বাবাকে ভালোবাসি? মাকে ভালোবাসি বলে ফেলাটা খুবই সহজ। বাবাকে বলা হয় না। কিছুটা ভয়, কিছুটা দ্বিধা। বাবারা সময় দিতে পারেন না। ছিলে যাওয়া হাঁটুতে মলম লাগিয়ে দেয়ার মতো অবসর তাদের থাকে না। সন্ধ্যার পর বই নিয়ে পড়াতেও বসাতে পারেন না। তবু কেন ভালোবাসি বাবাকে?
শারজা কাপের ফাইনাল চলছে। পরদিন ক্লাস সিক্সের অঙ্ক পরীক্ষা। মোটেই খটমটে অঙ্ক মাথায় ঢুকছে না। বাবা ডাকলেন। বললেন, খেলা দেখো। এতদিন যা পড়েছো তাই দিয়ে হবে। জগতের সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি সেদিন আমিই ছিলাম। মাস দুয়েক পর। রেজাল্ট দিল। কোন জাদু হয় নি।সে পরীক্ষায় যে মার্ক পেয়েছি তা আজ লেখা যাবে না। ওই প্রগ্রেস রিপোর্টে সাইন দিয়েছিল বাবাই। একটিও বাক্যব্যয় ছাড়াই। বাবার সহকর্মীদের বাচ্চারা স্কুলে যেত সরকারি গাড়িতে। আমি যেতাম হেঁটে কিংবা রিকশায়।বাবা সাথে না থাকলে ওই গাড়ি ব্যবহারে নিষেধ ছিল। ছোট্ট মনটাতে এ নিয়ে দুঃখের সীমা ছিল না। এখন বুঝি কেন খুব জরুরি ছিল এই অভ্যাস। কোন খেলনা বা শখের জিনিস চেয়েই সাথে সাথে পাই নি। সেই সহনশীলতা ভালোবাসায় চিড় ধরাতে পারতো। এখন মনে হয় সাধ্যের মধ্যে বাঁচা শিখেছি তো ওখান থেকেই। বাবা-ছেলের সম্পর্কের হিসেবটাই কেমন যেন গোলমেলে। বাবার ভালোবাসাটা অনেকটা জলের মতো। প্রতিদিন জলেই বেঁচে আছি। কিন্তু, মনে হয় ওটাই তো স্বাভাবিক। আলাদা করে বলা হয় না। যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রথম ফোনটা করেছিলাম বাবাকে, সেদিন বুঝেছি বাবার কাছে আমি কতটা আদরের। আর এত এত বছর এই আদরের অপেক্ষায় ছিলাম! বড় বেতনের বেসরকারি চাকরি ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেছিলাম। চলতে খানিকটা কষ্ট তো হতোই। বাবা শুধু বলেছিলেন, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা কারও মুখাপেক্ষী হবে না। এমনকি বাবারও না। সেদিনও মেনে নিয়েছি। সে পথেই চলছি। এখনও ধার করার চিন্তা মাথায় এলে শতবার ভাবি। বাবার কথা। রবিউল। গোপালগঞ্জের বস্তির একটা ছেলে। আমার সবচেয়ে কাছের খেলার সাথী ছিল। বাবা যেদিন জানলেন,কোথায় রাগ করবেন! তা না করে উচ্ছসিত প্রশংসা করলেন। জগতে কারো বাবা ই হয়তো পারফেক্ট না।কোন সন্তানও নয়। তবুও কেন সব বাবাই ছেলেদের কাছে একটা করে আদর্শ? মনে মনে কেন সবাই ‘বাবার মতো’ হতে চায়? আমি চেয়েছি। সেই ছোটবেলা থেকে। পারি নি। কেউ পারে না। এই না পারাতেই লুকিয়ে আছে বাবা-ছেলের সম্পর্কের মিষ্টতা। ভালোবাসি বলা হবে না। রয়ে যাবে জীবনের প্রতিটি শিক্ষায়। তা সে সাধ্যের মাঝে জীবন ধারণের শিক্ষাই হোক আর দেশপ্রেম।
