জীবন উপান্তে বসিয়া একান্তে মনে পড়ে কথা কত,
সেই বন্ধুগনে যাঁহাদের সনে খেলিতাম অবিরত ।
তাঁরা নাই কাছে শুধু স্মৃতি আছে নানা ভাবে হৃদে আঁকা,
করে সবে ভীড় সম্মুখে আঁখির কত সুধা মধুমাখা।
সেই ছোটো বেলা কত নানা খেলা খেলিতাম একজোটে সুরসাল আম,
পাঁকা কাল জাম পাড়িতাম গাছে উঠে।
কেহ নীচে থেকে পাঁকা আম দেখে ফেলিত ছুড়িয়া ঢিল,
কত আম চুরি করিতাম--মহানন্দে অনাবিল ।
অতি ভোরে উঠে সব বন্ধু জোটে তুলিতাম নানা ফুল
শীতের সকালে মিলি দলে দলে কুঁড়াতাম পাঁকা কুল ।
আষাঢ় বাদল নামে ভরা ঢল নদী ভরা ঘোলা জলে
বন্ধুরা সকলে নামি' দলবলে মাতিতাম কোলাহলে।
সেই পাঠশালা অতি দীর্ন চালা মাটিতে আসন পাতা
বসি তার 'পরে নত ভয়ে, ভরে হাতে নিয়ে বই খাতা ।
গোটা কয় মাত্র ছিনু সবে ছাত্র একা গুরু মহাশয়,
বেত নিয়ে হাতে পড়াতে পড়াতে ঢুলু ঢুলু আঁখি দ্বয় ।
সব পড়োগন তুলিলে গুঞ্জন ঘুম গেলে তাহে টুটি-
রাগিয়া শুধান কঠিন বানান সহসা জাগিয়া উঠি ।
বাল্যশিক্ষার ই-কার ঋ-কার রহিত না সদা জ্ঞান
হত যদি ভুল কষে টেনে চুল মলে দিত দুই কান ।
হইয়া অধীর ফেলিতাম নীর বুক ভরা অভিমানে
এত অপমান সহিত পরান চাহিয়া মাটির পানে ।
বড়ই যতন করি প্রাণপন তবুও হয় না সাধা,
গুরু মহাশয় রেগে অতিশয় গালি দেন বলে "গাঁধা" ।
ভাবিতাম মনে হায় কতক্ষনে পাঠশালা হবে ছুটি
উতলা পরান পাবে পরিত্রান মুছিয়া নয়ন দুটি ।
আবার কখন মিলি বন্ধুগন খেলিতে পাইব মাঠে
পড়ে গেলে বেলা সাঙ্গ করি খেলা মন দিতে হবে পাঠে।
বড় হব কবে আর নাহি রবে পাঠের যাতনা ক্লেশ
খেলা আর খেলা শুধু সারা বেলা খেলার হবেনা শেষ ।
-হারাধন দেবনাথ, ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
২৪শে জুলাই ২০২২