আবু আলী, ঢাকা ॥
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর চা রপ্তানিতে বড় বাজার হতে পারে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে ওই বাজারটি ধরতেও চাচ্ছে সেভেন সিস্টারের রাজ্যগুলো। বাংলাদেশে চা রপ্তানির পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য রাজ্যে চা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূখন্ডও ব্যবহার করতে চায় তারা। খবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রের।
সূত্র সূত্র জানিয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিশেষ করে ত্রিপুরা, আসামের শিলচর, করিমগঞ্জসহ ওই অঞ্চলে অনেক চা–বাগান আছে। ওই সব বাগানের চা রপ্তানির জন্য আখাউড়া স্থলবন্দর খুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে। সব মিলিয়ে ১৯টি পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির জন্য সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এই তালিকায় আছে চা, কাজুবাদাম, হস্তচালিত তাঁতপণ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য। ইতিমধ্যে এ নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতীয়হাইকমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে।
আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফর উপলক্ষে বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চা রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এনবিআর এই প্রস্তাবে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। তবে ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ওই ১৯ পণ্য রপ্তানির প্রস্তাব সম্পর্কে এনবিআরের অবস্থান হলো—এসব পণ্য আমদানির সময় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার মতো অবকাঠামোর সুবিধা আখাউড়া স্থলবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট শুল্ক স্টেশনে নেই। আমদানিকালে এসব পণ্য ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতে সময় লাগবে। এতে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। অবশ্য দেশের অন্য শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের প্রস্তাবিত পণ্যগুলো আমদানির সুযোগ আছে।
চা ট্রান্সশিপমেন্ট সম্পর্কে ভারতের প্রস্তবনায় বলা হয়েছে, আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে চা বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করবে। এরপর সেই চায়ের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে চলে যাবে। সেখান থেকে ভারতে যাবে চায়ের চালান।
এই বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুবিধা বাড়াতেই হবে। পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশি দিন ‘বন্দরবাধা’ (পোর্ট রেসট্রিকশন) দিয়ে আটকে রাখতে পারবে না। তবে ত্রিপুরা থেকে চা রপ্তানির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যাতে যৌক্তিক মাশুল পায় তা নিশ্চিত করা দরকার।
দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান নৌ প্রটোকলের মাধ্যমে ভারতকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা থেকে খুলনা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-আশু গঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে; এরপর আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরার আগরতলায় পণ্য আনা-নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে চা আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুসারে, এ দেশে যত চা উৎপাদন হয়, এর চেয়ে বেশি ভোগ হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। দেশের ভেতরে চা ভোগ হয়েছে ৯ কোটি কেজি। আবার ওই বছর ৬৫ হাজার কেজি চা বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। এর মানে, বাংলাদেশকে চা আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়।
এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোজাডাঙ্গা হয়ে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গাড়ির চেসিস রপ্তানির সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর দিয়ে অপরিশোধিত চিনি রপ্তানির সুযোগ চায় ভারত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর হলো রপ্তানিনির্ভর স্থলবন্দর। এই বন্দর দিয়ে গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ২ লাখ ৯ হাজার ৯৬২ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর বিপরীতে আমদানি হয়েছে মাত্র ৯৯ টন।
২২শে সেপ্টেম্বর ২০১৯