Type Here to Get Search Results !

বাংলাদেশ থেকে নৌপথে পণ্য যাবে ত্রিপুরায় ॥ ত্রিপুরার জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত বললেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব

আবু আলী, ঢাকা,আরশিকথা  ॥
কুমিল্লার সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বাণিজ্য চলত নৌপথেই। এক দেশ ছিল বলেই নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্য তখন সহজ ছিল। কিন্তু দেশভাগের পর আন্তর্জাতিক সীমান্তের গ্যাঁড়াকলে পড়ে পরবর্তীকালে তা আর সম্ভব হয়নি। তবে সড়কপথে বাণিজ্য চলছে। নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরা কাটছে এবার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার সঙ্গে প্রথমবারের মতো নৌপথে বাণিজ্য সুবিধা তৈরি হয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গোমতী নদী দিয়ে ত্রিপুরার সোনামুড়া পর্যন্ত এই নতুন নৌপথ চালু হচ্ছে। সেখান থেকে সড়কপথে ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাবে পণ্যের চালান। আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই পথে পরীক্ষামূলক চালান নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে এই নৌপথ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সড়কপথে ত্রিপুরায় সিমেন্ট রপ্তানি করে। ২৪ আগস্ট বিআইডব্লিউটিএ অনুমতি দিয়েছে।
এমন সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন ত্রিপুরা রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তার ভেরিফাইড ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ গোমতী নদী হয়ে দাউদকান্দি (কুমিল্লা) থেকে সোনামুড়া পর্যন্ত জলপথ যাত্রা চালুর অনুমতি দিয়েছে। ট্রায়াল রানটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্ধারিত হয়েছে, এই সময়ে ৫০ মেট্টিক টন সিমেন্ট ঢাকা থেকে সোনামুড়ায় যাবে। ইতিহাসে এটিই প্রথম যে কোনও ধরণের পণ্য জাহাজে করে ত্রিপুরায় পৌঁছাবে। আমি প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী মনসুখ মন্দাভিয়া জি ও বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
বিআইডব্লিউটিএর সূত্রমতে, দাউদকান্দি থেকে গোমতী নদী দিয়ে মুরাদনগর, দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, কুমিল্লা সদর ও বিবিরবাজার হয়ে সোনামুড়ায় পণ্য নেওয়া হবে। সেখান থেকে সড়কপথে পণ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় যাবে। দাউদকান্দি থেকে সোনামুড়ার দূরত্ব ৯২ কিলোমিটার। এটি কোনো ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নয়। এটি মূলত দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পণ্য আমদানি-রপ্তানির রুট হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে। সেখানে রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী দরকার। আমাদের সামনে এ ধরনের নির্মাণসামগ্রী রপ্তানির বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। সড়ক বা রেলপথের চেয়ে নৌপথে পণ্য পরিবহন তুলনামূলক সাশ্রয়ী। তাই প্রস্তাবিত নৌপথটি ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশের নির্মাণসামগ্রী মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নৌপথের বড় সমস্যা হলো নদীর নাব্যতা ও কম উচ্চতার সেতু। বড় বড় কার্গো জাহাজ চলাচল উপযোগী করতে নৌপথগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে।
বিআইডব্লিউটিএর একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি নৌপথটি পরিদর্শন করেছে। দলটি এই পথে কী ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করতে পারবে, নদীর নাব্যতা কতটা আছে, পণ্য পরিবহনে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, কী ধরনের অবকাঠামো সুবিধা লাগবে—এসব পর্যবেক্ষণ করে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভারতেরও আগ্রহ থাকায় এই নৌপথ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গোমতী নদীর নাব্যতা খুবই কম। তিন থেকে সাড়ে তিন ফুটের বেশি ড্রাফটের নৌযান চলাচলের উপযোগী নয়। এর মানে, বড় পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করা সম্ভব নয়। ফলে একটি নৌযানে খুব বেশি পণ্য আনা–নেওয়া করা যাবে না। এ ছাড়া গোমতী নদীর ওই পথে ২৩টি কম উচ্চতার সেতু আছে। ফলে সেতুর নিচে দিয়ে বড় নৌযান চলাচল করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ প্রটোকলের আওতায় নৌপথে বাণিজ্য হয়। নৌ প্রটোকলের আওতায় আগে কখনো ত্রিপুরার সঙ্গে সরাসরি পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি। তবে কলকাতা থেকে এ দেশে ফ্লাই অ্যাশ, ক্লিংকার, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আসে। একইভাবে বাংলাদেশ থেকেও নানা পণ্য যায়। ত্রিপুরার সঙ্গে নৌপথে বাণিজ্য শুরু হলে সার, সিমেন্ট, খাদ্যপণ্য, কৃষিপণ্য রপ্তানির সুযোগ বাড়বে। এ ছাড়া ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে নৌ প্রটোকলের আওতায় কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে; পরে সড়কপথে আখাউড়া হয়ে আগরতলায় রড, খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য যায়। ওই পণ্য অবশ্য ভারতীয়।
ত্রিপুরাসহ ভারতের ওই অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সড়ক, নৌ ও রেলপথের উন্নয়ন করতে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে সরকার। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। আবার আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করতে ১১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বারইয়ার হাট থেকে রামগড় সীমান্ত পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্ত করা হচ্ছে।

২৪শে আগস্ট ২০২০


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.