আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    মান্যবর অ্যান্থেনিও গুতেরেস".... ঢাকা থেকে সিরাজুল ইসলাম মুনির

    আরশি কথা
    মান্যবর অ্যান্থেনিও গুতেরেস....

    আজ সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম
    সুসংবাদ শুনে,
    ঘরের দেয়ালে সাঁটানো টেলিভিশন
    অন হলো নিজে নিজে।
    রিমোট তো নেই বালিশের কাছে
    কাচের টেবিলে ওটা রাখা আছে।
    ঘুমের ঘোর আগেই কেটেছে
    উসুম-কুসুম জড়াজড়ি বিছানা-বালিশে।
    টিভি স্ক্রিনে মান্যবর অ্যান্থেনিও গুতেরেস
    তাঁর সুশ্রী ফর্সা মুখে মৃদু হাসি-
    বলছেন,বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদ
    পরাজিত কোবিদ নাইনটিন
    পৃথিবী থেকে তুলে নেয়া হলো লকডাউন-কোয়ারান্টিন।
    কী অবিশ্বাস্য সংবাদ!
    কালরাতেও মার্কিন মুলুকে ছাড়িয়েছে তেইশ হাজার;
    মুখটা মনে পড়ছে সংবাদ পাঠিকার।
    লিপস্টিক ঠোঁটে নির্ভয় বালিকা
    একেএকে শোনায় তন্বী, মৃত্যুর তালিকা।
    মুখের হাসিটা তার ধরা থাকে ঠোঁটের কোনে
    আজকাল তার চুলের ভাঁজে তোলেনা হৃদয়-আলাপন
    পার্লার বন্ধ করে চলে গেছে বিউটিশিয়ান।
    বিছানা থেকে গড়িয়ে নামি উৎফুল্ল প্রাণ
    ব্যালকনির খোলা হাওয়ায় দাঁড়ালাম
    ভোরের হাওয়া স্নিগ্ধ ;
    মৃদুমন্দ।
    ব্যালকনির ঝোলানো টবে একটা হলুদ ফুল;
    এই ভোরেই যেন পাপড়ি মেলেছে,
    সুগন্ধে করে ব্যাকুল।
    মিহি সমীরণ ছুঁয়ে দেয় চোখের পাতা
    চোখ চলে যায় পৃথিবীর প্রান্তসীমায় ;
    ওইতো ওখানে সূর্য উঠেছে রঙিন উষায়।

