ভারতের পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে বাংলাদেশিরা
আরশি কথামার্চ ১৩, ২০২২
0
প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর, আরশিকথাঃ
গত দুই বছর ধরে বন্ধ পর্যটন ভিসায় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীর যাতায়াত। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে সড়কপথে যাত্রীবাহী রেল ও বাস পরিষেবা। চিকিৎসা, ব্যবসা এবং শিক্ষা ভিসায় সীমিত পরিসরে ভিসা চালু থাকলেও নানা কড়াকড়িতে ভ্রমণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ পথে ভিসা সহজলভ্য হলেও সরকারের তদারকির অভাবে বিমান ভাড়া ৬ গুণ বাড়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চিকিৎসা, ভ্রমণ, ব্যবসা এবং শিক্ষা গ্রহণে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতেন। যাত্রী সেবা বাড়াতে সরকার খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে বন্ধন রেল ও ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা ও ঢাকা-কলকাতা-আগরতলা রুটে একাধিক মৈত্রী বাস পরিষেবাও চালু করে।
একই সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় যেতে আখাউড়া বর্ডার ব্যবহার করে থাকে বাংলাদেশিরা। এ রুটটা ত্রিপুরায় যেতে একেবারে সহজ। এ পথেও কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। কিন্তু ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকায় তা হচ্ছে না।
দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ ভারত সরকার বাংলাদেশিদের সব ধরনের ভিসা বাতিল করে। পরে ২৬ মার্চ থেকে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেল ও বাস পরিষেবা বন্ধ হয়। ৬ মাস পরে সংক্রমণ কমলে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে চিকিৎসা, ব্যবসায় ও শিক্ষা ভিসা সীমিত পরিসরে চালু করলেও, এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে পর্যটক ভিসায় যাতায়াত এবং রেল ও বাস পরিষেবা।
৬ মাস মেয়াদী চিকিৎসা ভিসা দেওয়া হলেও, অধিকাংশের কপালে জুটছে একবার প্রবেশের সুযোগ। শর্ত মেনে ভিসা নিলেও নানা অজুহাতে ভ্রমণে বাধা সৃষ্টি করছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন। সড়ক পথে ভিসার আবেদন করলে মিলছে আকাশ পথের ভিসা। বিমানে টিকিটের চাহিদা বাড়ায় সিন্ডিকেট করে ঢাকা-কলকাতা বিমান ভাড়া ৫ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সরকার পক্ষের কোনো তদারকি না থাকায় জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এ অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে অসহায় যাত্রীদের। অনেকের ইচ্ছে থাকলেও, এত খরচের কারণে তারা যেতে পারছেন না। এতে বর্তমানে যাত্রী যাতায়ত কমে দাঁড়িয়েছে দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ জনের মধ্যে। যেহেতু করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে, সেহেতু ভিসা ব্যবস্থা সহজ ও যাত্রী সেবায় বাস ও রেল পুনরায় চালু হলে উপকৃত হবেন বলে জানান যাত্রীরা।
ভুক্তভোগী পাসপোর্টধারী যাত্রীরা জানান, ভিসা কড়াকড়ি ও আকাশ পথে ভিসা দেওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে ভারত যেতে পারছি না। বিমান টিকিটের দাম বেড়েছে আকাশ ছোঁয়া। ৩ মাস আগে ঢাকা-কলকাতা রুটে বিমান ভাড়া ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে থাকলেও, সিন্ডিকেট করে তা দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবাসহ প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে ভারতে যেতে পারছেন না।
টিকিটের বাড়তি দামে ভোগান্তিতে পড়া পাসপোর্টধারী যাত্রী আকরাম জানান, যেহেতু করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে, ভিসা পাওয়া সহজ করে, রেল ও বাস সেবা আবারও চালু হলে, আমাদের জন্য অনেক সাশ্রয়ী হয়।
বেনাপোল গ্রিনলাইন পরিবহন কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার শাহিনুর বলেন, যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকায় ক্ষতি হচ্ছে। চালু হলে যাত্রীরা উপকৃত হবেন, আমরাও বাঁচব।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, ব্যবসার জন্য মাঝেমধ্যে ভারতে যেতে হয়। কিন্তু এখনও ভিসা সহজ না হওয়ায়, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
ভারতের ভ্রমণের সব শর্ত মেনে ভারত যাওয়ার জন্য এসেছেন জানিয়ে ভারতগামী যাত্রী আকাশ বলেন, ভারতীয় ইমিগ্রেশন নানা কারণ দেখিয়ে ঢুকতে দেয়নি।
করোনার কারণে এখনও ভারত-বাংলাদেশে মধ্যে যাত্রীবাহী রেলসেবা বন্ধ থাকার কথা উল্লেখ করে বেনাপোল রেল স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান বলেন, যাত্রীরা রেলসেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বন্দরে যাত্রীর যাতায়াত কমায় সরকারের রাজস্ব কমার বিষয়ে বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ যাত্রী যাতায়াত কমেছে। এতে সরকারের ভ্রমণ খাতে প্রায় ২৮ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে।
এবিষয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি মো. রাজু জানান, বুধবার (৯ মার্চ) বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে গেছে মাত্র ৪৬০ জন বাংলাদেশি। ভারত থেকে এসেছে ২২৪ জন ভারতীয় নাগরিক। বর্তমানে পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসা এবং ব্যবসা ভিসায় কিছু যাত্রী যাতায়াত করলেও, ভারতীয় ইমিগ্রেশন শিক্ষা ভিসায় অনেককেই ফেরত দিচ্ছেন। বর্তমানে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে যারা করোনার তৃতীয় ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, তাদের করোনা পরীক্ষা করা লাগছে না। তবে ভারত থেকে ফিরতে আরটিপিসিআর থেকে করোনা পরীক্ষা করতে হবে।