বহু সৃষ্টির মাঝে সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। আর বিধাতার এই অনবদ্য সৃষ্টির মাধ্যমেই তার অমরত্বের নির্ভরস্থল ' মর্ত ' নানান সৃষ্টিকল্পে যুগ যুগ ধরে বহু ইতিহাস রচনা করে আসছে। সৃষ্টির প্রতি মানুষের এই নিমগ্নতা সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংজ্ঞাকে বার বার আলোকিত করেছে।
আসলে মানুষ কখনই ফুরিয়ে যেতে চায়না। কোন না কোনও ভাবে অন্য মনে এক স্মৃতিবিজড়িত দাগরেখায় অস্তিত্বে অটল থাকতে চায়। একজন শিল্পী নিজ জীবনকাহনে তার সৃষ্টির মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকতে চায়। সে জানে তার জীবনকাহিনী ঝড় ওঠা মনে প্রত্যেক সৃষ্টি ভাবনায় এবং বাস্তবায়নের অস্থিরতায় কতটা চঞ্চল এবং প্রাণবন্ত থাকে। তা কেউ বুঝুক বা না বুঝুক এটাই একজন শিল্পীর সত্য রূপ।
আরশিকথা'য় আজ তেমনই একজন শিল্পীর কথা তুলবো। যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের জীবনের দিক নির্দেশনায় অন্যতম ভূমিকা পালনে নিজেকে এক দায়বদ্ধতায় রেখে চলেছেন। পাশাপাশি সুনিপুণ এক সৃষ্টিকল্পে নিজেকে বিসর্জিত করতেও কোন দ্বিধাদন্ধে থাকেন না। কথা হচ্ছিলো সমীরণ দে'র সাথে।
নানা ভাস্কর্যশিল্প ছাড়াও বহু সৃষ্টিধর্মী কাজে নিজের জীবনকে এক সুন্দর দাগরেখায় অমরত্ব দিয়ে চলেছেন সমীরণবাবু। তার মুখ থেকেই এই শিল্পের প্রতি অনুরাগ কেন তা জানা গেলো। ত্রিপুরা রাজ্যের স্বনামধন্য স্কুল নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র তিনি। স্কুলের পাশেই বাড়ি। স্কুল থেকে বাড়ি এইটুকু পথের মাঝেই ছিলো মাটির মূর্তি তৈরির দোকানগুলো। তার অদ্ভুত আকর্ষণেই সমীরণবাবুর মনে জন্ম নিয়েছিলো স্বপ্নভাবনার আজকের প্রসব করা সৃষ্টি সুখের বিষয়গুলি। আক্ষরিক অর্থে এই শিল্প বিষয়ক কোন ডিগ্রি যেমন নেই তেমনি ছিলোনা কোন প্রশিক্ষকও। তবে এই শিল্পের প্রতি একনিষ্ঠতায় তার এক শিল্পী কাকার কিছুটা অবদান রয়েছে বলে জানান। কোনও বাণিজ্যিক সফলতার লক্ষ্যে নয় নিতান্তই ভালবাসার তাগিদে একের পর এক সৃষ্টি তৈরি করে চলেছেন সমীরণ দে। স্বীকৃতির আকাঙ্ক্ষা একজন শিল্পীর জন্মগত অধিকার আর সেই অধিকারে মানুষের দরবারে এই শিল্পকে পৌঁছে দিতে চান সমীরণবাবু। শুধু ভালবাসার তাগিদেই নয় সামাজিক দায়বদ্ধতাকে মাথায় রেখে উল্লেখযোগ্য দিবসগুলিতে সচেতনতা বাড়াতেও তার এই সৃষ্টিধর্মী কর্মকাণ্ড অনেকদিন ধরেই বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। ইতিমধ্যেই তার এই পদক্ষেপ দেশবিদেশের নানা খ্যাতনামা সংস্থা থেকেও উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে।
সমীরণবাবু বিশ্বাস করেন শিল্পীজীবনে সৃষ্টির প্রতি নিমগ্নতাই একজন শিল্পীর প্রধান অবলম্বন। তাই সেই ভাবনায় গড়ে চলেছেন সুন্দরতার বহু নজির। তবে একটি বিষয় অকপটে স্বীকার করেন যে তার স্ত্রী এবং কন্যার সাহচর্যে তার সৃষ্টি আরও জীবন্ত ও প্রানবন্ত হয়ে ওঠে। মনের দিক থেকে অত্যন্ত মানবিক এই শিল্পী তার ভবিষ্যৎ স্বপ্নে আরও অনেক সৃষ্টির ভ্রূণ রোপণ করে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।
আরশিকথা'র তরফে অফুরান শুভেচ্ছা সহ তার পাশে থাকার অঙ্গীকার থাকলো। পাশাপাশি তার যোগ্য জীবনসঙ্গী তথা স্ত্রী মধুমিতা এবং নির্ভরতার প্রতীক একমাত্র কন্যার ভবিষ্যৎ সুখসমৃদ্ধির আশা রাখলাম।
সৃষ্টি সুখের পথে আরশিকথা'র সফর চলছে চলবে।।
এডিটর কলাম
১০ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ইং