আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    আজ মহালয়া " ......মহালয়ার পুণ্যলগ্নে আরশিকথার প্রতিবেদনঃ সুস্মিতা ধর

    আরশি কথা



    ক্যালেন্ডারের পাতা আর পঞ্জিকার হিসেব বলছে আর ছয় দিন বাকি মা দুর্গার বোধনে। আর সেই দিন থেকেই বাংলা আর বাঙালি মেতে উঠবে মায়ের আরাধনায়।  কিন্তু সেই চূড়ান্ত উৎসবের শুরুর আগেই আনন্দ - উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গেল আজ থেকেই।  কারণ  আজ মহালয়া। 

    শরতের কাকভোর। চারটে বাজতে না বাজতেই বাঙালির ঘরে ঘরে বেজে ওঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠ।

    " আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর;

    ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা 

    প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী

    জগন্মাতার আগমনবার্তা।"----

    সারা বছর বাঙালির ভোরে ঘুম থেকে ওঠার শপথ নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু মহালয়ার ভোরে ঘুম থেকে উঠে রেডিও - তে চলা স্তোত্র পাঠে কান পাতাটা বাঙালির অন্যতম অভ্যাস। মহালয়ার এই দিনেই সরব হয় বাড়ির এককোণে বছরভর অবহেলায় পড়ে থাকা রেডিওসেটটি।   শিশির ভেজা বাতাস উদাত্ত কন্ঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ  ভদ্রের স্তোত্র পাঠকে বয়ে নিয়ে ছড়িয়ে দেয় দূর থেকে দূরান্তরে। ঘুম ভাঙে মঙ্গল শঙ্খ ধ্বনি, আগমনীর সুর আর চন্ডীপাঠে।


    মহালয়া হল একটি তিথি। পিতৃপূজা আর মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন। পিতৃপক্ষের অবসান আর দেবীপক্ষের সূচনার সন্ধিলগ্নই হল মহালয়া।  পিতৃপক্ষকে হিন্দুশাস্ত্রে অশুভ বলে চিহ্নিত করা হয়। কারণ এই সময়কালে মৃত্যুর অনুষ্ঠান করা হয়। 


    পূর্বপুরষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং পরিবারের মৃত সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় হিন্দুরা পালন করে পিতৃপক্ষ।  ভ্রাদ্র মাসের পূর্ণিমা থেকে পরবর্তী অমাবস্যা  পর্যন্ত সময়কালই হল পিতৃপক্ষ। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী মৃত্যুর পর   স্বর্গে ভোজনসামগ্রী হিসেবে  কর্ণ কে   দেয়া হল  মূল্যবান রত্ন এবং সোনা। বিস্মিত কর্ণ এর কারণ জানতে চাইলে দেবরাজ ইন্দ্র বললেন যে ----" তুমি তোমার জীবদ্দশায় শুধুমাত্র স্বর্ণ দান করে গেছ। কখনও শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তোমার পূর্বপুরুষ কে অন্ন এবং জল দান করনি। তাই ভোজনসামগ্রীর পরিবর্তে  তোমাকে স্বর্ণ দেয়া হচ্ছে। "  কর্ণ দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইলেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র এই ত্রুটি সংশোধনের উদ্দেশ্যে কর্ণকে  পনের দিনের জন্য পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসার অনুমতি দিলেন। যাতে কর্ণ তার পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানাতে পারে এবং তাদের জল ও খাদ্য দান করতে পারে। পনের দিনের এই সময়কালই হল পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনায় পূর্বপুরুষের প্রতি তর্পণ  জানানোর দিন হল মহালয়া। কারো কারো মতে শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কাজয়ের আগে এমনটাই করেছিলেন। সেখান থেকেই আসে তর্পণের ভাবনা। পিতৃতর্পণের মাধ্যমে পিতৃপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রণাম নিবেদন  হয় মহালয়ায়। 

    পুরাণ কাহিনিতে আছে মহালয়াতেই হয়  দুর্গা - প্রতিমার চক্ষুদান । অর্থাৎ মায়ের মৃণ্ময়ী ও চিন্ময়ী রূপের সৃষ্টির কাল এটি। দুর্গাপূজা এবং নবরাত্রিকে ঘিরে যে উৎসবের মেজাজ তারও সূচনা মহালয়ার হাত ধরেই। এই তিথির সাতদিনের মাথায় দুর্গা মায়ের অকাল বোধন।  পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী মহিষাসুরমর্দিনীর সৃষ্টি ব্রক্ষ্মা - বিষ্ণু  - মহেশ্বরের তেজঃ থেকে  মহিষাসুরের দমনের জন্য। মহিষাসুর বধের পর সপরিবারে সেই বিজয় উৎসব পালনের জন্যই মা দুর্গার পিতৃগৃহে আগমন।  আর জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার পিতৃগৃহে আগমন ধ্বনিত হয় এই মহালয়ার পুণ্যলগ্নেই।  অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা, মহিষাসুরমর্দিনী মাতৃবন্দনার সূত্রপাত, উৎসবের আমেজ আর আশ্বিনের মাঠে কাশফুলের দোলা -- সব মিলিয়ে অসামান্য এক অনুভবের নাম মহালয়া।


    সুস্মিতা ধর 

    পরিচালক

    আরশিকথা গ্লোবাল ফোরাম


    আরশিকথা হাইলাইটস


    ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট

    ৬ই অক্টোবর ২০২১


     

    3/related/default