বাবা,তোমাকে প্রণাম। আজও বলবো না ভালোবাসি। কিছু কথা না বলাতেই বলা হয়ে যায় বহুকিছু...মনে মনে।
ছবিঃ সংগৃহীত
মনদীপ ঘরাই, সিনিয়র সহকারী সচিব
বাংলাদেশ সরকার
১৬ই জুন ২০১৯
শারজা কাপের ফাইনাল চলছে। পরদিন ক্লাস সিক্সের অঙ্ক পরীক্ষা। মোটেই খটমটে অঙ্ক মাথায় ঢুকছে না। বাবা ডাকলেন। বললেন, খেলা দেখো। এতদিন যা পড়েছো তাই দিয়ে হবে। জগতের সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি সেদিন আমিই ছিলাম। মাস দুয়েক পর। রেজাল্ট দিল। কোন জাদু হয় নি।সে পরীক্ষায় যে মার্ক পেয়েছি তা আজ লেখা যাবে না। ওই প্রগ্রেস রিপোর্টে সাইন দিয়েছিল বাবাই। একটিও বাক্যব্যয় ছাড়াই। বাবার সহকর্মীদের বাচ্চারা স্কুলে যেত সরকারি গাড়িতে। আমি যেতাম হেঁটে কিংবা রিকশায়।বাবা সাথে না থাকলে ওই গাড়ি ব্যবহারে নিষেধ ছিল। ছোট্ট মনটাতে এ নিয়ে দুঃখের সীমা ছিল না। এখন বুঝি কেন খুব জরুরি ছিল এই অভ্যাস। কোন খেলনা বা শখের জিনিস চেয়েই সাথে সাথে পাই নি। সেই সহনশীলতা ভালোবাসায় চিড় ধরাতে পারতো। এখন মনে হয় সাধ্যের মধ্যে বাঁচা শিখেছি তো ওখান থেকেই। বাবা-ছেলের সম্পর্কের হিসেবটাই কেমন যেন গোলমেলে। বাবার ভালোবাসাটা অনেকটা জলের মতো। প্রতিদিন জলেই বেঁচে আছি। কিন্তু, মনে হয় ওটাই তো স্বাভাবিক। আলাদা করে বলা হয় না। যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রথম ফোনটা করেছিলাম বাবাকে, সেদিন বুঝেছি বাবার কাছে আমি কতটা আদরের। আর এত এত বছর এই আদরের অপেক্ষায় ছিলাম! বড় বেতনের বেসরকারি চাকরি ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেছিলাম। চলতে খানিকটা কষ্ট তো হতোই। বাবা শুধু বলেছিলেন, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা কারও মুখাপেক্ষী হবে না। এমনকি বাবারও না। সেদিনও মেনে নিয়েছি। সে পথেই চলছি। এখনও ধার করার চিন্তা মাথায় এলে শতবার ভাবি। বাবার কথা। রবিউল। গোপালগঞ্জের বস্তির একটা ছেলে। আমার সবচেয়ে কাছের খেলার সাথী ছিল। বাবা যেদিন জানলেন,কোথায় রাগ করবেন! তা না করে উচ্ছসিত প্রশংসা করলেন। জগতে কারো বাবা ই হয়তো পারফেক্ট না।কোন সন্তানও নয়। তবুও কেন সব বাবাই ছেলেদের কাছে একটা করে আদর্শ? মনে মনে কেন সবাই ‘বাবার মতো’ হতে চায়? আমি চেয়েছি। সেই ছোটবেলা থেকে। পারি নি। কেউ পারে না। এই না পারাতেই লুকিয়ে আছে বাবা-ছেলের সম্পর্কের মিষ্টতা। ভালোবাসি বলা হবে না। রয়ে যাবে জীবনের প্রতিটি শিক্ষায়। তা সে সাধ্যের মাঝে জীবন ধারণের শিক্ষাই হোক আর দেশপ্রেম।
বাবা,তোমাকে প্রণাম। আজও বলবো না ভালোবাসি। কিছু কথা না বলাতেই বলা হয়ে যায় বহুকিছু...মনে মনে।
ছবিঃ সংগৃহীত
মনদীপ ঘরাই, সিনিয়র সহকারী সচিব
বাংলাদেশ সরকার
১৬ই জুন ২০১৯