স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারছেন মহিলারা। স্বসহায়ক দল রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে এক বিশাল ভূমিকা নিতে সক্ষম হয়েছে। স্বসহায়ক দল রাজ্যের মা বোনেদের এগিয়ে যাওয়ার দিশা দেখাচ্ছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি গোটা পরিবারকে আত্মনির্ভর হওয়ার পথ দেখাচ্ছে স্বসহায়ক দল। বুধবার হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত ১৭তম আঞ্চলিক সরস মেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা। ‘প্রতি ঘরে মাতৃশক্তি, হবে স্বরোজগারী” এই শ্লোগান নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল ১৭তম আঞ্চলিক সরস মেলা। ১৩ দিনব্যাপী এই মেলার ব্যবস্থাপনায় ছিল ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন, গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। অনুষ্ঠানে উপমুখ্যমন্ত্রী। যীষ্ণু দেববর্মা আরও বলেন, এবারের আঞ্চলিক সরস মেলায় শুধু রাজ্য নয়, বহিরাজ্য থেকেও অনেকেই অংশ নিয়েছেন। এতে পণ্য ক্রয় বিক্রয় যেমন হয় তেমনি দুই পক্ষের মধ্যে ভাববিনিময়ও বৃদ্ধি পায়। রাজ্য সরকার প্রকৃত অর্থে মহিলাদের স্বশক্তিকরণে বিশ্বাস করে। তাই তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অন্যতম স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে তাদের উন্নতি ঘটানো। ২০১৮ সালের আগে রাজ্যে চার হাজারের মতো স্বসহায়ক দল ছিল। আর সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৮ হাজার। এক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে স্বসহায়ক দলগুলিকে সহায়তা করে যাচ্ছে। ব্যাঙ্কের ঋণ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রেও ত্রিপুরার মহিলারা এগিয়ে রয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বসহায়ক দলগুলি সময়ের মধ্যে ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ করে থাকে।উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ে তোলার প্রশ্নে রাজ্যের মহিলাদের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের অন্যতম দিশা মানুষ সরকারের কাছে - যাবে না। সরকারই মানুষের কাছে যাবে এবং ঘরে ঘরে যাবে। এই লক্ষ্যেই সারা রাজ্যে এখন চলছে ‘প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান'।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে কারামন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল বলেন, রাজ্যে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে স্বসহায়ক দলের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে পশ্চিম জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন বলেন, রাজ্য সরকার গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছে। সরস মেলার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় স্বসহায়ক দলগুলির উৎপাদিত সামগ্রী একটা জায়গায় এনে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আর এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় রেকর্ড বিক্রি হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বিশেষ সচিব সন্দীপ আর রাঠোর, ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সত্যেন্দ্র সিং, ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক স্মিতা মল এম এস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিধায়ক মিমি মজুমদার। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে মেলায় যোগদানকারী স্বসহায়ক দলগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়। এরমধ্যে বেস্ট স্টেট ক্যাটাগরিতে প্রথম মেঘালয়, দ্বিতীয় সিকিম এবং তৃতীয় হয় পশ্চিমবঙ্গ। বেস্ট ডিস্ট্রিক্ট ক্যাটাগরিতে প্রথম গোমতী জেলা, দ্বিতীয় পশ্চিম জেলা এবং তৃতীয় স্থান পায় ধলাই জেলা। বেস্ট ব্লক ক্যাটাগরিতে প্রথম ডুকলি আরডি ব্লক, দ্বিতীয় তেলিয়ামুড়া আরডি ব্লক এবং তৃতীয় হয় জোলাইবাড়ি আরডি ব্লক। বেস্ট ডিপার্টমেন্টের সম্মানে প্রথম জাইকা, দ্বিতীয় কৃষি ও উদ্যান দপ্তর এবং তৃতীয় হয়। ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। এর পাশাপাশি বেস্ট প্রোডাক্ট, বেস্ট ট্র্যাডিশনাল ড্রেস, বেস্ট এসএইচজি স্টল ইত্যাদি বিভাগে পুরস্কৃত করা হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সম্মান তুলে দেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, কারামন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল সহ অন্যান্য অতিথিগণ। উল্লেখ্য, ১৩দিনব্যাপী সরস মেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার পণ্য সামগ্রী।আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সংগৃহীত
১লা ডিসেম্বর ২০২২