১ অক্টোবর ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ কুমিল্লা শহরে অধুনা বাংলাদেশে মা নিরুপমা দেবী আর পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণের কোল আলো করে জন্ম নিলেন সংগীত জগতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক শচীন দেববর্মণ, আমাদের সবার প্রিয় শচীনকর্তা।শরীরে রাজ রক্ত কেননা তাঁর পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ ছিলেন ত্রিপুরার রাজা ঈশানচন্দ্র মাণিক্যের পুত্র। ঈশানচন্দ্রের মৃত্যুর পর বৈমাত্রেয় ভাই উপেন্দ্র চন্দ্রের গোপন ষড়যন্ত্রে নবদ্বীপ দেববর্মণ প্রাণে বাঁচতে রাজ মহল ছেড়ে কুমিল্লায় আশ্রয় নেন। সেখানেই সংগীতের যাদুকর শচীনকর্তার জন্ম। পিতা নবদ্বীপ ছিলেন একাধারে সুদক্ষ গায়ক, দক্ষ সেতার বাদক, সাহিত্যিক ও মৃৎ শিল্পী আর মাতা নিরুপমা দেবী মণিপুরী কন্যা ধর্মেকর্মে নিষ্ঠা এবং নাচে গানে পারদর্শিনী। শচীন কর্তার মধ্যে পিতা মাতা উভয়ের শিল্পসত্বা যথেষ্ট পরিমানেই বিদ্যমান ছিল। তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সংগীত সাম্রাজ্যের মধ্যমণি।
খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবল, টেনিসেও তাঁর যথেষ্ঠ আগ্রহ ছিল এবং নিজে খেলতেন। ইস্টবেঙ্গলের অন্ধ সমর্থক ছিলেন। তাঁর টেনিস খেলার সঙ্গী ছিলেন সিনেমা জগতের প্রখ্যাত শিল্পী প্রমথেশ বড়ুয়া। ফুটবলের মাঠে নিজে ফরওয়ার্ড এ খেলতেন। আই. এফ. এ. থেকে ডাক পেয়ে ছিলেন কলকাতার মাঠে রেফারিগিরি করার জন্য।
কলকাতায় বেতারে প্রথম গান গেয়ে পেয়েছিলেন দশ টাকা। প্রথম রোজগার , এ যেন লাখ টাকারও বেশী, কারণ বেতারে গানের পরই চারদিকে সাড়া পরে গেল। কিন্ত্তু কলকাতায় সংগীত পরিচালক হিসাবে স্বীকৃতি না পেয়ে মনে ক্ষোভ নিয়ে চলে আসেন মুম্বাই । তারপরই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। মুম্বাইয়ে দারুন ভাবে প্রতিষ্ঠা পেলেন শচীনকর্তা। ভারত সরকারের "পদ্মশ্রী" সহ বহু পুরস্কারে তিনি সন্মানিত হয়েছেন। বিদেশেও পেয়েছেন অসংখ্য সন্মান! বিখ্যাত সংগীত পরিচালক রাহুল দেববর্মণ তাঁরই সুযোগ্য পুত্র।
তিনি বেশ গর্বের সঙ্গে বলতেন " আমার সুর সৃষ্টি সমগ্র ভারতবাসীর সম্পদ। আমার সুর ভারতবর্ষের প্রতীক" ।
১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর ত্রিপুরার এই মহান কৃতি সন্তান মহালোকে পাড়ি দেন। জন্ম মাসেই জীবনের ইতি টানেন।
আজ তাঁর শুভ জন্মদিনে তাঁর পাদপদ্মে সশ্রদ্ধ পুষ্পাজ্ঞলি॥
সসীম আচার্য, সহ-সম্পাদক
সংস্কৃতি - বিনোদন বিভাগ
আরশিকথা গ্লোবাল ফোরাম
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১লা অক্টোবর ২০২১
----------------