ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হল আগরতলা জিবি হাসপাতাল। প্রথমবারের মতো রোগীর শরীরে সফল কিডনি প্রতিস্থাপন হল জিবি হাসপাতালে।অপারেশনে সময় লেগেছে পাঁচ ঘন্টা। রোগী এবং ডোনার দুজনেই সুস্থ। মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং সিজা হাসপাতালের সহযোগিতায় এই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন চিকিৎসকরা।
রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় ইতিহাস তৈরি করে এই প্রথম আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ এন্ড গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করলেন চিকিৎসকরা। মনিপুর থেকে আগত সিজা হাসপাতালের ১২ জনের একটি টিমের তত্ত্বাবধানে এই কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে। মনিপুরের সিজা হাসপাতালের এই চিকিৎসক টিমটির নেতৃত্বে ছিলেন নেফ্রলজিস্ট ডক্টর গুলিভার। তাছাড়া রাজ্যের দুজন নেফ্রলজিস্ট এবং দুজন ইউরোলজিস্ট সহ বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা এদিন মণিপুরের টিমটিকে অপারেশন থিয়েটারে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছেন।
প্রসঙ্গত এজিএমসি এন্ড জিবিপি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করার কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। অবশেষে তার অদম্য প্রচেষ্টায় সোমবার ৮ জুলাই রাজ্যের বুকে প্রথম এক রোগীর শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপিত হলো। হাসপাতালের বিশেষ অপারেশন থিয়েটারে কিডনি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত অপারেশনের সার্বিক পরিকাঠামো তৈরি করে অবশেষে এদিন জিবি হাসপাতালে সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হল কিডনি প্রতিস্থাপন। যদিও এই মুহূর্তে অপারেশন সফল হলেও, রোগী এবং ডোনার বিপদ মুক্ত কিনা সেটা ৭২ ঘণ্টা পরেই ঘোষণা করা সম্ভব হবে। তবে রোগীর শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে হয়েছে এবং কিডনি ডোনার মা এবং কিডনি গ্রহীতা ছেলে দুজনেই দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন এমনটাই মনে করছেন মনিপুর থেকে আগত মেডিকেল টিমটির লিডার নেফ্রলজিস্ট ডক্টর গুলিভার। তিনি জানিয়েছেন পাঁচ ঘন্টায় এই অপারেশন সম্পন্ন করা হয়েছে সবার সার্বিক সহযোগিতায়। এর জন্য সর্বাগ্রে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। তার প্রচেষ্টাতেই এদিন এই অপারেশন সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এদিনের এই সফল অস্ত্রোপচারে অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত সবাইকেই তিনি এদিন হার্দিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। পরে এদিনের এই ঐতিহাসিক ক্ষণটিকে স্মরণীয় করে রাখতে, জিবি হাসপাতাল পরিচালন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন হয়। সেখানে ঘোষণা করা হয়েছে, সফল হয়েছে কিডনি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত অস্ত্রোপচার। ডোনার এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে আরো জানানো হয়, রামনগর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শুভম সূত্রধর বহুদিন ধরে কিডনি সংক্রান্ত রোগে ভুগছিলেন। একটা সময় শুভম সূত্রধরের মা মুন্না সাহা সূত্রধর এবং তার স্বামী ছেলের চিকিৎসায় সহযোগিতা পেতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে। সেখানে গিয়ে ছেলের বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা তারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খুলে বলেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ প্রার্থনা করেন। এরপরই জিবি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারকে শুভমের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে জিবি হাসপাতালের একটি মেডিক্যাল টিম শুভমের চিকিৎসা শুরু করেন জিবি হাসপাতালে জানুয়ারি মাস থেকে। প্রাথমিকভাবে তাকে ডায়ালিসিস দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। এরপরেই সিদ্ধান্ত হয় তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। বেশ কিছু ল্যাবরেটরী টেস্ট ত্রিপুরায় হয় না বলে সেই টেস্টগুলি বাইরে থেকে করিয়ে আনা হয়। বিষয়গুলো জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহাকে। এরপরই তিনি নির্দেশ দেন মনিপুরের সিজা হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সিজা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। সিজা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডক্টর মানিক সাহার কথা ফেলতে পারেননি। তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হন জিবি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের সহযোগিতা করার। পাশাপাশি পাঁচ বছরের জন্য সিজা হাসপাতালের সাথে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়। মউয়ের শর্ত অনুযায়ী আগামী তিন বছর কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সিজা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জি বি হাসপাতালে আসবেন এবং রোগীর শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করবেন। পাশাপাশি থাকবেন রাজ্যের চিকিৎসকরা। কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে তারা অভিজ্ঞ হয়ে গেলে, পরবর্তী সময়ের রাজ্যের চিকিৎসা প্রায় কিডনি প্রতিস্থাপন করার কাজ করবেন। আর এই শর্ত মোতাবেক এদিন মনিপুরের চিকিৎসক দলের সাহায্যে নতুন জীবন ফিরে পাবার পথে রামনগরের কুড়ি বছরের তরুণ শুভম সূত্রধর। আগামী দিনেও মনিপুরের সিজা হাসপাতালের সহযোগিতায় আরো বেশ কিছু কিডনি প্রতিস্থাপন হবে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আরশিকথা ত্রিপুরা দংবাদ
৮ই জুলাই ২০২৪