Type Here to Get Search Results !

বিশ্বকাপ তো নয়, যেন একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র

একটাই পর্দা, সারা বিশ্বের সমস্ত পথে প্রান্তরে একযোগে চলছে।পৃথিবীর সমস্ত দর্শক হা হয়ে দেখছে।কী হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে ? এটা কি বিশ্বকাপ, নাকি পূর্ণদৈর্ঘ্য একটি চলচ্চিত্র ? মোটেও ভুল হবে না যদি এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপকে একটা চলচ্চিত্র বলা হয়।কী নেই এখানে, টানটান উত্তেজনা, স্নায়ুচাপ, নীরবতায় চোখ কান বুজে আসা, আবার মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়া।একটা সিনেমাতে যতগুলো উপাদান থাকে, এবারের বিশ্বকাপ যেন তারচেয়ে বেশি উপাদান নিয়ে হাজির হয়েছে দর্শকদের সামনে।এখনো প্রথম পর্বের একটি করে ম্যাচ বাকি। তাতেই যে নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে।না জানি পান্ডুলিপির শেষ অংশে গিয়ে আরো কী চমক অপেক্ষা করছে।প্রথম পর্বের দৃশ্যগুলোর দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি।ফিফার র‌্যাংকিং এর শীর্ষে থেকে যারা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে, তারাই নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে গেল ম্যাক্সিকোর কাছে। দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে এলো সুইডেনে সাথে।প্রথমার্ধের শুরুতেই এক গোলে পিছিয়ে গেল। সারাবিশ্ব হতবাক।একি হতে চলছে।তবে কি গতবারের চ্যাম্পিয়নরা প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে যাচ্ছে।দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে গোলটা শোধ হলো বটে, কিন্তু পরের রাউন্ডে যেতে হলে এই ম্যাচ যে জিততেই হবে। 
মরিয়া প্রচেষ্টা জার্মান যোদ্ধাদের।খেলার নব্বই মিনিট শেষ। অতিরিক্ত ৫ মিনিট শেষ হতে আর বাকি ১৪ সেকেন্ড।নির্বাক চোখ জার্মান শিবিরে, চোখের কোণে জল গড়াতে শুরু করেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে অবিশ্বাস্য এক ফ্রি-কিক-এ গোল। 
এ যেন ফুটবলের সংজ্ঞার বাস্তবিক প্রতিফলন। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ল্যাটিন ফুটবলের সৌন্দর্যের ফেরিওয়ালা।তারা প্রথম ম্যাচ ড্র করে বসলো সুইজারল্যান্ডের কাছে। পরবর্তি যুদ্ধ কোস্টারিকার সাথে। 
জিততেই হবে টিকে থাকতে হলে।খেলার নির্ধারিত সময় শেষ। মুহুর্মুহু আক্রমন কিন্তু গোলের দেখা নেই।চীনের প্রচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে কোস্টারিকার গোলরক্ষক নাভাস।তবে  কি এখানেই কোটি কোটি ব্রাজিল ভক্তদের আশার সলিল সমাধি হবে ? না, অতিরিক্ত ছয় মিনিটে দুই গোল করে নাটকীয়তার অবসান ঘটালো ব্রাজিলীয়ানরা। 
পৃথিবীর কোটি কোটি ভক্তদের আবেগ মিশে আছে যে দলটির সাথে, তার নাম আর্জেন্টিনা। যে দেশে আছে একজন ফুটবল জাদুকর।আর্জেন্টিনার ঘোর শত্রুও এই জাদুকরের খেলায় পাগল। সবাই মুখিয়ে আছে মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফিটা দেখার জন্য। বোদ্ধারা বলেছেন- ফুটবলের কাছে মেসির নয়, বরং মেসির কাছে ফুটবলের দায় আছে।সেই মেসির আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খেলো আইসল্যান্ডের কাছে। এক এক গোলে ম্যাচ ড্র। পরবর্তি খেলা ক্রোয়েশিয়ার সাথে।বিশ্বকাপের আসরে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচ যে জিততেই হবে। 
স্বয়ং ফুটবলের ঈশ্বর ম্যারাডোনা চলে এলেন মাঠে।কিন্তু আর্জেন্টিনা সবাইকে হতাশ করে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে গেল ৩-০ গোলে। 
ঈশ্বর তাকিয়ে তাকিয়ে এই পরাজয়ের দৃশ্য দেখলেন, কাঁদলেন।ফুটবলের জাদুকর সারামাঠ রয়ে গেলেন তার ছায়া হিসেবে।তবে কি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশন শেষ ? ভক্তরা ক্ষোভে, কষ্টে জার্সি পতাকা পোড়াতে লাগলেন। কেউ কেউ আত্নহত্যার পথও বেছে নিলেন।কিন্তু তার একদিন পরেই জানা গেল এখনো আশা শেষ হয়ে যায়নি। এখনো সম্ভাবনা আছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ লড়াইয়ে টিকে থাকার। এরই নাম বুঝি বিশ্বকাপ। যা প্রতিদিন দেখা যায় না, চার বছর পর পর ফিরে আসে।ফিরে আসে মানুষের স্নায়ু স্পন্দনের পরীক্ষা নিতে।গল্পের শুরুতেই এতো উত্তেজনা, এতো নাটকীয়তা...অথচ রাশিয়া বলছে- এতো মাত্র শুরু !

ক্রীড়া প্রতিবেদকঃ জহির রায়হান, ঢাকা
ছবিঃ প্রতিবেদকের সৌজন্যে
২৫শে জুন ২০১৮ইং 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.