বিশেষ প্রতিনিধি,আগরতলা,আরশিকথাঃ
বিদ্যালয়স্তরের শিশু কিশোরদের সহজাত কৌতূহল প্রবৃত্তি, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশের জন্য ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হল দুদিন ব্যাপী বাল বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী। মহারানী তুলসীবতি বালিকা বিদ্যালয়ে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা।
গঠনমূলক মানসিক ক্ষেত্র প্রস্তুতিকরণের জন্য বিজ্ঞান ক্ষেত্রে আগামীদিনে দেশের আত্মনির্ভরশীলতা, আর্থ-সামাজিক এবং পরিবেশগত দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষার বিকাশের জন্য ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি এসসিইআরটি'র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫১তম রাজ্যস্তরীয় বাল বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী। জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কর্মীদের বিজ্ঞান, গণিত এবং পরিবেশ বিষয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর মূল স্লোগান "সমাজ কল্যাণের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। যদিও এই স্লোগানের অধীনে আরও পাঁচটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলি হল স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ ও পরিবহন, পরিবেশ বান্ধব জীবনশৈলী, গণনামূলক চিত্তন ইত্যাদি।
২ ফেব্রুয়ারি, দুপুর ১২ টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা রাজধানীর মহারাণী তুলসীবতী বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে রাজ্যস্তরীয় এই বালবৈজ্ঞানিক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। দু'দিন ব্যাপী এই প্রদর্শনী চলাকালীন সময়ে মিলেট আহার সম্পর্কে সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা, বিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা চক্র, ক্যুইজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে ৫ জন করে নির্বাচিত বিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং সহযোগী শিক্ষার্থী সহ মোট ৪০টি মডেল এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হচ্ছে। এদের মধ্য থেকে বাছাই করা সেরা ১০জন অংশগ্রহণকারীর প্রোজেক্ট ভিডিও সহ কেন্দ্রীয় স্তরে প্রেরণ করা হবে। এদের মধ্যে থেকে ২০২৪ সালের জাতীয় স্তরের বিজ্ঞান প্রদর্শনীর জন্য প্রতিযোগীকে নতুন দিল্লিস্থিত এনসিইআরটি বাছাই করবে।
এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা নিজের বক্তব্যে নিজের ছাত্র জীবনে বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেন। তিনি বলেন বর্তমান সময়ের যুব সম্প্রদায়ের চাই সারা পৃথিবীকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে। বিশেষ করে যারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন কাজের ভেতরে এই প্রবণতা সবথেকে বেশি। জ্ঞান ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব নয়। বিজ্ঞান মানেই যুক্তি। আর যুক্তির কাছে দার্শনিকতার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। যেসব বিষয়বস্তুগুলো প্রমাণিত সেটাই বিজ্ঞান মেনে নেই। তবে সাইন্স ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। মানব জীবনে বিশেষভাবে কাজে আসে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স ইত্যাদি। বিজ্ঞান নির্ভরতা সমাজের মানুষের সুযোগ সুবিধা অনেক বাড়ায়। মুখ্যমন্ত্রীর এদিন প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থী খুদে বিজ্ঞানীদের মডেল দেখে তাদের উৎসাহিত করে বলেন, হয়তো একদিন তারা নিজেদের বিজ্ঞান জ্ঞানের চূড়ান্ত উন্মেষ ঘটিয়ে বিশ্বের বুকে আলোচন ফেলে দিতে পারেন। কেউ আইনস্টাইন বা জগদীশচন্দ্র বসু মত বিজ্ঞানীও হয়ে যেতে পারে। এদের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন কোন এক সময় বিদেশ থেকে শিক্ষা লাভের জন্য ভারতে মানুষ আসত। কিন্তু আমাদের সেই ঐতিহ্য ছিল এখন বিদেশে পাঠিয়ে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে গর্ববোধ করি। এই ধরনের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলের পথে। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি ভারতে জি ২০ বৈঠকের পর দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন,ছেলে মেয়েদের উপর নিজের জীবনে যা হয়নি সে সমস্ত সুপ্ত ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয় মা-বাবার। ছেলের প্রতিভার বিকাশের দিকে অভিভাবকদের নজরদারি করতে হবে। তবে সব থেকে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদের। কারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের দিকনির্দেশনার মূল কারিগর শিক্ষক।প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, "৫১-তম রাজ্যস্তরীয় বাল বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী" উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে "কণাদ" শীর্ষক একটি স্মরণিকা উন্মোচিত হয় এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। ৩ ফেব্রুয়ারী, আড়াইটা নাগাদ বাল বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনীর পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে। উদ্বোধনী এবং সমাপ্তি এই দুটো অনুষ্ঠানেই এসসিইআরটি'র স্থানীয় অধিকর্তা পৌরোহিত্য করবেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশের জন্য ২ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়ে গেছে খুদে বিজ্ঞানীদের মডেল প্রদর্শনী। মহারানী তুলসীবতি বালিকা বিদ্যালয়ে এই প্রদর্শনীটি সেদিন ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। পাশাপাশি তিনি পূজা বিজ্ঞানীদের সাথে কথাবার্তা বলেন এবং মডেল গুলোর বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জেনে নেন। এদিনের এই প্রদর্শনী ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সংগৃহীত
২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৪