॥ তিস্তা ইস্যু সমাধানে ভারতের ইচ্ছার কোনো পরিবর্তন হয়নি
আবু আলী, ঢাকা ॥
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশীকে সবার আগে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। ভারত বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশ্বের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আমাদের একটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। দুই দেশের জন্য লাভজনক হয় এমনটা বিবেচনায় নিয়ে ৫৪টি নদীর অভিন্ন পানিবণ্টনের বিষয়ে একটি ফর্মুলা বের করতে বাংলাদেশ-ভারত রাজি হয়েছে।
তিন মাস আগে নরেন্দ্র মোদীর নতুন সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে আসা জয়শঙ্কর ২০ আগস্ট মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তারা। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো আসামে যে ৪০ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে আছে সেটি বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে কিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষযয়। আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। ওই তালিকা থেকে বাদ পড়া লোকজনকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সুস্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে দিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘এটি একান্তভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ এসময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তার সাথে ছিলেন, তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত সব সময় সমর্থন দিয়ে আসছে। এ জন্য ভারত সম্ভাব্য সব ধরনের মানবিক সহায়তা দিতে তৈরি আছে। এরই মধ্যে রাখাইনে ভারত ২৫০টি বাড়ি হস্তান্তর করেছে।
তবে জম্মু ও কশ্মীরের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার পর থেকে চলমান উত্তেজনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তাদের ভাষায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক রয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো অবস্থায়। এই বন্ধুত্বকে আরও এগিয়ে নেওয়ার কথা নিয়মিতই বলা হচ্ছে দুই সরকারের তরফ থেকে।
গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শতাধিক চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে ৮৬টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে কেবল গত তিন বছরের মধ্যে। সমুদ্রসীমা ও ছিটমহল নিয়ে বহুদিনের ঝুলে থাকা সমস্যাও এই সময়ে মিটিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার। অন্যদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের আগ্রহ দেখিয়েছে স্বাধীনতার সময়কালে বাংলাদেশের বন্ধু-রাষ্ট্র ভারত। একইসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি উৎসবেও পাশে থাকতে চায় দেশটি।
আগামী অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরই তার এই সফরের অন্যতম ইস্যু জানিয়ে এস জয়শঙ্কর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে আলোচনা করা তার এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন,
বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই অঞ্চলের নিরাপত্তায় দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। সন্ত্রাস চরমপন্থা এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব বলে আজকের বৈঠকে আলোচনা করেছি। বাণিজ্য ভারসাম্য, কানেক্টিভিটি, যোগাযোগ, পানি ভাগাভাগিসহ দ্বিপক্ষীয় সকল বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করে দুই দেশের উন্নয়ন করবে নিশ্চিত করব।
এদিকে বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, খুব ভালো বৈঠক হয়েছে, আমি উচ্ছ্বসিত।
২০শে আগস্ট ২০১৯