বুধবার মহালয়া। অর্থাৎ পিতৃপক্ষের শেষ মাতৃপক্ষের সূচনা। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে হয়ে থাকে মহালয়া। মহান মুহূর্তের আশ্রয় থেকেই এই শব্দের উৎপত্তি। পুরান, শাস্ত্র ও আভিধানিক ক্ষেত্রে এই শব্দের ভিন্ন অর্থ পাওয়া যায়। এই দিনে প্রয়াতদের আত্মাদের মর্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আত্মাদের যে সমাবেশ হয় তাকেই মহালয়া বলা হয়ে থাকে। তাই এই তিথিতে তর্পণ করা হয়। অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের করা হয় জলদান।
এদিন ভোরে যখন ঘরে ঘরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী বাজতে থাকে তখনই অগণিত মানুষ পিতৃপুরুষদের তর্পনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন। একসময় আকাশবাণীতে অর্থাৎ রেডিওর মাধ্যমে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী শোনার জন্য মানুষ সারা বছর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকতেন। যদিও এখন দিন বদলে গেছে। এন্ড্রয়েড মোবাইল আর ইন্টারনেটের দৌলতে মানুষ যেকোনো সময়ই তা শুনতে পারেন। মহালয়ার ভোরে পদযাত্রার রেওয়াজ রয়েছে।এখানে অনেকেই সারাবছর প্রাতঃভ্রমণ না করলেও মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে ঠিক বের হয়ে পড়েন। তবে মহালয়ার দিনটি শুভ না অশুভ তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত সমাজ। পঞ্জিকায় শুভ দিন বলে কিছু উল্লেখ থাকে না। বলা হয় শুভক্ষণ অর্থাৎ শুভ সময়। শাস্ত্র মতে যেহেতু এই দিনে পৃথিবীতে পূর্বপুরুষদের জল দান করা হয় তাই এই তিথিকে অশুভ বলাও ঠিক নয়। অমাবস্যায় অনেক তান্ত্রিক, জ্যোতিষরাও কালো জাদু, তাবিজ-কবজ ইত্যাদি করে থাকেন। এই দিনটিকে যুবতী কিংবা মহিলাদের, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের অনেকেই সাবধানে চলাফেরা করার বিধান দেন। সব মিলিয়ে বলা যায় এই দিনটির মাহাত্ম্য কিন্তু নানা দিক দিয়েই রয়েছে। মহালয়াই জানান দেয় দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে গেছে, মা এসে গেছেন। নবরাত্রি পূজা প্রতিপদ তিথি থেকেই শুরু হয়ে যায়। পুরান ও শাস্ত্রমতে অন্ধকার থেকে আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার এই সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সুমিত কুমার সিংহ
৬ই অক্টোবর ২০২১