মানুষ মানুষেরই জন্য। এই ভাবনা নিয়েই দিব্যাঙ্গজনদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি দিব্যাঙ্গজনদেরকে সামাজিক সম্মান প্রদান করাও আমাদের নৈতিক কর্তব্য। সোমবার নরসিংগড়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাফওয়ে হোম এবং প্রবীণ নাগরিকদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ন্যাশনাল হেলপলাইন - ১৪৫৬৭-এর আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাদের শারীরিক, মানসিকসহ নানা সমস্যা রয়েছে। তবে তারা কেউ সমাজে অবহেলিত নন। এই সমস্ত মানুষদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষদের শুধু ঔষধের মাধ্যমে সুস্থ করা সম্ভব নয়। তারজন্য সঠিক কাউন্সেলিং-এরও প্রয়োজন। মানসিক রোগ থেকে সুস্থ হওয়া মানুষকে বাড়িতে ফিরিয়ে না নেওয়া হল একটি সামাজিক অবক্ষয়। এটা একেবারেই কাম্য নয়। মানসিক রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার পর যাদেরকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয় না তাদের জন্যই এই সর্বসুবিধাযুক্ত হাফওয়ে হোম তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয় সমাজের প্রবীণ নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্যও কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার মিলে কাজ করছে। প্রবীণ নাগরিকরা যাতে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন তাই তাদের জন্য হেল্পলাইনও আজ চালু করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দিব্যাঙ্গজনরাও সমাজের অংশ। তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। সমাজে এমন অনেক পথশিশু রয়েছে যারা স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান সহ নানা সমস্যায় ভুগছে। তাদের প্রতিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সমাজ সেবামূলক মনোভাব নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসা আবশ্যক। কারণ এই কাজটি সরকারের পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মন্ত্রকে পাথেয় করেই রাজ্য সরকার শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজে এমন অনেক মানসিক রোগী রয়েছেন যারা সুস্থ হয়ে গেলেও তাদের পরিবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেন না। তাই তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের লক্ষ্যেই আজ হাফওয়ে হোম চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বয়স্ক নাগরিকদের সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে হেল্পলাইন আজ চালু করা হয়েছে। বিগতদিনে রাজ্যে এরকম ব্যবস্থা না থাকার কারণে দিব্যাঙ্গজন সহ বয়স্ক নাগরিকরা নানাভাবে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হত। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দিব্যাঙ্গজনদের জন্য চাকরি ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও দিব্যাঙ্গজনদের সহজে চলাফেরা করার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন অফিস আদালতে র্যাম্প বসানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং বলেন, সমাজে যাদের কেউ নেই তাদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাফওয়ে হোমের উদ্বোধন হলো। রাজ্য সরকার মহিলাদের স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে যে পলিসি গ্রহণ করেছে তাতেও মানসিক রোগমুক্ত মহিলাদের জন্য হাফওয়ে হোম স্থাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস এবং সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল।অনুষ্ঠান মঞ্চে রাজ্যের পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত নীতি নিয়ে একটি বুকলেটের আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে জুভেনাইল জাস্টিস ফান্ড ওয়েবসাইটের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা। এছাড়াও অনুষ্ঠান মঞ্চে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় দিব্যাঙ্গজনদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক ২ জন ছাত্রকে চিফ মিনিস্টার মেরিটোরিয়াস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এরমধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেরা ছাত্রকে ২৪ হাজার টাকার চেক এবং উচ্চমাধ্যমিকের সেরা ছাত্রকে ৫৪ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে সফলতা অর্জন করেছে এমন দিব্যাঙ্গজন ছাত্রছাত্রীদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের হাতে পুরস্কারগুলি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহাসহ অন্যান্য অতিথিরা।আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সংগৃহীত
১২ই সেপ্টেম্বর ২০২২