেখলেন। এবার তাঁকে জানতে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত নেতৃত্বদের কে কোথায় কিভাবে আছেন। যুগসূত্র স্থাপন করতে হবে। দিল্লিতে অবস্থানকালে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছিল। এবার তাঁকে দলের হাল ধরতে হবে। চালিত করতে হবে সঠিক দিশায়। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ জনগণকে সাথে নিয়ে জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে সংহত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। প্রায় ২ দশক পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক জোট ১৯৯৬ সনের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভাবে ক্ষমতায় আসে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি যখন দেশ চালানোর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন পিতার সহকর্মীদের অনেকেই জীবিত নেই। পরামর্শ দেবার উপযুক্ত অভিভাবকেরও অভাব। মানবিক শিক্ষা, অদম্য নিষ্ঠা, অকুণ্ঠ দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি অনাবিল ভালোবাসা ও মানসিক দৃঢ়তার ফলে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৯৯৮ সনে তাঁর উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ের নজরুল জন্মবার্ষিকী পালিত হলো যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে, সাড়ম্বরে। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের অনুরোধে ১৯৯৯ সনের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারন সম্মেলনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৯ সনে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশকে থিম কান্ট্রির মর্যাদা দেওয়া হয়। এই বইমেলার প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। একই বছর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে 'দেশীকোত্তম' উপাধিতে ভূষিত করে। পরবর্তীকালে দেশ-বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান সূচক ডি.লিট ডিগ্রি দিয়ে সম্মানিত করে। নানা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

ঙ্গবন্ধুর মতো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, খাদ্যে স্বয়ম্বরতায় উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের জনগণ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমভাবে বিকশিত হবে-এই কল্যাণমুখী ভাবনার দ্বারাই চালিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের কথা ভেবে সেইমতো কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েছেন। আজ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলার। শিক্ষার হার ৭২.৩ শতাংশ (২০১৬ সনের আদমশুমারি হিসাব মত) প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। নারী শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকার আজ রোল মডেল। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক, সেতু নির্মাণ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি, কলেজ, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন, বিদ্যুৎ পরিষেবা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি বাড়ি ও প্রতিটি কৃষিজীবী পরিবারের জন্য একটি খামার, সামরিক বাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিতকরণ, পারমাণবিক গবেষণা, স্বদেশের অর্থে সুদীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে অগ্রগতি সাধন প্রভৃতি শেখ হাসিনা সরকারের তথা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের ফলশ্রুতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাস করতেন। নিকটতম প্রতিবেশী দেশসহ সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নীতিতে চালিত হয়েছে তাঁর বৈশ্বিক ভাবনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে। ২০০৮ সনের সাধারণ নির্বাচনে তিন চতুর্থাংশ আসন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন হয়।

শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী রূপে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সনের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। শুরু হয় নতুন করে দেশ গঠনের বহুমুখী কর্মধারা। ২০১৮ সনের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকার তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। অদ্যাবধি শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের শাসন ভার সামলাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়, এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রীয় কর্ণধারগণ তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরিকল্পনা রচনা করেন এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা চালান। শেখ হাসিনা সরকারও সেই কাজে ব্রতী। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, উন্নয়ন কৌশল ও উদ্ভাবনী শক্তির ফলে। শেখ হাসিনার লক্ষ্য ২০৪১ সনের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদায় সামিল করা। এজন্য তাঁর সরকার কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে ১০ টি বিশেষ পরিকল্পনা যথা-

১/প্রত্যেকের জন্য একটি বাড়ি

২/প্রতিটি কৃষক পরিবারের জন্য একটি বাড়ি ও একটি খামার তথা আশ্রয়ায়ন প্রকল্প

৩/ ডিজিটাল বাংলাদেশ

৪/ শিক্ষা সহায়ক কর্মসূচি

৫/ নারী ক্ষমতায়ন

৬/ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পরিষেবা

৭/কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য প্রকল্প

৮/সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (গরিব অংশের মানুষের জন্য ভাতার ব্যবস্থা সহ)

৯/ বিনিয়োগ বিকাশ

১০/পরিবেশ সুরক্ষা কর্মসূচি।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এস.ডি.জি) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের গৃহীত কর্মসূচি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। চামড়া, চিনি, হিমায়িত খাদ্য, পাট জাতীয় দ্রব্য, ওষুধ পত্র, কাগজ, সিমেন্ট, পোশাক, ভোজ্য তেল, সিরামিক, রাসায়নিক রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ২০১৬ সনের হিসেব মতো বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩.৯৭ কোটি মেট্রিক টন। ৫৫ হাজার ৯৭৭ বর্গমাইল বিশিষ্ট বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলা, ৪৯০ টি উপজেলায় ছড়িয়ে থাকা 16 কোটিরও বেশি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার সাথে সাধ্যমত তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছে আধুনিক বাংলাদেশ। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, সব দেশেই সময়োপযোগী পরিষেবা প্রদান প্রয়াস সর্বাংশে পূরণ করা কঠিন। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। করোনার মত ভয়ংকর মহামারী সব দেশকেই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিশ্বের নানা শিল্প কারখানায় চলছে নানা সংকট। তবুও এর মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ।

শেখ হাসিনার উপর বহুবার উগ্রবাদী হামলা হয়েছে। জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে এগিয়ে চলেছেন ভয়-ভীতিহীন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের সুখে-দুঃখে পাশে আছে। বাংলাদেশও আছে মিত্র দেশ ভারতের পাশে। করোনা কালে ভারত সরকার সবার আগে বাংলাদেশে জীবনদায়ী ভ্যাকসিন পাঠিয়েছিল। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে গঙ্গার জল বন্টন, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সীমান্ত সমস্যার অবসান, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান সহ নানা বিষয়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১২ সালে শেখ হাসিনা ত্রিপুরা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসে ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীর্থ ভূমিরূপে উল্লেখ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদানের কথা মুক্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা কারীদের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননায় ভূষিত করেছে শেখ হাসিনা সরকার। ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প, ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতু, চোত্তাখোলার মৈত্রী উদ্যান, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে ত্রিপুরার যোগাযোগ ব্যবস্থা, আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ এর উদ্যোগসহ নানা পদক্ষেপ ভারত বাংলার মৈত্রী বন্ধনকে দৃঢ়তর করবে।

একইভাবে বাংলাদেশের পাশে থেকে ভারত সরকার এই মৈত্রী সম্পর্ককে অধিকতর সুদৃঢ করার কাজে ঐকান্তিক নিষ্ঠার পরিচয় দিচ্ছে।


ড, আশীষ কুমার বৈদ্য 

বিশিষ্ট লেখক ও গ্রন্থকার

ত্রিপুরা



আরশিকথা হাইলাইটস 

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩


আরশিকথা হাইলাইটস


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.