    সূর্য উঠেছে,গোল,লালরঙ তার
    তারই মাঝে বিস্তৃত স্নিগ্ধ হাসি অপার।
    আমি বিস্মিত! হৃদয়ে পুলক জাগায়
    ওমা একি! চাঁদটাও রূপার থালার মতো
    পাশে দাঁড়ায়।
    চাঁদের বুড়িটা কোথায়? পাকা চুল,চরকা?
    বুড়ি কোথায়, ও যে খুকি।  কী মিষ্টি!
    এসেছে ওরা দুজন-
    পৃথিবীর মানুষকে জানায় অভিবাদন।
    আজ লকডাউন খুলে গেছে
    আজ সব অভিশাপ মুছে গেছে
    মানুষের মুক্তির দিন এসে গেছে
    দুঃখের সময় বুঝি শেষ হয়ে গেছে।
    কতদিন মানুষের ভাষা শুনি নাই
    মুখর কথা শুনি চারপাশে -
    বাড়ির জানালাগুলো খুলে গেছে
    ঝুল বারান্দায় মানুষ হাসে;
    হাত নেড়ে জানায়, শুভ সকাল
    আমারও অভিবাদন,শুভ সকাল।
    আকাশ দেখলাম, চৈত্রের আকাশ, এমন সুন্দর মনোহর
    সমুদ্রটা উল্টে দিয়েছে কেউ, যেন নীল সাগর।
    গাছগুলো, পাতাগুলো কখন সবুজ হলো
    রঙিন পাখা মেলে ওড়ে  ভোরের পাখিগুলো;
    আশ্চর্য!  সবকিছু এমন বদলে গেছে!
    মান্যবর গুতেরেস, কী মোহন বাঁশি বাজালেন!
    সবকিছু যে বদলে গেছে।
    মান্যবর গুতেরেসকে ধন্যবাদ জানাতে
    ঘরে ফিরলাম ;
    পর্দায় তিনি নেই,প্রকৃতির ছবি চলমান-
    এখন সমুদ্রতীর, বালুচরে আছড়ে পড়ে ঢেউ, ফেনিল পানি-
    মৃদুলয়ে,সাদা মুক্তোর দাঁতে চুমে দেয়  বেলাভূমি।
    দূর সমুদ্র,দূর আকাশ - একাকার মিলেমিশে
    আনন্দে মাতোয়ারা ডলফিন-শুশুকেরা নাচে উল্লাসে।
    টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে কত শহর বন্দর
    মিলান,মাদ্রিদ, তেহরান,উহান
    বার্লিন,নিউইয়র্ক, সিউল, লন্ডন
    ঢাকা-দিল্লি,  অচেনা নগর।
    এখন আর অচেনা নয় কোনো রাজপথ
    প্রতিদিন দেখে দেখে চেনা হয়ে গেছে
    বিরান জনপদ
    আজ চলমান আছে হাজার গাড়ির বহর
    মাঝে মাঝে মানুষের মুখ,উচ্ছল আনন্দমুখর।
    মানুষ, সাদা মানুষ, কালো মানুষ, বাদামি ও হলুদের ঢেউ
    মানুষের এমন খুশিভরা মুখ দেখেনি  আগে কেউ।
    এই তো আমাদের ঢাকা এসে গেছে, আমাদের রাজধানী,
    চোখ ফেরানো যায় না,সুন্দর! উপরে  সবুজ বৃক্ষের ছাউনি ;
    ঢাকাকে আগে এমনতো দেখিনি
    সুশৃঙ্খল, কেতাদুরস্ত
    পথচলা মানুষগুলো হাসিখুশি প্রাণবন্ত
    মানুষেরা হাঁটে ফুটপাত ধরে গাড়ি চলে রাস্তায়
    ট্রাফিক পুলিশ ছায়ায় দাঁড়িয়ে অলস সময় কাটায়।
    টিভির পর্দায় লাইভ কাস্ট, চলমান বিশ্ব
    উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণে -
    টাইমজোনগুলো একাকার হয়ে গেছে
    পূর্র থেকে পশ্চিমে
    জেট ফাইটারগুলোর কাজ বদলে গেছে আজ
    লাইভ ছবি পাঠানোই যেন ওগুলোর কাজ।
    সমুদ্রের তলদেশ থেকে ভেসে উঠেছে  অতিকায় সাবমেরিন
    মানুষ যাবে সমুদ্রতলে, দেখবে আরেক বিশ্ব-রঙিন;
    বিমানবাহী রণতরীগুলো মাস্তুলে তুলেছে সাদা পতাকা
    পর্যটন হবে সমুদ্রে,আর যুদ্ধ নয়, মানুষের  তরে শান্তির বারতা।
    টিভির পর্দায় ভেসে উঠেছে শিশুদের কোলাহল,হাজার মুখ স্বপ্নময়
    বর্ণিল পোশাকে সেজেছে সবাই
    তারা বলে, আমরা করব জয়..
    ওরা একসুরে গায়: উই স্যাল ওভারকাম
    আবার আলাদা করে গায়, নিজের ভাষায় -
    আমরা করব জয়
    আমরা করব জয়, নিশ্চয়
    আহা! বুকের গভীরে আছে প্রত্যয়
    আমরা করব জয়, নিশ্চয়।... ...
    উই স্যাল ওয়াক হ্যান্ড ইন হ্যান্ড
    উই স্যাল ওয়াক হ্যান্ড ইন হ্যান্ড
    উই স্যাল ওয়াক হ্যান্ড ইন হ্যান্ড, সাম ডে।
    আশ্চর্য! ওখানে আমি আমাকেও দেখতে পাচ্ছি
    ছয় বছরের মিষ্টি একটি ছেলে,
    আমার পাশে বেনি দোলানো আমারই মেয়ে
    আমরা দুজন এককন্ঠে গাইলাম-
    আমরা করব জয়
    একদিন….
    জেটগুলো আজ মনের আনন্দে ওড়ে পৃথিবীর আকাশে
    যেভাবে ফড়িংয়েরা ওড়ে বিকেলের মাঠে
    টিভির পর্দায় জেট থেকে পাঠানো ছবি হচ্ছে টেলিকাস্ট-
    নীলগিরি দেমাগিরি হয়ে ডাললেক
    তারপর বসফোরাস হয়ে হাজার দ্বীপ
    ক্রেমলিন হয়ে পিরামিড,
    হালং বে,মাচুপিচি, আলেপ্পো, ফুজি পর্বত;
    সোমোলাংমা, হাওয়াই অতঃপর  ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত।
    পৃথিবীর দেশগুলো, ভাষাগুলো একটি রঙিন সুতোয়
    গেঁথে দিয়েছেন কোন্ সে মালী
    তাঁকে আজ খুঁজি প্রিয় গুতেরেস;
    কী সে-ই ওঙ্কার,শব্দমালা:
    সে কি 'মানবতা'  মানবের জপমালা।
    হঠাৎ 'দুপ' করে এক শব্দ হলো-
    টিভির পর্দায়  ঝিরিঝিরি আলো ;
    এরপর আলো চলে যায়,টিভির পর্দার
    ওখানে কেবল গভীর গভীরতর অন্ধকার।
    কাচের টেবিলে রাখা রিমোটের লাল পাওয়ার বাটন
    ছুঁয়ে দিতেই আছড়ে পড়ে আলোর প্রতিফলন;
    আলোর কণাগুলো মিলেমিশে ছবি বানায়
    কালরাতের ছবিগুলো চলে টিভির পর্দায়।
    পুনঃপ্রচার চলছে বাসি খবরের-
    স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ, মৃতের হিসাব মানুষের।
    মান্যবর অ্যান্থেনিও গুতেরেস,আপনি বিশ্ব পিতা;
    কখন শোনাবেন মানুষের মুক্তির বারতা?


    --সিরাজুল ইসলাম মুনির,ঢাকা

    ২০শে এপ্রিল ২০২০
    3/related/default