ঢাকা ব্যুরো এডিটর:
ঢাকায় সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাজমুস সালেহীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মোফাজ্জল হোসেন। ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে সাংবাদিককে মরতে বলেন।
ওই সাংবাদিককে সচিব বলেছেন, ‘আপনি এখন আত্মহত্যা করেন। একটা স্টেটমেন্ট লিখে যান যে, রেলের লোকেরা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না এ মর্মে ঘোষণা দিলাম যে তারা কথা না বলার কারণে আমি আত্মহত্যা করলাম।’
যদিও আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিবেন বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রী।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এখানে যদি অনিয়ম থাকে অবশ্যই দূর করবো আমরা। আর যদি দেখা যায় আমাদের নিয়ম মতো আছে, তাহলে আর কিছু করতে হবে না। তা শুনে আপনিও সন্তুষ্ট হবেন।’
ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা প্রতিটি চেয়ার আসনের জন্য নিজেদের অজান্তেই বাড়তি দিচ্ছেন ৬৮ টাকা। খোদ টিকিটের মূলভাড়ার হিসাব না দিয়ে, বাড়তি টাকাকেই দেখানো হচ্ছে আসল ভাড়া হিসাবে। এতে না বুঝেই প্রতারিত হচ্ছেন যাত্রীরা।
অতিরিক্ত টাকা কোন খাতে নেয়া হচ্ছে, তা যেমন টিকিটে উল্লেখ নেই, তেমনি তা কোথায় জমা হচ্ছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন নি রেল কর্মকর্তারা। তবে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
কেবিন আর চেয়ার এই দুই ক্যাটাগরিতে ঢাকা- কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে কমলাপুর রেলস্টেশন। কেবিন প্রতি আসন ৩ হাজার ৪ টাকা আর চেয়ার প্রতি আসন ২ হাজার ৫শ’ টাকা।
চেয়ার আসনের গায়ে লেখা হিসাব থেকে দেখা যায়, ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ টাকা, ভ্যাট বাবদ ২৫২ টাকা আর ভ্রমণ কর বাবদ নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। উল্লেখিত এই তিন খাতের যোগফল ২ হাজার ৪৩২ টাকা হলেও টিকিটেই লেখা আছে ২৫০০ টাকা। বাড়তি ৬৮ টাকা খেয়াল না করেই গুণে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
যাত্রীরা বলেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাচ্ছি, এই বাড়তি টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি টাকা নেয়ার ব্যাপারে কোনো কিছুই বলতে পারছেন না টিকিট বিক্রেতা।
কমলাপুর রেলস্টেশন টিকিট বুকিং সহকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রেল ভবনে আলোচনা করলে ভালো হয়। বিষয়টা আসলে কি হইছে এটা ওনারা ভালো বলতে পারবে।’
সপ্তাহে চারদিন ঢাকা-কোলকাতা যাত্রী বহন করে মৈত্রী এক্সপ্রেস। কমলাপুর রেলস্টেশনের তথ্য বলছে, প্রতি ট্রেনে থাকে ৪৫৬ জন যাত্রী। যার মধ্যে কেবিনের জন্য বরাদ্দ ১৪৪টি আসন আর বাকি ৩১২ জনই চেয়ারের। সেই হিসাবে প্রতি মাসে চেয়ারের যাত্রী ৪ হাজার ৯৯২ জন। আর বছরে ৫৯ হাজার ৯০৪ জন। প্রতি আসনে ৬৮ টাকা বেশি হলে বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪২ লাখ টাকা।
বিপুল পরিমাণ এই টাকা কোন খাতে আদায় করা হচ্ছে? কিংবা তা জমা হচ্ছে কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি রেলের ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মাহবুবুর রহমান ও মার্কেটিং বিভাগের উপ-পরিচালক কালিকান্ত ঘোষ।
সবশেষে রেলসচিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে, বিষয়টি শুনেই রেগে ওঠেন তিনি। রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এই বিষয়ে আপনার এত উৎসাহ কেন! যে লোকটা জানতে চাচ্ছে সে নিয়মিত কলকাতা যায়। সে জানতে চাইলে আমরা বলে দিবো। কারণ এই জন্য আমাদের কাছে একটা ব্যাখ্যা আছে। তবে আপনাকে আমরা কেন ব্যাখ্যা দিবো। আপনার কি কোনো প্রয়োজন আছে? আপনি তো যাত্রীরা না।’
সচিব পরে ডেকে পাঠান রেলের অপারেশন বিভাগের উপ-পরিচালক মিয়া জাহানকে। তাঁর কাছেও মেলেনি কোনো ব্যাখ্যা।
কিন্তু পরদিন মিয়া জাহান কৌশলে সময় সংবাদকে এড়িয়ে যান। আর এ বিষয়টি জানাতে গেলে রেল সচিব ক্যামেরা ছাড়া তাঁর কক্ষে ঢোকার অনুমতি দিয়ে এই প্রতিবেদকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন।
৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ইং
৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ইং