Type Here to Get Search Results !

আমার আপনার ২৬শে জানুয়ারী ঃ গীতাপ্রিয়া ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা

ছাব্বিশে জানুয়ারী।  মহাসমারোহে আমরা পালন করি প্রজাতন্ত্র দিবস। কারন ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী থেকেই কার্যকরী হয়েছিল আমাদের সংবিধান।  আর এই দিনটি  থেকেই "সোভেরেইন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক " রূপে আত্মপ্রকাশ আমাদের মাতৃভূমি ভারতবর্ষের। পৃথিবীর আন্তর্জাতিক মঞ্চে আজকে যে স্থান অধিকার করে আছে ভারতবর্ষ, তার যাত্রা শুরু হয়েছিল এই দিনটি থেকেই। 

এছাড়া এই ২৬ শে জানুয়ারী তারিখটির আর কি কোনো উল্লেখযোগ্যতা আছে?  আছে অবশ্যই আছে।  দেশে ভারতীয় সংবিধান লাগু হবার ঠিক একুশ বছর আগে ১৯২৯ সালে এই একই দিনে জাতীয় কংগ্রেসের তরফ থেকে প্রথমবার ভারতের পূর্ণ স্বরাজের দাবী জানানো হয়। পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন আইন অমান্য আন্দোলনে ১৯৩০ সালের ২রা জানুয়ারী কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যে, আগামী ২৬শে জানুয়ারী দিনটিই উদযাপিত হবে ভারতের স্বাধীনতা দিবস রূপে।  ঐ দিন ভারতবর্ষের সর্বত্র এ ব্যাপারে সাড়া পাওয়া গিয়েছিল ব্যাপক। ভারতের প্রতিটি শহরে, প্রতিটি জেলায় এমন কি গ্রামাঞ্চলেও প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হয়েছিল দিনটি। সেদিনের সেই স্বাধীনতা দিবস পালন কিন্তু খুব মসৃণ ভাবে হয়নি। ভারতমাতার বহু বীর সন্তানকে  সেদিন সহ্য করতে হয়েছিল  কঠোর শাস্তি,  সইতে হয়েছিল কারাবরণ,  ভোগ করতে হয়েছিল অবর্ণনীয় অত্যাচার। দিনটি তাই ভারতবসীর কাছে গৌরবের, অহংকারের, শৌর্যের।


ত্রিপুরাবাসীর কাছেও এই দিনটির আলাদা একটি মর্যাদা আছে। ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর আমাদের ত্রিপুরারাজ্য ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে যোগদান করে।ত্রিপুরা রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তির এই চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। এদিকে স্বাধীন ভারতের নুতন সংবিধান গৃহীত হয় ২৬ নভেম্বর। ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী প্রজাতান্ত্রিক ভারতবর্ষের অঙ্গরূপে ত্রিপুরায় প্রথম ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ত্রিপুরাবাসী মেতে  উঠেছিল  উৎসবে, মেতে উঠেছিল আনন্দে। 

আমরা আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষ উদযাপন করতে চলেছি।এবারের প্রজাতন্ত্র দিবস তাই সেদিক থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলন, দেশভাগের যন্ত্রণা, সংবিধান রচনা-- এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমার  ইতিহাস আমাদের বর্তমান প্রজন্মের  কাছে কতটুকু পরিচিত?  ওরা কি অনুভব করতে পারে  এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আন্দমানের সেলুলার জেলে তাদের পূর্ব পুরুষদের অবর্ণনীয় কষ্টের দিনযাপনের কথা,পারে কি অনুভব করতে  দেশভাগের যন্ত্রণার কথা? "মুক্তির মন্দির সোপানতলে কতো প্রাণ হলো বলিদান লেখা আছে অশ্রুজলে--"  যে অশ্রুজল ঝরেছিল দেশের বীর সন্তানদের মায়ের চোখে,  যে রক্তক্ষরণ হয়েছিল  লাখো শহীদের পিতার বুকে  তাদের কথা স্মরণ করে আমরা কি পারিনা হানাহানি - মারামারি থেকে সরে আসতে, পারি না কি  এক সুমহান ভারতবর্ষ গড়ে তুলতে --যেখানে ধনী আরও ধনী হবেনা, গরীব আরও গরীব হবেনা, যেখানে থাকবেনা কালোবাজারি, থাকবেনা আর্থিক কেলেংকারী,  কাঁদবে না  নীরবে নিভৃতে বিচারের বাণী?


 গীতাপ্রিয়া ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা
 


২৬শে জানুয়ারি ২০২২


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.