Type Here to Get Search Results !

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় খাদ্য ও পুষ্টিতে সমন্বিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ বাংলাদেশের

আবু আলী

শার্ম আল শেখ (মিশর )থেকেঃ

জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় এখন যে  অর্থ প্রয়োজন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারনে তা এখন উন্নত দেশগুলোর কাছে নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য বিশ্ব প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ীদের কাছে এ খাতে সহযোগীতা চাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। নইলে  আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু সুরক্ষা খাতর তহবিল তলানিতে পৌছাতে পারে বলেও আশংকা করেছেন তারা। এজন্য খাদ্য সংকট আরও মারাত্বক হতে পারে বলেও ধারনা করা হচ্ছে।  অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় খাদ্য ও পুষ্টিতে সমন্বিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় বাংলাদেশের।

গতকাল বৃহস্পতিবার মিশরের শান্তির নগর বলে খ্যাত শার্ম আল শেখ শহরে ৬ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ২৭তম আসরে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে "বিল্ডি ক্লাইমেট রিসিলেন্স অব ফুড সিস্টেম ইন বাংলাদেশ" শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমান হোসাইনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অন্যান্যদের মধ্যে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয়, গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইমপ্রুভমেন্ট নিউটেশানের নির্বাহী পরিচালক ড. লরেন্স হাডেড, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনিরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে মানুষকে খাওয়নোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এক সময় দেশে সাড়ে ৫ কোটি মানুষ ছিল, কিন্তু তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল। অথচ এখন ১৭ কোটি মানুষ। এরপরও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খাদ্যে ঘাটতি নেই। এখন বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।  প্রতিবছর দেশে ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষ বাড়ছে। এরমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এরমধ্যে উন্নত বিশ্ব মিথেন, ক্যামিক্যাল ব্যবহার কমানোর কথা বলছে। তবে জাতীয় দূর্যোগের বিষয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব সমস্যা বাড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। তবে এ বছর অনেক দেশের নেতৃবৃন্দ এসেছেন তাদের মধ্যৈ আগের চেয়ে চেতনা বেড়েছে। আমাদের এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকনোলজিক্যাল এবং ফিনান্সিয়াল হেল্প দরকার।

তানভীর শাকিল জয় বলেন, খাদ্যে দেশ এখন স্বয় সম্পূর্ণ। তবে উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ হয় না। অনেক খাদ্য নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যাও রয়েছে। এজন্য সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে টেকনোলজি উন্নয়ন ঘটাতে হবে। 

অন্যদিকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থ পাওয়া নিয়ে আবারও জটিলতা তৈরী হয়েছে।

 ধনী রাষ্ট্রগুলো জানিয়ে জলবায়ু ক্ষতি পোষাতে যে অর্থ দরকার তা সরকারগুলোর তহবিলে নেই। তাদেরও অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। ক্ষতিগ্রস্থ দেশের প্রতিনিধিরা বলছেন, অর্থনীতি চাঙ্গা অবস্থায় তারা কথা রাখেনি। অর্থ না দেয়ার এটি নতুন কৌশল।

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বদলে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি। জ্বালানী, খাদ্য সংকট পড়েছে বিশ্বে বহু দেশ। বিশ্বে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফিতিও।

বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতে চলা ২৭ তম জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনা ছিলো জলবায়ুর ক্ষতিপূরণে তহবিল আদায়। কিন্তু এবার উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা থেকে এখনও কোন সুখবর মেলেনি।সম্মেলনে ধনী রাষ্ট্রগুলো জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পোষাতে যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা ধনী রাষ্ট্রগুলো তহবিলে নেই। নিজেরাই এখন মন্দার মধ্যে চলছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রগুলো বলেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।

 বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অর্থনীতি ভালো থাকলেও ধনী রাষ্ট্রগুলো কথা রাখেনি।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ইউক্রেণ রাশিয়ার যুদ্ধের অযুহাতে জলবায়ু তহবিল নিয়ে নয়ছয় করা মানবাধিকার লংঘন হবে।পরিবেশবিদরা বলছেন, এমন বার্তা ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য আরো বিপদ ডেকে আনবে।

পরিবেশবিদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, 

পঞ্চম দিন শেষেও এখনো পর্যন্ত ফলশ্রুত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতারা। তবে আজকের দিনের আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সব উদ্যোগে নারীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ের পাশাপাশি মৌলিক মানবাধিকারের মতো মৌলিক জলবায়ু-অধিকার প্রণয়ন গুরুত্ব পেয়েছে। এক্ষত্রে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ গুলোকে নিয়ে আলোচনায় মুখ্য বিষয় ছিল যদিও সমাধানের জায়গা তৈরি হয়নি এখনও। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের জলসম্পদ এবং অবকাঠামোর ক্ষতির বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে, এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের ক্ষয়ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে উত্তরণের জন্য অর্থ তহবিল নিয়ে আলোচনার পরিমাণ খুবই সীমিত। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিতে হবে। ধনী গরীব প্রত্যেকটি রাষ্ট্রকে জলবায়ু পরিবর্তনের আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তি গুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে হবে। 

ড. মজুমদার, দিন শেষে আরো বলেন একটি সুন্দর আগামীর জন্য আমাদেকে লড়াই করে যেতে হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখতে আমাদের সকলকে এক হয়ে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কাজ করে যেতে হবে।


আরশিকথা বাংলাদেশ 

১০ই নভেম্বর ২০২২

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.