Type Here to Get Search Results !

আমরা কেবলই মানুষ" ... বাংলাদেশ থেকে শাহানুর আলম উজ্জ্বল এর কবিতা

 আমরা কেবলই মানুষ"

আমার মা বলল, এই মানুষকে দেখে রেখো। এই ভদ্রলোকটি তোমার বাবা- এই তোমার বোন, ভাই- এই তোমার দাদাদাদি ও পরিবার। আমি শিশু বয়সেই মাকে বিশ্বাস করেছি। ধীরেধীরে আমার পা’দুটি চঞ্চল হয়ে উঠল, আমার চোখ দৃঢ় হতে শুরু করল। তখন পরিবেশ ও পরিবার অনেক কিছুই শেখালো-জানালো, যা আমি বিশ্বাস করেছি। শুধু জানি না গাছের পাতারা কেনো ঝরে যায়। কেনো ভোর বেলা সূর্য ওঠে- কেনো রাতের রং কালো। আমাকে বলা হলো পাশের বাড়িতে যাবেনা, শ্রী কমল দাসের সাথে খেলবে না-ওরা অন্য জাতের। আমি নিস্পলকে চুপ থেকেছি। উঠোনের মাঝে সন্ধ্যা মালতি ফুলগাছ। কমলের মা প্রতি সন্ধ্যায় ফুল তুলে পূজায় রত। শঙ্খ বাজায়, উলুধ্বনি দেয়। আমার মা তখন নামাজ পড়তে বসেন। মাকে বলেছি তুমি ফুল তুলনা ক্যানো? সৃষ্টিকর্তা কি ফুল ভালোবাসেন না? মা বলেছিল সন্ধ্যাবেলা ফুল তুলা হারাম। আমি হারামের মানে তখন বুঝিনি। সন্তানের বিশ্বাসে বাবা আমাকে মসজিদ চেনালো। প্রতিদিন আমি নামাজ পড়তে যাই। শুধু বলা হলো পাশের মন্দির বা গির্জায় তুমি কখনো যাবে না। আমি প্রশ্ন করতে পারিনি কেনো? আমাকে বলা হলো সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন। যিনি সকল মানুষের-সকল গোত্রের। সেই শিশু বয়সেই প্রথম ঈদের আনন্দ পেলাম। নামাজ শেষে কুলাকুলি, আনন্দধারার খেলা। ঈদের মাঠে বাদাম বিক্রেতা কমলকে কুলাকুলি করতে গেলাম। আমাকে বাঁধা দেয়া হলো-বলা হলো ওরা অন্যজাতের! পূজা পার্বনে বাঁধা, তাদের জিনিস নিতে মানা, খেতে মানা। কেনো ,এ প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি। অথচ আমি দেখেছি টুনটুনি পাখিটা- শ্রী কোমলদের লাউয়ের মাচায় বাসা বেধেছে। তারপর দূরন্ততায় উড়ে আমাদের জামরুল ডালে বসে- ডাকাডাকি করে। বাতাসকে দেখেছি কোমল আর আমার ঘুড্ডি একই সাথে উড়াই। সূযের্র আলোয় ডালের বড়া শুকায় আমার আর কোমলের মা। তখন ধর্মের কোন বিপত্তি নেই। আমি এখন বিশ্বাস করতে শিখেছি- মানুষের কোন জাতপাত নেই, মনুষ্যসৃষ্টি ধর্ম নেই, শুধু একটাই শ্রেণি, আমরা মানুষ।

-- শাহানুর আলম উজ্জ্বল, বাংলাদেশ

৫ই নভেম্বর ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.