প্রভাষ চৌধুরী,আরশিকথাঃ ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম শ্রমিক নেতা কমরেড সুব্রত সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি।শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই নাতিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শুক্রবার(১০ এপ্রিল) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আগরতলার আইএলএস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই নেতা। শুক্রবার(৩ এপ্রিল)সকাল সাড়ে ৬টায় ‘সেরিব্রাল অ্যাটাক’ হলে তাকে প্রথমে জিবি হাসপাতাল ও পরে আইএলএস হাসপাতালের ভেল্টিনেশনে রাখা হয়।
সবার কাছে ‘বড়দা’ নামে পরিচিত কমরেড সুব্রত সরকারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে। শুক্রবারই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে এই মহান নেতার।
সুব্রত সরকারের ছোট মেয়ে চন্দ্রিমা সরকার আবেগঘন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘শুনেছি কমরেডরা নাকি জন্ম লড়াকু হয়।আর সেটা দেখলাম গত আটদিন।কিভাবে লড়াই করতে হয়।তবে লড়াই যদি হয় জীবন মৃত্যুর তবে লড়াইটাও হয় বেশ কঠিন। জন্ম লড়াকু এই মানুষটার এই কঠিন লড়াই পাশে থেকে দেখলাম প্রতিমুহূর্তে।মানুষটি ছিলেন আমার বাবা।কিন্তু বহু মানুষের প্রাণের প্রিয় বড়দা।আট দিন টানা লড়াই শেষে আজ সকাল ৯,৪৫ অবশেষে বিজ্ঞান আর ঈশ্বরের কাছে হার মানলেন কমরেড বাবা।’
বড় মেয়ে শর্মিষ্ঠা সরকারও তার ফেসবুকে আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,‘বাবা তুমি আজ চলে গিয়ে আমাদের পিতৃহারা করে দিয়েছ ঠিকই কিন্তু চারিদিকে ছড়িয়ে গেছ তোমার গুনের ছোয়া। আমি শোকাহত হয়েও চারিদিকে তোমার সন্মান ও ভালোবাসা দেখে আমি তোমার মেয়ে বলে গর্বিত।বাবা তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো শুধু পর জন্মে আমাকে মেয়ে বলে কোলে তুলে নিও।’
ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সভাপতি মানিক দে বলেন, কমরেড সুব্রত সরকারের মৃত্যু একটা বিরাট ক্ষতি।বিশেষ করে শ্রমিক আন্দোলনে ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে।শ্রমিক ও তার জিবি এলাকাতে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অভিভাবক হিসেবে ছিলেন। যেকারণে তাকে সবাই ‘বড়দা’ বলেই ডাকতেন।সুব্রত সরকার বললে অনেকেই চিনতেন না। শ্রমিকদের সব আন্দোলনেই তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। সবাই তাকে মানতেন। আমাদের সংগঠনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আমি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।
মানিক দে আরো বলেন, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সালে অটোশ্রমিকদের ওপর পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদে অটো সংগঠন লাগাতার ধর্মঘটে যায়।দীর্ঘদিন এ ধর্মঘট চলার পরও সেখানে গিয়ে কোনো সমাধান তো হয়নি, উল্টো তাদের সাথে কোনো আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি।তখন কমরেড সুব্রত সরকার আমার সাথে যোগাযোগ করতেন।তারা যখন আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি, তখন শেষ পর্যন্ত বিনাশর্তে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।১৯৯৪ সালে ত্রিপুরা অটোরিকশা ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।সিআইপি রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন।নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।ভালো পোস্টার লিখতে পারতেন তিনি।অনেক গুণ ছিল তার।
কমরেড সুব্রত সরকারের আদিনিবাস ছিল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়। তার মৃত্যুতে ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম অনলাইন নিউজপোর্টাল আরশি কথা বাংলাদেশ লেখক ফোরাম শোক প্রকাশ করেছে। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ফোরামের সভাপতি ডি কে সৈকত ও সাধারণ সম্পাদক কেএ বিপ্লব।মৃতের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তারা।
১১ই এপ্রিল,২০২০
১১ই এপ্রিল,২০২০