Type Here to Get Search Results !

বই বিক্রির লাভের পুরোটাই বৃদ্ধাশ্রমে দিচ্ছেন মনদীপ ঘরাই

প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর: বৃদ্ধ মা রাশিদা বেগমের মুখে এক চিলতে হাসি। চোখে আনন্দাশ্রুও। কারণ প্রবীণনিবাসে এমন অনুষ্ঠানের কথা কখনো চিন্তাও করেন নি তিনি। মধ্যাহ্নভোজ, হাসি-আনন্দ-গল্পে কাটল দিনের অর্ধেকটা। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। কিন্তু রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ ‘হিতৈষী সংঘ’র ৪০ প্রবীণের মনে খুশির রোদ্দুর। এদিন তরুণ কথাসাহিত্যিক মনদীপ ঘরাইয়ের ‘ফুঁ’ উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এই প্রবীণনিবাসে।বহুদিন পর লেগেছিল উৎসবের হাওয়া। অনেক অনেক দিন পর এই দিন প্রবীণ ভবন নিবাসী বৃদ্ধ মায়েদের মুখে এক চিলতে হাসির দেখা মিলেছে। কারণটা বেশ খানিকটা অবাক করার মতোই। তরুণ লেখক মনদীপ ঘরাই তার মাকে সঙ্গে করে এসেছেন প্রবীণনিবাসের বৃদ্ধা মায়েদের পাশে।এসব মায়েদের সঙ্গে নিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছেন মনদীপ ঘরাইয়ের মা বাসন্তী ঘরাই। সেই সঙ্গে আছে আরও একটি উদ্যোগ। বইটির লেখকের লভ্যাংশের পুরোটাই ব্যয় হবে এই প্রবীণ নিবাসের বৃদ্ধ মায়েদের কল্যাণে।
এরকম উদ্যোগ এর আগেও নিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই। তার গল্পগ্রন্থ ‘অল্প গল্প’ এর মোড়ক উন্মোচন করেছিল তিনজন পথশিশু। সেই বইয়ের লভ্যাংশের ২১ ভাগ উৎসর্গ করা হয়েছিল সেই তিন পথশিশুর জন্য। আর এবার তিনি লভ্যাংশের পুরোটাই দিচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমের জন্য। এ বিষয়ে লেখক মনদীপ ঘরাই বলেন, ‘লেখালিখিটা করি অন্তরের টান থেকে। তা থেকে যদি মানুষের জন্য কিছু করা যায়, সেটাই আমার প্রাপ্তি। আর মেলার একদম শেষে এসে কেন মোড়ক উন্মোচন করছি এ কথা অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন। উত্তরটা এবার বলি, এ সময় মেলা প্রায় শেষ; এখন উদ্যোগের ঘোষণাটা দিলাম যাতে উদ্যোগের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কেউ বই না কেনে। শুধু পাঠকেরাই বই কিনুক। তাহলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক। তিনি আরো বলেন, আমার মা আমার কাছে অনেক বড় কিছু। যে মায়েদের সন্তান পাশে নেই, তাদেরকে একটা বার্তা দিতে চাই, আমি সাধ্যমতো আপনাদের পাশে আছি। সন্তান হয়ে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক পর্যায়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি লেখক। উপস্থিত অনেকেই তার সঙ্গে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক লেখকের মা বাসন্তী ঘরাই বলেন,‘ভাবতেই ভালো লাগছে আমার ছেলে এত সুন্দর একটা উদ্যোগ নিয়েছে। জীবনে আমার সবচেয়ে সেরা পাওয়া।’ বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক সজীব দত্ত নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘এ ধরনের কার্যক্রম আমাদের স্বপ্ন দেখায় সুন্দর আগামীর। এ উপন্যাসটি তে লেখক অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।’ নিবাসের অধিবাসী একজন মা রাশিদা বলেন, ‘এমন অনুষ্ঠানের কথা চিন্তাও করি নি কখনও। লেখকের আবেগঘন কথা শুনে আমরাও চোখের পানি আটকে রাখতে পারি নি।’ অনুষ্ঠান শেষে লেখকের সঙ্গে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মায়েরা মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন। এ যেন স্বপ্নলোকের কোনো মিলনমেলার দৃশ্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি।

আরশিকথা হাইলাইটস

ছবিঃ নিজস্ব
২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.