আরশি কথা ঢাকা: মেয়েটি কখনো তার নাম বলছে রূপনা, আবার কখনো লুবনা। লুবনা বলেই সে ফিক করে হেসে উঠে কখনো আনমনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । এভাবেই চলছে একটি মেয়ের প্রতিটি দিনরাত পাবনার হেমায়েত পুর সৎসঙ্গ আশ্রমের বারান্দায় এক চিলতে ভুবন ই এখন তার যত রাজত্ব। ওই বারান্দাকে সে নিজের ঘরের মতো করে নিয়েছে।
যখন ইচ্ছে গান গাইছে, আবার কখনো নাচছে। মাঝে মাঝে হঠাৎ একেবারেই চুপ। তখন আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি। আনমনা হয়ে কী যেন খোঁজে সে। কোথায় তার ঠিকানা, কোথায় তার বাবা-মা আর চিরচেনা পরিবার!
লুবনাকে ভর্তি কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী প্রায় দুই মাস আগে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছিল তার স্বজনরা। কিন্তু সেখানে ভর্তি করতে না পারায় পাবনা মানসিক হাসপাতালের কাছেই অবস্থিত শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের বারান্দায় মায়ের সঙ্গে রাতে আশ্রয় নেয় লুবনা।
কিন্তু পরদিনের সকালটা ছিল বড়ই নিষ্ঠুর। ভোরের আলো ফুটতেই কাউকে না জানিয়ে মেয়েটাকে শিকলে বেঁধে রেখে চলে যায় তার মা। সেই থেকে মেয়েটার ঠাঁই হয়েছে আশ্রমের এই বারান্দায়, শিকল পায়ে বসে থাকে লুবনা। কখনো শিকল খুলে দিলেও কোথাও যায় না।
রনি ইমরান নামে পাবনার এক সংবাদকর্মী তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের টাইমলাইনে এমনভাবেই তুলে ধরেন বিষয়টি। যেখানে তিনি ওই মেয়ের শিকলবন্দি একটি ছবি এবং স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় আরেকটি ছবি যুক্ত করেছেন।
তিনি আরো ও বলেন বর্তমানে আশ্রমের কর্মী খোদেজা বেগম ওরফে কৈতুরী বেগম মেয়েটির দেখভাল করছেন নিজের মেয়ের মতোই আগলে রেখে। এর মধ্যে একবার কৈতুরী বেগম মেয়েটিকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টাও করেছিলেন।
কিন্তু নির্মম হলেও সত্যি যে হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃত অভিভাবক ছাড়া সেখানে রোগী ভর্তি করা হয় না।
কিন্তু নির্মম হলেও সত্যি যে হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃত অভিভাবক ছাড়া সেখানে রোগী ভর্তি করা হয় না।
এ ব্যাপারে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক তাপস কুমার রায় বলেন মেয়েটিকে নিয়ে আমরা বড়ই বিপদে আছি, ১৮-২০ বছরের যুবতী একটা মেয়েকে এভাবে কতদিন আমরা আশ্রমে রাখতে পারবো! সামনের মাসেই তো আমাদের আশ্রমের অনুষ্ঠান। তখন কত মানুষ আসবে দেশ-বিদেশ থেকে। আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বো। তখন কে রাখবে এই মেয়েটার খোঁজ?
তাপস কুমার রায় আরো বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানসিক রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু গরিব-অসহায় রোগীদের কেউ যদি প্রথম দিনে ভর্তি হতে না পারে, তাহলে তাদের কষ্টের অন্ত থাকে না। এদের অনেকেরই রাত্রি যাপনের জন্য হোটেল ভাড়া দেয়ার ও সামর্থ্য থাকে না। তখন কারও কারও ঠিকানা হয় আশ্রমের বারান্দায়।
আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আর ও জানা গেছে, গত দুই মাসে অনেকবার লুবনার সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের। কথা বলে তারা ধারণা করতে পেরেছেন লুবনার বাড়ি চট্টগ্রামে। মেয়েটি তার বাবার নাম বলছে জহির। মামার বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশের হাজী পাড়ায়। মামাবাড়িতে থেকে সে হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও করেছে। সম্ভবত বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক নেই।
আজ বড্ড উৎকণ্ঠা মেয়েটি কি তার স্বজনের কাছে ফিরে যেতে পারবে? সৎসঙ্গ আশ্রমে শিকলে বেঁধে পালিয়ে যাওয়া মা কি ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন তার আশ্রয়হীন কন্যাটিকে?
আমার বিশ্বাস ও আহ্বান এগিয়ে আসবেন অনেকেই যার ফলে নিশ্চুয় হৃদয়বান কারও না কারও চেষ্টায় চট্টগ্রামের লুবনা পাবনা থেকে ফিরে খুঁজে পাবে তার আপন ঠিকানা।
আমার বিশ্বাস ও আহ্বান এগিয়ে আসবেন অনেকেই যার ফলে নিশ্চুয় হৃদয়বান কারও না কারও চেষ্টায় চট্টগ্রামের লুবনা পাবনা থেকে ফিরে খুঁজে পাবে তার আপন ঠিকানা।
খোরশেদ আলম বিপ্লব,ঢাকা
২১শে আগস্ট ২০১৯