বিশেষ প্রতিনিধি, আগরতলা, আরশিকথাঃ
আসন্ন রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে কুমারঘাটে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার জেরে এই বছর সতর্ক প্রশাসন। রথযাত্রাকে সামনে রেখে গত বছর উল্টো রথকে কেন্দ্র করে কুমারঘাটে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা।কুমারঘাট ইস্কন মন্দির আয়োজিত রথ জাত্রাকে কেন্দ্র করে ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। কুমারঘাটের মাতঙ্গিনী চৌমুহনী এলাকায় রথের চুড়া বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সংস্পর্শে চলে যায়। এতে করে মুহূর্তের মধ্যে রথে আগুন লেগে যায়। শুরু হয় ভক্তদের ছোটাছুটি। এরই মধ্যে আগুনে পুরে মৃত্যু হয় দুই শিশু ও মহিলা সহ মোট ৬ জনের। অল্প বিস্তর আহত হয় বহু ভক্ত। দমকল বাহিনীর কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে কুমারঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের মধ্য থেকেও বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়। কুমারঘাটের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সরকার থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে যে তদন্ত রিপোর্ট আসে সেই রিপোর্ট নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারপর পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পুনঃতদন্তের রিপোর্টের বিষয়ে রাজ্যবাসী কোন কিছুই জানতে পারে নি। সে যাই হোক। কুমারঘাটের সেই ঘটনাকে মাথায় রেখে এই বছর আগাম সতর্কতা অবলম্বন করেছে প্রশাসন।
রথযাত্রাকে সামনে রেখে এ বছর প্রশাসনের তরফ থেকে গোটা রাজ্যের সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। তার পরেও সব ধরনের অঘটন এড়াতে প্রতিটি জেলায় কি ধরনের পদক্ষেপ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। বুধবার তিনি রাজ্যের আটটি জেলার জেলা জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রথযাত্রা কে কেন্দ্র করে সুরক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। যে সকল মন্দিরের পক্ষ থেকে রথ যাত্রার আয়োজন করা হয় সেই সকল মন্দিরের পদাধিকারিকদের সাথে জেলা শাসকদের কথা বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসকদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করা হয়েছে অঘটন এড়াতে ৭ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত রথযাত্রা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করা হবে প্রশাসনের তরফ থেকে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক ডক্টর বিশাল কুমার জানিয়েছেন আগরতলা শহরের প্রায় ৬ টি সংস্থা রথ বের করবে। তার মধ্যে বড় আকারে রথযাত্রার আয়োজন করবে জগন্নাথ জিউ মন্দির ও ইস্কন মন্দির। এই দুই মন্দিরের পদাধিকারি সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে।এই বছর রথের উচ্চতা ৫ মিটারের মধ্যে হতে হবে। বিদ্যুৎ নিগম দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে সকল রাস্তা দিয়ে রথ নিয়ে যাওয়া হবে, সেই সকল রাস্তায় কোন বিদ্যুৎ পরিবাহী তার যেন নিচে না থাকে তা নিশ্চিত করতে। তাছাড়া বিদ্যুৎ নিগম দপ্তর ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস, পূর্ত দপ্তর, আরক্ষা প্রশাসন সহ অন্যান্য দপ্তরের আধিকারিকদের ও ৭ জুলাই ও উল্টো রথ অর্থাৎ ১৫ জুলাই সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই বছর রথের সামনে পুলিশের গাড়ি থাকবে। সাধারন মানুষের নিরাপত্তার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলাশাসক ডক্টর বিশাল কুমার। পরে এ দিনের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, "আগামী ৭ ও ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য পবিত্র রথযাত্রা ও উল্টোরথ যাত্রাকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকারের অনভিপ্রেত ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে রাজ্য প্রশাসন। এই মর্মে আজ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রাজ্যের সব জেলার জেলাশাসক ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে পৌরোহিত্য করি ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিই ।"
ছবিঃ সংগৃহীত
আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
৩রা জুলাই ২০২৪