‘বর্ণচোরা’
মাত্র সেদিন ঈদটা গেলো
সামনে পুজা, সেটাও হলো
ক্যাটরিনা, মনপুরা অনেক কিনেছি
শেরওয়ানী, পাঞ্জাবী অনেক পরেছি
খেয়েছি অমৃত, পানীয়, মাংস
শব্দ করে হাড্ডিও খেয়েছে কুকুরগুলো।
আমারাই প্রথম ঈদগাহ সাজিয়ে
করেছি পরিসংখ্যান, প্রতিযোগিতায় নেমে
হবে না যে, লক্ষ টাকা খরচ তাতে।
প্রতিমা প্রতিযোগিতায় প্রথম মোরা,
দু’দিন পর ফেলবো জলে, তাতে কি?
ঐতিহ্য রাখতে, প্রতিমা সাজাতে
লক্ষ টাকা, এ আর খুব কি?
ভেবেছি এবার ভ্রমণে বের হবো
সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, মুম্বাই, আগ্রা
তারপর বাড়ি ফেরা।
কি এক অনাবিল আনন্দ আমাদের
কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি
যাদের ঈদ, পূজা বলতে কিছু নেই,
যারা মেরুদণ্ড শক্ত করেছে পাকা সড়কে শুয়ে
যেসব শিশু অনাহারে, নগ্নদেহে
পড়ে আছে পথের ধারে।
যারা অপুষ্টিতে বিকলাঙ্গ হয়েছে,
যারা আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে;
‘দাদা; একটা পয়সা দেন না,
সারাদিন কিচ্ছু খাইনি।’
যারা গায়ের দামি শার্টটি ধরে বলে
‘একটা বকুল ফুলের মালা নেবেন স্যার?
ভাবীকে দেবেন, দশ টাকা দাম স্যার,
একটা মালা নেবেন স্যার?’
যাদের চোখের জল রবির আলোয় মুক্তার মতো জলে,
ওরা কি আছে কোনো ঈদ কিংবা পুজার দলে?
গাড়ির ধোঁয়া, পথের ধুলা
কার্বনমনোঅক্সাইড যাদের সঙ্গী
অন্ধ, বধির, ল্যাংড়ামিটাই যাদের ভঙ্গী
অনাহারে, অবহেলায় যারা বাড়ন্ত
ডাস্টবিনের খাবার খেয়ে যাদের মৃত্যু চূড়ান্ত,
কবে ওদের ঈদ, কবে পূজা বলতে পারি আমরা?
আঁতুড়ে শিশু, কিছুদিন যে ভূমিষ্ঠ হলো
একেবারে উলঙ্গ দেহে ফুটপাতের ধারে
মায়ের বুক জড়িয়ে আছে,
শুকনো মা, চেয়ে থাকে নিস্পলক যেন অন্ধ
ক্ষুধার্ত পেটে আসে না মাতৃদুগ্ধ,
আর শিশুটি গভীর ঘুমে অচেতন;
থেমে থেমে জেগে ওঠে, চিৎকার করে
শুরু করে দুগ্ধতৃষ্ণার গীত
যেন বলে- কোথায় পূজা, কোথায় ঈদ?
কি এক অদ্ভুত প্রশ্ন?
জেনেও না জানার ভান করি
দেখেও না দেখার ভান করি
কি এক অদ্ভুত বর্ণচোরা আমরা সবাই
অবাক হই আমি, অবাক হয় আমার অন্তর্যামী।
-- মনোয়ার হোসাইন মানিক, বাংলাদেশ
২৪শে আগস্ট ২০১৯