Type Here to Get Search Results !

ডাল মে কালা আউর উত্তরপত্র সাদা ঃ আরশিকথা হাইলাইটস

এ কোন ভারতে বাস করছি আমরা? একদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন, অন্যদিকে শিক্ষা ব্যবস্থায় অনৈতিকতা ও দুর্নীতির এক অস্বস্তিকর চিত্র। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বক্তব্য ‘‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, ইয়া পুরা ডালই কালা হ্যায়?’’—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছিল ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গের এসএসসি পরীক্ষা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। যেখানে, কিছু প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন, কিন্তু তাদের উত্তরপত্র পুরোপুরি সাদা ছিল—অর্থাৎ, তারা কোন প্রশ্নের উত্তরই দেননি, জানতেন যে সাদা খাতা জমা দিলেই চাকরি পেয়ে যাবেন। এটা ছিল একটি স্পষ্ট দুর্নীতির চিত্র, যেখানে চাকরি পাওয়ার জন্য শুদ্ধ জ্ঞান কিংবা দক্ষতার পরিবর্তে এমন একটি প্রক্রিয়া কাজে লাগানো হয়েছিল, যেখানে ‘কিছু কালা’ নয়, পুরো প্রক্রিয়াই ছিল কালো।

এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এসএসসি মামলার শুনানিতে এই দুর্নীতির ব্যাপকতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন। কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেও সুপ্রিম কোর্ট তার কিছু অংশ পরিবর্তন করে, এবং মূলত, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিমাণে দুর্নীতির বিষয়টি পরিষ্কার করে। এরই মধ্যে, সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে, ‘‘এত রহস্যময় এবং স্তরবদ্ধ প্রক্রিয়ায় কতটা অবৈধ কাজ কীভাবে সম্পাদিত হয়েছিল তা বোঝা কঠিন ছিল।’’ তবে এটি স্পষ্ট, যে একাধিক শিক্ষক, যারা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন, তাদের উত্তরপত্রের মধ্যে কিছুই ছিল না—সাদা খাতা জমা দিয়েছিলেন তারা। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হচ্ছে, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া এক ধরনের জালিয়াতির শিকার হয়েছিল, যেখানে শিক্ষকদের শুদ্ধ জ্ঞান এবং দক্ষতার কোনো মূল্য ছিল না।  

এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ‘‘ডাল মে কালা’’—এটি কি শুধুমাত্র কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত অংশে সীমাবদ্ধ? না কি এটি পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার কালিমায় রঞ্জিত? শিক্ষাক্ষেত্রে এই ধরনের দুর্নীতি, যেখানে সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটি শুধু চাকরি প্রার্থীদের জন্য নয়, বরং গোটা সমাজের জন্যও বিপজ্জনক। যে দেশকে আমরা শুদ্ধ জ্ঞান, ন্যায় এবং দক্ষতা ভিত্তিক শক্তি হিসেবে দেখতে চাই, সেখানে শিক্ষা ব্যবস্থায় এরকম প্রতারণার ঘটনা একটি বড় ধাক্কা।

এটি শুধু একক ঘটনা নয়, এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান দুর্নীতির গভীরতাকে নির্দেশ করে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পাওয়া, একদিকে যেমন শাসনব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ায়, অন্যদিকে এটি সমাজে শিক্ষার মান এবং রাষ্ট্রের প্রতি নৈতিকতার প্রতি বিরূপ প্রভাব ফেলে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের কিছু কিছু নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে, যদিও বর্তমান সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ তা যথেষ্ট নয় বলে অনেকের মত।  

এখন প্রশ্ন উঠে, কি ভাবে এই সিস্টেমের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব? উত্তরপত্র সাদা করা বা প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার মতো ঘটনাগুলি একটি সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমাজের নৈতিকতার জন্য কি ধরনের হুমকি তৈরি করছে? এ ধরণের জালিয়াতি রোধ করতে হলে, প্রয়োজন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে প্রার্থীদের পরীক্ষা এবং নির্বাচনের পরিমাণ এবং গুণমান বাড়ানোর পাশাপাশি, সারা দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি আরো কঠোর নজরদারি। 

আজ, আমাদের সামনে যে প্রশ্নটি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা হলো, ‘‘ডাল মে কালা’’—যদিও এটি কিছু ক্ষেত্রে সঠিক, তবে সঠিক নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে কি আমরা পুরোপুরি সেই ‘কালো’ দিকটিকে পরিষ্কার করতে পারব? কিংবা, শিক্ষা ব্যবস্থায় এই অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে কি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে? সময়ই এর উত্তর দিক।


ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস

ত্রিপুরা


ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট


আরশিকথা হাইলাইটস

৬ই এপ্রিল ২০২৫



 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.