আবু আলী,ঢধাক, ২৬ জানুয়ারি।।
বাংলাদেশে বিনামূল্যে দেয়া হলে ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী। আর ১৬ শতাংশ আগ্রহী না। কোভিড-১৯ টিকার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার বিকেলে ওয়েবিনারের আয়োজন করে জরিপের প্রাথমিক ফলাফল জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, কোভিড ১৯ টিকা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, গ্রহণযোগ্যতা এবং চাহিদা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সিটিউটের অর্থায়নে ১০ থেকে ২৫ জানুয়ারি এই জরিপ চালানো হয়। দেশের ৮ টি বিভাগের ৮ টি জেলা ও ১৬ টি উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের জনসমাগম বেশি হয় এমন জায়গায় সিস্টেমেটিক দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে ৩৫৬০ জন মানুষের উপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া জরিপে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় থানাসমুহে জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয়।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, দেশের ৫২ শতাংশ মানুষ এই মুহুর্তে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আগ্রহী নন।টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েকমাস অপেক্ষা করে টিকা নিতে চান তারা। অপরদিকে টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু হয়ার সাথে ৩২ শতাংশ লোক টিকা নিতে আগ্রহী। আর ১৬ শতাংশ কখনই টিকা নিতে চান না।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, বিনামূলে দেওয়া হলে দেশের ৮৪শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আগ্রহী। তবে সবাই এই মুহুর্তে টিকা নিতে চান না। যারা এই মুহুর্তে নিতে চায় না তাদের ৫৪ শতাংশ টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ৩৪ শতাংশ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত এবং ১২ শতাংশের মাঝে আমদানি করা টিকার গুনগত মান নিয়ে সন্দেহ আছে। যারা একেবারেই নিতে চান না, তারা টিকার মান ও কার্যকারিতা এবং বিরুপ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াকে মুল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও ৮৪শতাংশ মানুষ টিকা নিতে চান, তবে অর্থের বিনিময়ে ৬৬ শতাংশ টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।এছাড়া বয়স্কদের(৬০ বছর ও তদুর্ধ) মাঝে টিকার ব্যাপারে উৎসাহ কিছুটা কম (৭৮ শতাংশ)।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৪.৪ শতাংশ লোক বলেছেন তাদের পরিবাবের লোকজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এটাও দেখা গেছে যে, যাদের পরিবারে লোকজন আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের মাঝে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম। শরীরে এন্টিবডি তৈরি হওয়া এবং করোনাভাইরাস ভীতি কমে যাওয়াটাকে প্রধান কারণ হিসেবে গবেষক দল মনে করেন।
জরিপে দেখা যায়, শহরের চেয়ে গ্রামের লোকদের মাঝে টিকা নেওয়ার আগ্রহ বেশী। তবে টিকাদান কর্মসুচি চালুর সাথে সাথে টিকা নেওয়ার আগ্রহ বিষয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। বিভাগগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। তবে বিনামূল্যে দেওয়া না হলে এই সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। কিন্তু ঢাকা সিটিতে টিকা নেওয়ার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম (৭২%)। পুরুষ ও মহিলা, বিভিন্ন পেশার লোকদের মধ্যেও এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মতামতের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন মহিলাদের মাঝে টিকা গ্রহণে আগ্রহীর সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় বেশি। বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হলে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে উচ্চ আয়ের জনগণের মধ্যে তুলনায় টিকা গ্রহণ করার আগ্রহ বেশী দেখা যায়। তবে যদি বিনামুল্যে না দেওয়া হলে নিম্ন আয়ের জনগণ তুলনামুলকভাবে অনেক কম নিতে চায়।
টিকার গ্রহণযোগ্যতা ছাড়াও জরিপে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, টিকার উপকারিতা নিয়ে মানুষের ভাবনা, টিকা নেওয়ার উপকারিতা বা চ্যালেঞ্জসমুহ নিয়ে জনগণের মতামত নেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, বেশির ভাই লোকই টেলিভিশনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বিষয়ক তথ্য পেয়ে থাকেন। যদিও গ্রাম ও শহরের মধ্যে একটা ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। শহরের বেশির ভাগ মানুষই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোভিড-১৯ বিষয়ক তথ্য পেয়ে থাকেন। আর গ্রামের জনগণ প্রধানত টেলিভিশনের মাধমে তথ্য পেয়ে থাকেন।
জরিপের ফলাফলে টিকার বিষয়ে জনগণের সংশয় দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, যেহেতু একেক পেশার মানুষ একেক উৎস থেকে করোনা বিষয়ক তথ্য পেয়ে থাকে, সরকারের প্রচারও তা বিবেচনায় রেখেই করা উচিত। বিশেষ করে দেশের একটা বিরাট অংশ এখনই টিকা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়, তাই মানুষের মধ্যে যে দ্বিধা ও সংশয় আছে, তা দূরীকরণে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেক টিকার কিছু স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। সে বিষয়ে জনগনকে সতেচন করা ও কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়া হলে তা বিষয়ে জনগনকে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে অবহিত করা দরকার।
অন্যদিকে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে 'ভ্যাক্সিন মডেলিং’য়ের মাধ্যমে কখন কী পরিমান টিকা আমদানি করলে বিদ্যমান স্টোরেজ সাথে সংগতিপূর্ণ হয়, সে অনুযায়ী টিকা আমদানি করার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়।কার্যকরী সিঙ্গেল ডোজ টিকা বাজারে আসলে, তা আনার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।
ওয়বেবিনারে অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন,টিকা সরকারিভাবে দেওয়া উচিত।প্রাইভেটের কাছে এখন তা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। টিকা নিয়ে মানুষের মাঝে যে সংশয় আছে, তা দূর করতে হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে টিকার রেজিস্ট্রেশনে জটিলতা আছে। যেহেতু এন্আইডির মাধ্যমে টিকা নিতে হচ্ছে, সেখানে অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন পড়ছে না। এনআইডি দেখিয়ে সরাসরিই টিকা দেওয়া যেতে পারে।
গবেষণা দলে অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ছাড়াও সরকার নিয়োজিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা দলের সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাংকট ফ্যাকাল্টি ড. মোফাখার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. নাসরিন সুলতানা, একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল যুক্ত ছিলেন।