দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তথা প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। ফলে নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন রানঅফে তথা দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ।
ইকুয়েডরে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিওকে গুপ্তহত্যার পর বিষাদের ছায়ার মধ্যে গত রোববার (২০ আগস্ট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত অনুষ্ঠিত হয়। আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, সোমবার (২১ আগস্ট) পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী লুইসা গঞ্জালেস পেয়েছেন ৩৩ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ড্যানিয়েল নোবোয়া পেয়েছেন ২৪ শতাংশ।
নির্বাচনের মাত্র ১২ দিন আগে গত ৮ আগস্ট বিরোধী দলের প্রার্থী ৫৯ বছর বয়সী সাংবাদিক ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাজধানী কিটোর উত্তরে একটি স্কুলে রাজনৈতিক সমাবেশ বক্তব্য দেয়ার সময় তাকে গুলি করা হয়। তার মৃত্যুর পর তার জায়গায় প্রার্থী হন সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান জুরিতা। তবে নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি।
ইকুয়েডরের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ সমর্থন পাওয়া দুই প্রার্থী পরবর্তী দফার নির্বাচনে লড়বেন। ফলে অক্টোবরের রানঅফ ভোট হবে এগিয়ে থাকা দুই প্রার্থী লুইসা গঞ্জালেস ও ড্যানিয়েল নোবোয়ার মধ্যে।
ভোটগ্রহণের বিষয়ে ন্যাশনাল ইলেকটোরাল কাউন্সিল অব ইকুয়েডর (সিএনই) জানায়, প্রথম দফার ভোটে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন লুইসা গঞ্জালেস। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ড্যানিয়েল নোবোয়া। তবে কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ সমর্থন পাননি। তাই নিয়ম মেনে আগামী ১৫ অক্টোবরে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে।
লুইসা গঞ্জালেস ইকুয়েডরের সাবেক বামপন্থী প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেরার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কোরেরা সরকারের পর্যটন ও শ্রমমন্ত্রী ছিলেন লুইসা। ২০২০ সালে দেশটির একটি আদালত দুর্নীতির অভিযোগে কোরেরাকে আট বছরের সাজা দিয়েছিলেন। তার আগে থেকে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে রয়েছেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিদেশে অবস্থান করে এবারের নির্বাচনে লুইসা গঞ্জালেসকে সমর্থন দিয়েছেন তিনি। সাজাপ্রাপ্ত ও বিদেশে অবস্থান করলেও ইকুয়েডরের রাজনীতিতে এখনও কোরেরার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে লুইসা গঞ্জালেস সাধারণ মানুষের কল্যাণে সরকারের বরাদ্দ ও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের পরিধি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে দারিদ্র ও বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা সংকটের মূলে গিয়ে তা প্রতিরোধ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। লুইসা গঞ্জালেস ইকুয়েডরের বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার আনার পক্ষে। এসব প্রতিশ্রুতি ভোটারদের অনেককেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছেন।
অন্যদিকে ৩৫ বছর বয়সী ড্যানিয়েল নোবোয়া পেশায় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও সাবেক আইনপ্রনেতা। ইকুয়েডরের প্রতিষ্ঠিত কলা ব্যবসায়ী ইভারো নোবোয়ার পুত্র তিনি। তার মধ্যপন্থী অ্যাসিওন ডেমোক্র্যাটিকা ন্যাসিওনাল পার্টি তরুণদের জন্য আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া এবং কর ফাঁকি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থার নেয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আরশিকথা দেশ-বিদেশ
ছবি ও তথ্যঃ সংগৃহীত
২৩ আগস্ট ২০২৩