Type Here to Get Search Results !

স্বাধীনতা চায় বালুচিস্তান, দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে বালুচদের নাড়ির যোগ - এক আলোচনা ।। আরশিকথা হাইলাইটস

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত ও সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যেই ইসলামাবাদের জন্য নতুন করে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বালুচিস্তান সংকট। বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রদেশটির সঙ্গেই দক্ষিণ ভারতের এক ঐতিহাসিক যোগসূত্র থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। পাকিস্তান, ইরান এবং আফগানিস্তানের অংশ জুড়ে থাকা বালুচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশগুলির মধ্যে একটি হলেও, এটি তুলনামূলকভাবে অনুন্নত এবং কম জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল।

বালুচিস্তানের প্রায় কুড়ি লক্ষ মানুষ 'ব্রাহুই' ভাষায় কথা বলেন, যা পার্সো-আরবি লিপিতে লেখা হয় বলে ধারণা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ব্রাহুই একটি দ্রাবিড় ভাষা। ভৌগোলিকভাবে দ্রাবিড় ভাষাভাষী অঞ্চল দক্ষিণ ভারত থেকে বহু দূরে অবস্থিত হলেও, ব্রাহুই ভাষার দ্রাবিড় ভাষাগুলির সঙ্গে সাদৃশ্য দুই অঞ্চলের মধ্যে প্রাচীন ঐতিহাসিক সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে।


দ্রাবিড় ভাষাবিদের অবলোকন :

দ্রাবিড় ভাষাবিদ রবিশঙ্কর এস নাইয়ার এই সংযোগ নিয়ে প্রচলিত দুটি তত্ত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, প্রথম তত্ত্বটি হলো দক্ষিণ ভারতীয়রাই এই অঞ্চল (বালুচিস্তান) থেকে অভিবাসিত হয়েছেন, এবং দ্বিতীয় তত্ত্বটি হলো বালুচ জনগণ দক্ষিণ ভারত থেকে অভিবাসিত হয়ে এখানে এসেছেন। গবেষণার ভিত্তিতে প্রথম তত্ত্বটি অধিক বিশ্বাসযোগ্য বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, এই অভিবাসন হয়তো প্রায় ২০০০ বছর আগে ঘটেছিল।

নাইয়ার আরও ব্যাখ্যা করেন যে, যদিও ব্রাহুই ভাষাকে দ্রাবিড় ভাষা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, বর্তমানে এতে দ্রাবিড় উপাদান খুব সীমিত। মালয়ালম ভাষার 'কানুকা'-এর মতো কিছু শব্দের প্রতিফলনে এই সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ভাষার বৃহৎ অংশে পশতু এবং বালোচি ভাষার শক্তিশালী প্রভাব পড়েছে, যার ফলে শব্দভাণ্ডার এবং ব্যাকরণ কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বোঝাতে ব্যবহৃত কিছু মৌলিক শব্দের মধ্যে এখনও কিছু মিল থাকলেও, তা এখন অনেক কমে এসেছে।


স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা:

উল্লেখ্য যে, বালোচ অঞ্চল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার অনেক আগে থেকেই একটি বিচ্ছিন্ন সমাজব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চলের গোত্রগুলি একত্রিত হয়ে নিজস্ব সেনাবাহিনীও গঠন করেছিল, যদিও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৮৮৪ সালে বালুচিস্তান ব্রিটিশ ভারতের অংশীভূত হলেও এর অভ্যন্তরীণ সংঘাতের সমাধান হয়নি। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অনেক বালুচ নেতা বালুচিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের সুযোগে প্রদেশটি পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। সেই থেকেই স্বাধীন বালুচিস্তানের দাবি ক্রমশ জোরালো হয়েছে, যা আজও পাকিস্তানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সুযোগে পাক সেনা হটিয়ে স্বাধীন বালুচিস্তান! স্বীকৃতি চেয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আবেদন করেছে বিদ্রোহীরা, বালুচিস্থান স্বাধীন না হলেও আসন্ন প্রায়।


ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস


আরশিকথা হাইলাইটস

১৩ই মে ২০২৫

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.