কারাগারে থাকা মামুনুল হকসহ ‘বিতর্কিত’ নেতাদের বাদ দিয়ে ৩৩ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। নতুন কমিটিতে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীর ও নুরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব করা হয়েছে। পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করা ও নতুন কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দিতে কোনো রাজনৈতিক চাপ ছিল না বলে জানিয়েছে সংগঠনটিন নেতৃবৃন্দ। সোমবার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতায় দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছিল হেফাজতে ইসলাম। শীর্ষ নেতাদের একের পর এক গ্রেপ্তারের ঘটনার মধ্যেই মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়েছিল কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটি। ছয় সপ্তাহ পর নতুন যে কমিটি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলামী, তাতে মামুনুল হকসহ বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিটি ঘোষণার মঞ্চে এ নিয়ে প্রশ্ন ছুটে গেলেও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। তবে সাংগঠনকিভাবে কারাগারে থাকা সাবেক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি। নতুন কমিটিতে সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে প্রয়াত আমীর আহমদ শফীর ছেলে ইউসুফ মাদানীকে। এছাড়াও জেলা কমিটির নেতৃত্বে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের রাখতে বলেছে হেফাজতে ইসলাম। কমিটিতে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল হক (সিলেট), মাওলানা আবদুল কুদ্দুসসহ (ফরিদাবাদ) কয়েকজনকে নায়েবে আমির করা হয়েছে। যুগ্ম মহাসচিব পদে এসেছেন- মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়নগঞ্জ) ও মাওলানা লোকমান হাকিম। সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা মীর ইদ্রিস। কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন- সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহারসহ নানা ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া হেফাজতের নেতারা। একইভাবে আল্লামা আহমদ শফীর হত্যা মামলার অভিযুক্ত নেতাদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে কমিটি থেকে। এছাড়া সদ্য বিলুপ্ত কমিটিতে একক আধিপত্য বিস্তারকারী ‘রাবেতা’ ও ‘জমিয়ত’ সিন্ডিকেটও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীসহ শফী অনুসারী কাউকে রাখা হয়নি। প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। এসব নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত এক ডজন হেফাজত নেতা গ্রেফতার রয়েছেন। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।
আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ
৭ই জুন ২০২১