ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা শহরকে আরও পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর করে তোলার লক্ষ্যে পৌর কর্পোরেশন এক নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সরকারের স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে, শহরজুড়ে 'নো স্পিটিং' অর্থাৎ 'এখানে থুতু ফেলবেন না' শীর্ষক একটি সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান শুরু হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে ও জনবহুল স্থানে এই বার্তা সম্বলিত ব্যানার লাগানো হয়েছে। এছাড়াও, শহর অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার যেমন ধলেশ্বর বাজার, লেকচৌমনি বাজার, জিবি বাজার এবং গোল বাজারসহ অন্যান্য বাজারগুলিতেও 'নো স্পিটিং' সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে, যা এই উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
' স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ ', যা মূলত ভারতের শহরগুলির পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার একটি বার্ষিক মূল্যায়ন, যা শহরগুলিকে নিজেদের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উন্নত পরিষেবা প্রদানে উৎসাহিত করে। এই সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল শহরগুলির পরিচ্ছন্নতার মান বৃদ্ধি করা এবং নাগরিকদের জন্য একটি উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা।
আগরতলা পৌর কর্পোরেশনের এই উদ্যোগ স্বচ্ছ সর্বেক্ষণের উদ্দেশ্যের সঙ্গতিপূর্ণ। শহরের বিভিন্ন স্থানে থুতু ফেলা একটি সাধারণ দৃশ্য, যা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়াতেও সহায়ক। এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পৌর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা বোধ জাগাতে এবং শহরকে আরও জীবাণুমুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর।
রাস্তার চৌমাথায় ব্যানার লাগানোর পাশাপাশি বাজারগুলিতে নো স্পিটিং সাইনবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে, পৌর কর্পোরেশন আশা করছে যে এই প্রচার অভিযানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ থুতু ফেলার খারাপ অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হবেন এবং সার্বজনীন স্থানে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সহযোগিতা করবেন। এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলি সম্মিলিতভাবে আগরতলাকে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য শহরে পরিণত করতে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের স্বচ্ছ সর্বেক্ষণে বন্দর শহর সুরাট শীর্ষ সম্মাননা অর্জন করেছে, ইন্দোরের পাশাপাশি, যারা টানা ৬ বছর ধরে শীর্ষ স্থান অর্জন করলো। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর টানা চতুর্থবারের মতো ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহরের মর্যাদা লাভ করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক (MoHUA) স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ পুরস্কারগুলি প্রদান করেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপে আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয় (MoHUA) আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বচ্ছ সার্ভেক্ষণ পুরষ্কার ২০২৩ প্রদান করেন। পরিচ্ছন্ন শহর, পরিচ্ছন্ন সেনানিবাস, সাফাই মিত্র সুরক্ষা, গঙ্গা শহর এবং সেরা পারফর্মিং রাজ্য বিভাগে ১৩ জন পুরষ্কারপ্রাপ্তকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এই বছর পরিচ্ছন্ন শহরের পুরষ্কার যৌথভাবে বিজয়ীদের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বন্দর শহর সুরাট শীর্ষ সম্মাননা অর্জন করেছে, ইন্দোরের পাশাপাশি, যারা টানা ৬ বছর ধরে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। ১ লক্ষের কম জনসংখ্যার শহর বিভাগে, সাসওয়াদ, পাটন এবং লোনাভালা শীর্ষ তিনটি স্থান অর্জন করেছে। মধ্যপ্রদেশের 'মহো ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড' কে সবচেয়ে পরিষ্কার সেনানিবাস বোর্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিচ্ছন্ন গঙ্গা শহরগুলির মধ্যে বারাণসী এবং প্রয়াগরাজ শীর্ষ দুটি পুরস্কার জিতেছে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় সেরা পারফর্মিং রাজ্যের জন্য শীর্ষ তিনটি পুরস্কার জিতেছে। চণ্ডীগড় সেরা সাফাইমিত্র সুরক্ষিত শহর পুরষ্কার পেয়েছে। সেদিনের ঐ অনুষ্ঠানে মোট ১১০টি পরিচ্ছন্নতা সূচক পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এই উদাহরণগুলি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আগরতলাও পরিচ্ছন্নতার নিরিখে নিজেদের স্থান উন্নত করতে পারে।
আগরতলা পৌর কর্পোরেশনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন দেখার বিষয়, শহরবাসী এই সচেতনতামূলক বার্তাকে কতটা গুরুত্ব দেন এবং শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার অভিযানে কতটা সহযোগিতা করেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আগরতলাকে 'স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ' এর মানচিত্রে একটি উজ্জ্বল স্থান এনে দিতে পারে।
আরশিকথা হাইলাইটস
২৭শে এপ্রিল ২০২৫