একদিন স্কুল ছুটির পর আমি, অনুরাগ, অনিক আর রাহুল মিলে ঠিক করলাম আমাদের এলাকার সেই ভয়ংকর পরিত্যক্ত ভবনটি ঘুরে দেখব, যেটা নিয়ে সবাই বলাবলি করে। কেউ বলে, সেখানে ভূত থাকে, কেউ বলে, জাদুর দরজা লুকিয়ে আছে। আমরা এগুলো বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু ভবনের ভেতরের রহস্য জানতে কৌতূহল দমাতে পারলাম না।
বিকেলের আলো ফিকে হতে শুরু করেছে। আমরা টর্চ আর কিছু দড়ি নিয়ে ভবনের ভাঙা দরজা দিয়ে ঢুকে পড়লাম। চারপাশে ধূলোর স্তর জমে আছে, বাতাস ভারী, আর পায়ের নিচে মচমচ আওয়াজ। ভবনটি এতটাই নীরব ছিল যে আমাদের নিজেদের শ্বাসের শব্দও জোরে শোনাচ্ছিল।
ভেতরে কিছু দূর এগোতেই আমরা একটা অদ্ভুত ছবি দেখতে পেলাম। দেওয়ালে মানুষের মুখের মতো ছাপ আঁকা, আর সেটা এমনভাবে তাকিয়ে আছে, যেন জীবন্ত। অনিক ছবি দেখে বলল, “এগুলো ভূত নয়, পুরনো জাদু!” আমরা হাসি চাপালেও বুঝতে পারছিলাম, জায়গাটা স্বাভাবিক নয়।
হঠাৎ, অনুরাগ একটি লোহার দরজা দেখতে পেল। দরজার উপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, “সময় এখানে থেমে যায়।” আমরা চারজন ভয়ে থমকে গেলেও, আমার মনে হল ভেতরে ঢুকতেই হবে। অনেক ধাক্কাধাক্কি করে দরজাটা খুললাম। ভেতরে ঢুকে আমরা চমকে গেলাম—জায়গাটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম।
ভেতরে ঢোকার পর আমরা নিজেদের ভাসতে দেখলাম। চারপাশে ছিল উজ্জ্বল নীল আলো, আর মেঝেতে কোনো মাধ্যাকর্ষণ কাজ করছিল না। দেওয়ালে লেখা ছিল একরকম ধাঁধা: “যে সময় থামাতে চায়, তাকে সময়ের গতি মেনে চলতে হয়।” আমরা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
হঠাৎ রাহুল বলল, “এটা কোনো টাইম মেশিনের মতো কিছু!” কথা শেষ হতে না হতেই পেছন থেকে ধাতব আওয়াজ এল। ঘুরে দেখি, দরজাটা আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের পালানোর উপায় নেই।
এমন সময়, অনিক একটা পুরনো ঘড়ি খুঁজে পেল। ঘড়ির মধ্য থেকে একটা শব্দ ভেসে আসছিল: “সময় বাঁচাও, না হলে হারিয়ে যাবে চিরতরে।” ভয় আর কৌতূহল মিশে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, ঘড়িটা সক্রিয় করতে হবে। অনুরাগ সাহস করে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দিল।
মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমরা ভবনের বাইরে ফিরে এলাম। আশেপাশে কেউ নেই, আর আমাদের হাত থেকে সেই ঘড়ি গায়েব হয়ে গেছে।
সেই দিন আমরা বুঝলাম, ভবনটি সাধারণ জায়গা নয়। এটা হয়তো সময়-ভ্রমণের কোনো গোপন দরজা, কিংবা অন্য কোনো রহস্য। আজও আমরা সেই দিনের কথা মনে করলে শিউরে উঠি। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত, আমরা একটা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছি, যা কেউ কখনও জানবে না।
রিদ্ধিমান দাস
অষ্টম শ্রেণি
ভবনস্ ত্রিপুরা বিদ্যামন্দির
আরশিকথা পাঁচমিশেলি
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
২০ এপ্রিল ২০২৫