Type Here to Get Search Results !

আসুন ভাবি -- প্রজাতন্ত্র দিবসে ঃ লীনা গাঙ্গুলি, ত্রিপুরা

সংবিধান প্রবর্তনের স্মৃতিতে প্রতি বছর 26 শে জানুয়ারি তারিখ টি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয় ।প্রজাতন্ত্র হলো এমন একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যেখানে জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ করে থাকে বা জনগণই সমস্ত ক্ষমতার উৎস। ।আমাদের ভারতবর্ষও একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র -- এটা আমরা সবাই জানি ।                 

এবার চলুন একটু অতীত থেকে ঘুরে আসি। 1950 সালের 26শে জানুয়ারি তারিখে ভারতীয় গণপরিষদে সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।1947 সালের 15ই আগস্ট দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের ফলে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পায়।স্বাধীনতা লাভের প্রক্রিয়া টি সম্পূর্ণ হয় যুক্তরাজ্যের সংসদে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাশ হওয়ার মাধ্যমে ।

এর ফলে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে গিয়ে কমনওয়েলথ অফ নেশনস এর অন্তর্গত অধিরাজ্য হিসেবে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয় ।1947 সালের 15ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হলেও দেশের প্রধান হিসেবে তখনও  বহাল ছিলেন ষষ্ঠ জর্জ। আর লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছিলেন এর গভর্নর জেনারেল। তখনও দেশে কোনো স্থায়ী সংবিধান ছিল না ।ঔপনিবেশিক ভারত শাসন আইনে কিছু রদবদল ঘটিয়েই দেশ শাসনের কাজ চলছিল ।1947সালের 28শে আগস্ট একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার জন্য ড্রাফটিং কমিটি গঠন করা হয় ।এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ডঃ বি আর আম্বেদকর ।

                 

1947সালের 4ঠা নভেম্বর কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণপরিষদে জমা দেয়।চূড়ান্তভাবে সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে 2বছর 11মাস18 দিন ব্যাপী সময়ে গণপরিষদ এই খসড়া সংবিধান আলোচনার জন্য 166বার অধিবেশন ডাকে।এই সমস্ত অধিবেশনে জনসাধারণের প্রবেশের অধিকার ছিল ।বহু বিতর্ক ও কিছু সংশোধনের পর 1950সালের 24শে জানুয়ারি গণপরিষদের 308 জন সদস্য চূড়ান্ত সংবিধানের হাতে লেখা দুটি নথি তে স্বাক্ষর করেন ।এর দুদিন পর সারা দেশব্যাপী এই সংবিধান কার্যকর হয় ।

সংবিধান স্বীকৃতি দেয় গণতন্ত্র কে ।  গণতন্ত্রের শীর্ষ স্থানীয় অধিষ্ঠান কে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে প্রজা অর্থাৎ জনগণের  যে বিশেষ ভূমিকা তাকেই আমরা বলি প্রজাতন্ত্র  ।   তাহলে বলাই যায়,  প্রজাতন্ত্র দিবস হল আমাদের অর্থাৎ  জনগণের দিন।

         

এবার চলে আসি বর্তমানে ।   এতো রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা পেলাম আর এর ফলস্বরূপ যে সংবিধান পেলাম, যা আমাদের বিভিন্ন অধিকার দিল, আমরা কি এর যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছি?এটা ভাবতে হবে  বইকি। শীতের কুয়াশাভরা ভোরে কম্বল টা সরিয়ে রেডি হয়ে যখন প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যেতে হয়, তখন কি আমাদের মনে বিরক্তি আসে না?আমরা কি অস্বীকার করতে পারি?এই আমরাই বলি ভবিষ্যত প্রজন্ম কোন কিছুর যথার্থ মূল্য দিতে পারছে না, তখন নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে আমি কতটুকু মূল্যবোধ তাদের মননে রোপন করতে পেরেছি, এই প্রজাতন্ত্র দিবস যে আমার আপনার দিন তা কতজন কে বুঝিয়েছি ।ভাবুন, ভাবতে হবে ।মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সময়ে এগিয়ে না এলে যে চলবে না । তাই চলুন এই প্রজাতন্ত্র দিবসেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই -- প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই ভবিষ্যত প্রজন্ম কে তাদের অধিকার, তাদের কর্তব্য সম্পর্কে আরোও সচেতন করে তুলবো, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই সবকিছু চোখ কান খুলে বিচার বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করার মানসিকতা প্রোথিত করবো -- তাদের চিন্তায় তাদের চেতনায়।  তবেই তো সার্থক হবে আমার, আপনার, সকলের প্রজাতন্ত্র দিবস ।

লীনা গাঙ্গুলি, ত্রিপুরা

২৬শে জানুয়ারি ২০২২

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.