Type Here to Get Search Results !

ক্ষমা করো নেতাজি *""""""*""''''''* - টিংকুরঞ্জন দাস , ত্রিপুরা

ক্ষমা করো নেতাজি

*""""""*""''''''*


ভারতবর্ষের মানচিত্রের এক কোণে

ফেলে রাখা অবাঞ্ছিত অপ্রয়োজনীয় আবর্জনার স্তূপে

কুড়িয়ে পেলাম একখানা ছবি

হাতে নিয়ে কাঁচটা মুছতেই দেখতে পেলাম

ঘোড়ার পিঠে সওয়ার আঙ্গুল উদ্ধত ঋজু মেরুদন্ডের

এক সৌম্যকান্তি যুবক

যেন কিছু বলতে চাইছে

চশমার ফাঁক দিয়ে ঠিকরে বেরোচ্ছে মশালোদ্দীপ্ত আগুন

জলপাই রঙের পোশাকে সূর্যের তেজ

সর্বাঙ্গ থেকে বিচ্ছুরিত আলোর স্বর্ণপ্রভা

সমস্ত প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

দৌড়ে গেলাম আমার বৃদ্ধ বাবার কাছে

জানতে চাইলাম কে সেই যুবক

যার প্রতিটি অঙ্গ যেন এক একটা সুদৃঢ় ভারত

যার ডান হাতের অনামিকা কিছু নির্দেশ করছে

অশীতিপর বৃদ্ধ ঈগলের মত ছুটে এসে

আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিলেন সেই সিংহ বীরের ছবি

সারা অঙ্গে হাত বুলিয়ে মাথা ঠেকালেন

বীর যোদ্ধার পায়ে

আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলাম

বাবার চোখ থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ছে

কয়েক ফোঁটা জল

যেন সমস্ত গ্লানি, অপবাদ, বদনামগুলি ধুয়ে দিতে চাইছে

কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুধারায়

আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম

কখন যেন দুই হাতের তালু একত্রিত হয়ে

কপালে চলে এলো

কে সেই সৌম্যমূর্তি যুবক

যার দর্শনে মনে ভক্তি জাগে

শরীরের রক্তে জাগে শিহরণ

মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে আসে সিংহ গর্জন

'জাগো বাঙালি, ইনি তোমার পুরো পুরুষ।'

যে কখনও মাথা নত করেনি

কোন অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেনি

দেশ মাতৃকাকে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করতে

সংসার, আত্মীয়-পরিজন ত্যাগ করতে দ্বিধাবোধ করেনি

এমনকি দেশকে মন প্রান দিয়ে ভালোবেসে

তাকে ছেড়ে যেতে দু'বার ভাবেনি

শত্রুর শত্রু আমার মিত্র-এই নীতিতে বিশ্বাস রেখে

কখনও ছুটে গেছেন জার্মান, কখনও জাপান, রাশিয়া, পেশোয়ার

গোটা পৃথিবী চষে খুঁজে বেড়িয়েছেন

ভারতবাসী তথা ভারতবর্ষকে যারা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র

হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন তাদের দ্বারে দ্বারে

সাহায্য চেয়েছেন সাদা চামড়ার করাল গ্রাস থেকে

জন্মভূমিকে মুক্ত করতে

বিশ্বাস রেখেছেন নিজের উপর

ভরসা রেখেছেন মিত্রশক্তির দেওয়া প্রতিশ্রুতির উপর

নের্তৃত্ব দিয়েছেন আজাদ হিন্দ ফৌজ

'দিল্লি চলো' মন্ত্রে জাগিয়ে তুলেছেন আপামর ভারতবাসী কে।

সে যুবক আজ কতোটা অবহেলিত, কতোটা অপ্রয়োজনীয়

অপাংক্তেয় করে রাখা হয়েছে সর্বত্র

এক তেইশে জানুয়ারি ছাড়া বাকি ৩৬৩ দিন

সে বীর যোদ্ধাকে কেউ মনে রাখেনা

শুধু ভোটের প্রয়োজন এ দু-একবার জেগে ওঠেন

তবুও জায়গা হয়নি তার প্রিয় দেশে

এমনকি তার ছবিটারও কোন জায়গা নেই

এ পোড়া দেশের বিধানসভা কিংবা সংসদের হলঘরে

ধর্ম ক্লান্ত আমাদের নেতাদের ছবি থাকলেও

নেই সেই গ্রেটেস্ট এনিমি অব দ্যা ব্রিটিশ এমপেরার এর

এদেশের আদালতগুলোতে লক্ষ লক্ষ অপরাধের বিচার হলেও

যারা ভারতমাতার এই বীর সন্তানের

অন্তর্ধান রহস্য আজও জনসমক্ষে উপস্থাপন করতে পারেনি

ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না

ভবিষ্যৎ ও একদিন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেই।


নেতাজি, তুমি যেখানেই থাকো

ক্ষমা করে দিও তোমার প্রিয় ভারতমাতার সন্তানদের

আমাদের মত ভীতুদের সাহস যোগাতে

যদি সম্ভব হয় তুমি আর একবার এসো

তোমার আদর্শ বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের কথা মতো

নিরন্ন ভারতবর্ষের মুখে একটু খাবার তুলে দিতে

তোমার ভীষণ প্রয়োজন এই গরীব দেশের।


- টিংকুরঞ্জন দাস , ত্রিপুরা


ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট

২৩শে জানুয়ারি ২০২২

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. নেতাজি আমাদের সেনসিটিভ পার্ট। আমাদের অনেকটা জুড়ে তার বসবাস। শ্রদ্ধা জানাই তাকে।

    ভালো লিখেছিস বাবা।

    উত্তরমুছুন