বিশ্ব যখন বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মোকাবিলা করছে, তখন ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে উগ্রপন্থী হামলা এবং তার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের উপর নৃশংস হামলা শুধু কাপুরুষোচিতই নয়, আঞ্চলিক শান্তির পথেও একটি বড়সড় বাধা। এই হামলার পর ভারতের যুদ্ধংদেহি মনোভাব এবং পাকিস্তানের পালটা প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
কাশ্মীরে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ নতুন নয়। দীর্ঘকাল ধরে এই অঞ্চলটি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত। তবে, নিরীহ পর্যটকদের নিশানা করে এই ধরনের হামলা নজিরবিহীন এবং অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই ঘটনা উপত্যকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছে। পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভারতের এই যুদ্ধংদেহি মনোভাব স্বাভাবিক হলেও, এর ফলস্বরূপ দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতেও আমরা দেখেছি, এই অঞ্চলের সামান্য উত্তেজনা কীভাবে বৃহত্তর সংকটের রূপ নিয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং শান্তির বার্তা দিয়েছে। তবে, একই সাথে তারা যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সংঘাত বিদ্যমান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হলে তা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হবে এবং অগণিত মানুষের জীবন বিপন্ন হবে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে উভয় দেশের নেতৃত্বকে সংযমের পরিচয় দেওয়া উচিত। উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার জন্য সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করা দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। উগ্রপন্থী হামলা এবং তার পরবর্তী যুদ্ধংদেহি মনোভাব সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে বড় বাধা। আশা করা যায়, উভয় দেশই পরিস্থিতি গুরুত্ব অনুধাবন করে শান্তির পথে অগ্রসর হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করবে। অন্যথায়, এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত ও অন্ধকারময় হয়ে উঠতে পারে।
ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস
আরশিকথা হাইলাইটস
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
৩০ এপ্রিল ২০২৫