মুজিব কোর্ট এমন একটি শব্দ যা সম্পর্কে প্রতিটা বাঙালী কম-বেশি ধারনা রাখে, বিশেষ করে যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তাদের কাছে তো এর ব্যবহার অতি গর্ব আর সম্মানের।
তবে কি জানেন? এই মুজিব কোর্ট শব্দটি কিভাবে কোথা থেকে উৎপত্তি এর ব্যবহার সহ বহু বিষয়েই আজ-কাল তরুন প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ এমনকি অনেক সিনিয়রাও সঠিক ধারনা জ্ঞান রাখে না। তারপরও ব্যবহারে কম নেই।
বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাকে একবাক্যে বেশির ভাগ মানুষ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বলে স্বীকার করে নেয়। একদিন তার ডাকেই এই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবন বাজী রেখে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে।
আজ স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পর জাতির পিতার অকৃত্রিম দেশপ্রেম,মানব সেবা,সমাজ সেবা,রাজনীতি সহ অন্যান্য সকল কাজ আদর্শ তুল্য অনুসরনীয়। তার সেই আদর্শিক কাজ যেমন অনুসরনীয়, তেমনি তার ব্যবহৃত পোষাক পরিচ্ছেদও অনুসরনীয় সবার কাছে।
শুধু সমকালীন নয় বরং সব সময়ের জন্য তার আদর্শের অনুসর করা বাঞ্চনীয়। সেই সাথে রাজনীতির পথে চলা প্রতিটা প্রজন্মের কাছে তার ব্যবহৃত পোশাকও আকর্ষনের দিক এবং বঙ্গবন্ধু থেকে বর্তমান পর্যন্ত তার ধারাবাহিকতা বজায়ে রয়েছে।
আমরা জানি জাতির জনক সব সময় একটি পাঞ্জাবির সাথে হাতা-কাটা কালো কোর্ট ব্যবহার করতেন। এই কোর্টটি তার শাররিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে শোভা দান করতো। এই কোর্ট অন্য গতানুগতিক কোর্টের মত ছিল না বিধায় তা বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় মডেলে পরিনত হয়েছে এবং সেই সময় থেকে এর নাম হয় মুজিব কোর্ট।
বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি পছন্দ করতেন সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা সেই সাথে ছয় বোতামের কালো রঙের হাতা-কাটা কোর্ট।
পরবর্তিতে এই মুজিব কোর্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের আদর্শ বহনকারী প্রতীক হিসাবে বেশ সুনাম অর্জন করে সবার মনে স্থান করে নেয়।
আজ আমরা ছয় দফা আন্দোলনের কথা প্রতিটা দেশবাসী জানি কিন্তু ক'জনই বা জানি মুজিব কোর্টের ছয় বোতামের আদ্যোপান্ত সেই ছয় দফার আন্দোলনের মূল প্রতীক এই ছয় বোতামের মুজিব কোর্ট।
ঐতিহাসিক যে সকল ছবি ও তথ্য উপাত্ত আজ আমরা দেখতে পাই তাতে স্পষ্ট দেখা যায় যে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী সরকারের শোষনের বিরুদ্ধে যতগুলো দুর্বার আন্দোলন করেছেন তাতে সব সময় তার গায়ে এই ছয় বোতামের মুজিব কোর্ট ছিল। তিনি যখনই কোন দেশের রাষ্টপ্রধান কিংবা সফরে গেছেন তখনও তার ব্যবহার করেছেন এবং জাতিসংঘ,ওআইসি সহ আন্তর্জাতিক যে সকল স্থানেই গিয়েছেন সেখানেও তার পরিধেও হিসাবে ছিল এই মুজিব কোর্ট।
জাতির জনক যখনই নিজেকে বাঙালীর নেতা হিসাবে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করেছেন তখনই সেই ফ্যাশন আইকন ছয় বোতামের মুজিব কোর্ট উপস্থাপন করেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য বহু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সেই জনপ্রিয় ছয় বোতামের মুজিব কোর্ট পড়ে থাকে বিশেষ করে এই যুগের তরুনদের কাছে তা বেশ অধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করে আলাদা একটি স্থান নিয়েছে।
তবে এখানে একটি কথা অপকটে বলতে হবে যে, এই মুজিব কোর্ট বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতীক হিসাবে গন্য হয়, তা কিছু অসাধূ স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতা ও কপট মানুষের আচরন দ্বারা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে এবং অনেকে তো ভাবে এই মুজিব কোর্ট গায়ে জড়িয়ে আমি যাহাই করি না কেন, আমার তো কিছুই হবে না। আজ জাতির পিতার আদর্শ তাদের হাতের এভাবে অপমানিত ও অসৎ ব্যবহার সত্যি জাতি হিসাবে কাম্য হতে পারে না, আর যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অগ্রপথিক ও অগ্রদূত জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বাস্তবায়নের মহা সড়কে দাড়িয়ে আছি। সেই জননেত্রীর সরলতা ও মানবতাকে দুর্বলতা ভেবে স্বার্থান্বেষী মহল মুজিব কোর্টের অপব্যবহার করে যাবে সত্যি এটা মানা যায় না। মুজিব কোর্টের সকল ধরনের অপব্যবহার রোধে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা রাষ্ট্রপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার সদয় সমিপে অনুরোধ জাতির পিতার আদর্শের প্রতীক "মুজিব কোর্ট" ব্যবহারে সঠিক বিধি-নিষেধ সহ যথাযথ হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।
আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত সকল কিছু সরকার যেভাবে সংরক্ষন করার উদ্যোগ গ্রহন করেছে ঠিক তেমনি ভাবে জাতির জনকের ব্যবহৃত "মুজিব কোর্ট" মডেল হিসাবে আখ্যায়িত করে তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় সকল ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সর্বশেষ একটি কথাই পুনরায় বলা যায় বঙ্গবন্ধু যেমন একটি আদর্শের নাম তেমনি তার ব্যবহৃত এই মুজিব কোর্ট আদর্শের প্রতীক এর অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না করলে অদূর ভবিষ্যতে পরবর্তি প্রজন্মের কাছে লজ্জায় মাথা অবনত করে রাখতে হবে। আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে এর কার্যকারিতা বাস্তবায়ন হোক এই কামনা ও প্রত্যাশা রইল।
লেখক : আজম পাটোয়ারী, প্রকাশক ও কলামিস্ট
বাংলাদেশ
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
২১শে সেপ্টেম্বর ২০২২