পরাণকাকার জন্মদিন আজ।
ইকবাল মাথা নেড়ে সায় দেয়।
তাতে কী !
কিছু না। কোন দিকে যাবি? হেলা পাড়ায় গাজন গান শুনবি না?
ধুর, চল পরাণকাকার বাড়ি তাই। মানুষটা আমাদের পছন্দ করে। গাছের কয়েকটা ফুল নিয়ে পরাণকাকাকে একটা প্রণাম করে আসি।
সাইদাও যেতে চাইল ওদের সাথে। পরাণকাকা গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার ছিল এক সময় । ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খুব সম্ভ্রম মানুষটার। কোনদিন হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ দেখেন নি। সন্তান স্নেহে সবাইকে আগলে রেখেছিলেন।ফেলানি বৈরাগী গান গাইতে গাইতে আসছে। জাফর টিপ্পনী কাটে -
কি গো মাসি, তোমার কাঁধের ঝোলাটা আজ বেশি ভারী লাগছে মনে হয়।
হবো নি, আজ কি দিন জানো না?
পরাণকাকার জন্মদিন?
হ' আর কিছু জানো না বুঝি?
আর কি?
তবে পরাণকাকার বাড়ি যাও।
চল ইকবাল, যাই পরাণকাকার বাড়ি।
তিনজন মসজিদের পাশের বাগান থেকে কিছু ফুল তোলে। সাইদা দৌড়ে পুকুরে নেমে কয়েকটা শাপলা ফুল তুলে নেয়।ঝিলের মাঠ পার হয়ে ওপারে গেলে হিন্দু পাড়া। মাঝামাঝি পরাণকাকার খড়ের চালের ঘর। পুকুরপাড় ছাড়িয়ে একটু এগোতেই সজলের সাথে দেখা।
এই ইকবাল, আজ আসিস। সন্ধ্যেবেলা গাজন গান হবে ঠাকুরতলার মাঠে। আমরা সবাই থাকবো।
হঠাৎ গাজন গান কেন রে?
তোরা সবাই কোথায় যাচ্ছিস?
পরাণকাকার বাড়ি।
ও, যা, তোদের পাড়ার মুরুব্বিরা তো এসেছে।
তাই নাকি !
চল চল, দেখি কি হচ্ছে।
ইকবাল, জাফর, সাইদা জোরে পা চালিয়ে এগোতে থাকে।পাড়ার ভেতরের মাঠে তখন কয়েকটা দোকান আর কিছু মানুষের ভিড়। পাপড় ভাজার গন্ধও আসছে একটু।
ওই দেখ, মেয়েমদ্দ সবাই কেমন সেজে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে - সাইদা চিৎকার করে ওঠে।
এই ইকবাল, এদিকে আয়।
আরে, পরাণকাকা, চল চল।
দাঁড়া সবাই লাইনে - পরাণকাকার হুকুম।
তোদের খেয়াল নেই আজ পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ? চল সারা গ্রাম প্রদক্ষিণ করব সবাই।
এই সাইদা, মঙ্গল কলসটা তুই নে। জাফর, তুই আমপাতা দিয়ে জল ছড়াতে ছড়াতে চল। ওই মেয়েরা, তোমরা শাঁখ বাজাও, উলু দাও।
আমরা তাহলে গান করতে পারি তো পরাণকাকা?
হ্যাঁ নিশ্চয়।
সবাই শুরু করো -
এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার…….
- বিধানেন্দু পুরকাইত, কোলকাতা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১৫ এপ্রিল ২০২৩