"মে " মাস এলেই বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে !!
তুষের আগুনের মতোই শুধু ধিকিধিকি জ্বলে ।
"হারানো সুর খুঁজে বেড়াই--
কোথায় গেলে তাকে যে পাই !!
মধুর ভাষা মায়ের ভাষা -
বাংলা হোক ভালোবাসা,
এই ভাষাতেই সুখ আছে ভাই --
বারে বারে কেন তা ভুলে যাই,
বাংলা হারালে মাকে যে হারাই,
আত্মসুখে সব ভুলে যাই।।
১৯ শে মে র মতোই আমার জীবনকথায় অদ্ভূত ভাবেই জড়িয়ে আছে আরও একটি তারিখ । সেটি হল ২৩শে মে, যেদিন আমি আমার মাকে হারিয়েছি।ব্যাথাময়,স্মৃতিমাখা এই দুটো তারিখ ই তাই শুধু কান্না হয়ে ধরা দেয়। । কারণ মা আর মাতৃভাষা-- দুটোই তো ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের জীবনের সাথে।। ।মায়ের মুখের ভাষা কে ভুলে থাকা, আর মাকে ভুলে যাওয়া এক ই কথা। তাই ঐতিহাসিক ১৯ শে মে সকল বাঙ্গালীর কাছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন । একে ভুলে থাকা যায় না। প্রতিটি বাঙ্গালী মনকে এই দিনটি আবেগতাড়িত করে।
এই সেই রক্তস্নাত ১৯ শে মে। ১৯৬১সনের এই দিনটিতেই মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন এগারো জন তরুণ তরুণী। এদের মধ্যে কমলা হলেন প্রথম তরুণী ,যিনি মাত্র ষোল বছর বয়সে শহীদ হয়েছিলেন। এগারো জনের মধ্যে হিতেশ বিশ্বাস, কুমুদ দাস এবং সত্যেন্দ্র কুমার দেব, এই তিনজন ছিলেন ত্রিপুরার। ।রুটিরুজির প্রয়োজনে শিলচরে বসবাস করতেন।
আসামের বরাক উপত্যকায় হাজার হাজার মানুষ সেদিন রাজপথে নেমেছিলেন । গর্জে উঠেছিল তাদের কন্ঠ। শুধুমাত্র বাংলা ভাষার সম্মানে। আর এই কন্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে লাঠিচার্জে যখন কাজ হল না , তখনই সত্যাগ্রহীদের উপর শুরু হলো নির্বিবাদে আসামপুলিশ ও সেনাবাহিনীর অতর্কিত গুলিবর্ষন। আত্মাহুতি দিলো এগারোটি তাজা প্রাণ। সৃষ্টি করলো এক নতুন ইতিহাস। মাতৃভাষা বাংলা ভাষা কে আসামে দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা দানের জন্য তাঁদের এতোবড়ো আত্মত্যাগ বিশ্বের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো। তাইতো বাংলাভাষা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।
"মোদের গরব মোদের আশা আ'মরি বাংলা ভাষা " --- আত্মবিস্মৃত বাঙ্গালী, বলতে পারো কোথায় হারিয়ে গেছে কবির এই সুর!!!!! আজ কেন আমরা গর্ব করে বলি --- "জানেন দাদা ,আমার ছেলে বা়ংলাটা ঠিক বুঝে না। " আমাদের লজ্জা নেই, তাই কুন্ঠাবোধ করিনা। যেন আলেয়ার পিছনে ছুটছি। চলুন স্মৃতিচারণায় ঘুমন্ত হৃদয়টাকে জাগাই।
১৯ শে মে'র এই পুণ্য দিনে আসুন সবাই মিলে অঙ্গীকার বদ্ধ হই -- বাংলাভাষা কে নিয়ে গর্ব করি। নতজানু হই বীর শহীদদের প্রতিকৃতি কে সামনে রেখে।
তৃষ্ণার্ত কমলার উদ্দেশ্যে তুলসি তলায় একগ্লাস সরবত কিংবা জল রাখি। আর সন্ধ্যায় এগারো টি প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বেলে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করি আমাদের পথদ্রষ্টাদের প্রতি।
কলমে - স্বপ্না দাশগুপ্ত,ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১৯শে মে ২০২২