Type Here to Get Search Results !

ভারতে নারী পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ॥ একাই হাজারের বেশি নারীকে পাচার করেছেন মেহেদি

আবু আলী ঢাকা, আরশিকথা ॥

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরার দাবকপাড়া কালিয়ানী এলাকা থেকে ভারতে নারী পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভারতে পাচার হওয়া এক কিশোরী সম্প্রতি দেশে ফিরে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেছেন। এরপর ওই মামলায় তিনজনকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মেহেদি হাসান বাবু (৩৫) মামলার বাদী ওই কিশোরীসহ এক হাজারের বেশি নারীকে ভারতে পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ। সম্প্রতি বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ভারতে নারী পাচার হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভারতে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের সে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে হাতিরঝিল থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছেন তরুণীটির বাবা। তিনি মামলায় বলেছেন, তাঁর মেয়েকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর কথা বলে ভারতে নিয়ে যান রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় (২৬)। সেই আলোচিত ঘটনার পর এবার আরেকজন কিশোরী পালিয়ে এসে নিজেই হাতিরঝিল থানায় মামলাটি করেছেন। ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলাটি করা হয়। গত রাত সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়া কালিয়ানী এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে ভারতে পাচারের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে নারী পাচারের কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, একটি ডায়েরি, চারটি মুঠোফোন ও একটি ভারতীয় সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এ মামলার ১২ আসামীর মধ্যে গ্রেপ্তার তিনজনসহ মোট পাঁচজন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছে পুলিশ। বাকিরা ভারত থেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। বাংলাদেশের পাঁচজনের মধ্যে গ্রেপ্তার তিন আসামীর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওতে অভিযুক্ত রিফাদুল ইসলামের যোগসাজশ পেয়েছে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাচারে জড়িত তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন— মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের। এ সময় পাচারের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, একটি ডায়েরি, চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ভারতীয় সিম কার্ড পাওয়া গেছে।’ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘হৃদয় বাবুর মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা পাচারের শিকার আরেক নারীর সন্ধান পেয়েছি। তিনি ভারতে পাচারের পরে তিন মাস বন্দিদশায় ছিলেন। সেখানে থেকে পালিয়ে আসেন। গতকাল তিনি হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭, ৮, ১০ ও ১১ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ৩। ওই মামলার এজাহারনামীয় ১২ আসামির মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ইতোমধ্যে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন ‘মেহেদী হাসান বাবু মামলার বাদীসহ এক হাজারের বেশি নারীকে পাচারে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তিনি প্রায় আট বছর ধরে মানব পাচারে জড়িত। তার কাছ পাওয়া মোবাইল ও ডায়েরিতে হৃদয় বাবু, সাগর, সবুজ, ডালিম ও রুবেলের ভারতীয় মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, পাচারের শিকার ও পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। অন্য দুই আসামি মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের পাঁচ শতাধিক নারীকে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশকালে এক রোহিঙ্গাসহ ৯ বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিজিবি। সাতক্ষীরা সীমান্তের কাকডাংগা, তলুইগাছা ও মাদরা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। বুধবার দুপুর ২টায় সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির দফতর থেকে এ তথ্য জানানো হয়। আটকরা হলেন কলারোয়ার জালালাবাদ ইউনিয়নের শিংলালবাট্টা গ্রামের মোমিন সরদার (২৫), ভাদিয়ালী গ্রামের আতিকুল ইসলাম (২৭), সদর উপজেলার কুলিয়া গ্রামের শাহাজাহান বিশ্বাস (৩৭), তার স্ত্রী আরিফা বেগম (২২), মুকন্দপুর গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের ছেলে আবির আলী (১৬) ও আসিফ (১৪)। এছাড়া কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের মৃত নাজির হোসেনের ছেলে রফিক (৪১), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার পেরুলী গ্রামের মাহবুব শেখ (২৫), জামিলডাঙ্গা গ্রামের কুরছিণা বেগম (৩২), যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার ছাবরা রায়পাড়া গ্রামের মরিয়ম বেগম (৩৫)। সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল-মাহমুদ জানান, অবৈধভাবে ভারত থেকে দেশে প্রবেশকালে তাদের আটক করা হয়েছে। করোনার ভারতীয় ধরন প্রতিরোধে তাদের কালীগঞ্জ উপজেলার নলতায় আহসানিয়া মিশনে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধায়নে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ

২রা জুন ২০২১
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.