(নেপালি কবিতা)
-কবি রুদ্র বরাল
আজকাল ডাস্টবিনে খুঁজছি কবিতার পান্ডুলিপি। খুঁজছি কবিতা। ভাবছি কোথায় যে হারিয়ে গেল।
একবার ভাবলাম, যদি ভিক্টর হুগো হতাম!
'লে মিজেরাবল' যদি হারিয়ে যেত! আবার লিখতে পারতাম কি ঠিক সেরকমই।
তারই লেখার মতন।
শুধু পান্ডুলিপিটা হারিয়ে ফেলাই নয়
স্মৃতিটাও হারিয়ে ফেললাম।
ভুলে গেছি কবিতার বিষয়বস্তু আর গঠনগত বিন্যাস।
প্রতীক আর বিম্বরা কেমন ছিল কে জানে!
কি কি ছিল হয়ত কবিতায়? বিশ্বব্যাপী সংকট নাকি দেশের আর্তনাদ?
সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষ নাকি সুডানের খিদে?
গাজাপট্টি আর ওয়েস্টব্যাংকের না শুকোনো ঘা কোন বাঁদর এসে আঁচড়ে দেয়,
একটিমাত্র ধর্মই বা কেন একাট্টা করতে পারল না অশান্ত উপসাগরকে?
ওপেক দর কমালে কেন বৃদ্ধি পায় এখানে তেলের দাম
করোনার সুঁই বিদেশে পৌঁছালে কেন লাইনে ধুঁকতে থাকে আমার গ্রাম
এই বিষয়গুলো ছিল কি ছিল না?
আমার কবিতায় ফুলের গল্প ছিল নাকি জনতা সমূহের অশ্রু,
হো হো করে হাসতো আকাশ নাকি হু হু করে কাঁদত ক্ষেত,
কল্পনার উড়ান আর মনের গভীরতায় হতচকিয়ে যেত নাকি হারিয়ে যেত প্রিয়তমার বাহুপাশে?
কেমন ছিল আমার কবিতার চেহারা-নিরোর সারঙ্গির মতো নাকি কটুওয়াল*-এর গাইনের মতো?
কোন ধারা আর স্লোগান বয়ে চলত আমার কবিতা?
'স্লোগান দিতে নেই কবিতায়'-এই স্লোগান আত্মসাত করেছিল কিনা
ভুলে গেছি কবিতার সমস্ত কিছু।
কেন লিখতাম আমি কবিতা? কি উদ্দেশ্যে আর কিসের তাড়ায় জন্ম নিত কবিতা?
কবিতা আমার পেশা ছিল না নেশা? কবিতার পিঠে চড়ে আমি সমাজের উপরে উঠতাম অথবা কবিতাকে কাঁধ বানিয়ে সমাজকে উপরে তুলতাম?
জানি না, কি যে ছিল আমার কবিতার অভিপ্রায়।
আর আমি হন্যে হয়ে খুঁজছি কবিতা
এক-একটা ডাস্টবিন পর্যবেক্ষন করছি
অত্যাধুনিক সরঞ্জামের গুঁতাগুঁতি রয়েছে ঘরের ভিতর
বহু পুরনো সামগ্রীদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছি।
'আদর্শ পাঠ'-এর পুরোনো বই ছেলে ছুড়ে ফেলেছে।
নীতিশিক্ষার বই নাতি পরিত্যাগ করেছে।
মেয়ের কোনো ইজম পছন্দ নয়। সেরকমই কোনো আবেশে হয়ত কবিতার পান্ডুলিপিটাও কি ছুড়ে ফেলেছি উত্তর আধুনিক ডাস্টবিনে!
ডাস্টবিনে জীবনের রঙ খুঁজে চলেছে ভবিষ্যতের তারারা, ডাস্টবিনে রয়েছে জৈব বৈচিত্র্যের বিরাট বিশ্ব। কাক, কুকুর, মানুষের সঙ্গে জীবনের বিজয়গান গেয়ে চলেছে।
আমার কবিতার পান্ডুলিপি হয়ত রয়েছে সেখানেই।
(*হরিভক্ত কটুওয়াল-অসমের নেপালি কবি)
******************
# অনুবাদ-বিলোক শর্মা
৭ই আগস্ট, ২০২২